সপ্তাহখানেক আগে পঞ্জিকায় পৌষের অবধারিত উপস্থিতি স্বীকৃত হলেও শীত শীত লাগার অনুভূতি হেমন্তের মধ্যভাগ থেকে শুরু হয়েছিল৷
সাইবেরিয়ান বায়ু প্রবাহ যতই এদেশ অভিমুখী হচ্ছে ততই ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা বাড়ছে৷ রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে অবশ্য শীতের আগমন জানান দিতে প্রকৃতি যথেষ্ট কৃপণতাই করে থাকে৷ সে অভাববোধ পূরণ করে গণমাধ্যমগুলো৷ বিজ্ঞাপনী মোড়কে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পিঠা উৎসব, কংক্রিটের দেয়ালের মধ্যে পৌষ ও মকর সংক্রান্তি উৎসবের কাভারেজ, বহুমুখী উদ্ভট ফ্যাশনের নানা ব্র্যান্ডের শীতবস্ত্র কেনার বাহারি আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয় রবিঠাকুরের আহ্বান কথা, ‘শীত এসেছে লাগলো কাঁপন, লাগলো দোলা প্রাণে/শীত এসেছে হিমেল হাওয়া, আনন্দ আর গানে৷' তবে ‘মৌসুমী স্ট্যান্ডিং ম্যাটারে‘র মত এই কাঁপনে দেশের উত্তরাঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগের কথা গণমাধ্যমগুলো আমাদের ফি বছর জানিয়ে দিতে ভুলে না৷ শীতকে ঘিরে গণমাধ্যমের এসব আয়োজন যতটা না আত্মিক তার চেয়ে ঢের বেশি আর্থিক৷ মানুষের দুর্ভোগের উপস্থাপনায় যতটা 'গণ'-এর উপস্থিতি থাকে, তার চেয়ে শীত উৎসবের পরিবেশনায় অনেক বেশি থাকে ‘বাণিজ্যিক' স্বার্থ৷ ঋতুকেন্দ্রিক বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলোর নতুনমাত্রায় গণমাধ্যমীকরণ হচ্ছে, শীত উৎসব আর মানুষের দুর্ভোগ হয়ে যাচ্ছে জনসংযোগের অনুঘটক। ‘বদলে যাও, বদলে দাও' স্লোগোনের ধারায় সংস্কৃতির গণমাধ্যমীকরণে শুধু শীতের উৎসব সংস্কৃতিই নয়, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের সংস্কৃতির অকৃত্রিম বৈশিষ্ট্যগুলোকে অনেক বেশি কর্পোরেট রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে গণমাধ্যমগুলো।
বাঙালি সংস্কৃতি ও জীবনাচরণে শীতের দু'ধরনের প্রভাব আমরা দেখতে পাই৷ একটি হলো এ ঋতুকে ঘিরে উৎসবের আমেজ৷ আরেকটি হলো বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ ঋতুতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যায়৷ ফলে শীতের তীব্রতা বাড়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন ছিন্নমূল ও খেটেখাওয়া মানুষ৷ যাপিত জীবনের অংশ হিসেবে এই দুটির দিকের চিত্রায়ন গণমাধ্যমে আমরা দেখি৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো – সেই চিত্র কতটা লৌকিক ও স্বাভাবিক আর কতটা আরোপিত, নিয়ন্ত্রিত ও স্বার্থসিদ্ধ?
বাংলার লৌকিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে শীতের সাথে উৎসবের একটা গভীর সম্পর্ক আছে৷ 'এসো পৌষ বস পৌষ খাও পিঠে পুলি, বউডি ঝিউডি পায় যেন সোনার শাঁখা রুলি' – টুসু গানের এই কলি কিংবা রবীন্দ্রনাথের ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আয় আয় আয়' – নিমন্ত্রণে উৎসবের আমেজ খুঁজে পায়৷ এই উৎসব যূথবদ্ধ জীবনের আয়োজন নিয়ে আসে৷ জীবনাচরণের এই আয়োজন ব্যষ্টিক থেকে সামষ্টিক – সবক্ষেত্রেই দেখা যায়৷ বিশেষ করে গ্রামীণ জীবনে শীতের সকালে মানুষের দলবদ্ধ উদযাপন যেমন বাঙালির চিরায়ত সামাজিক জীবনের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে তেমনি নানা ধরনের পিঠাপুলি, মেলা ও গানের উৎসব এই ঋতুর আমেজকে অনেক বেশি বাঙালিয়নার আবেশ দেয়৷
শীতে পিঠা উৎসব বাঙালির লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতির একটি অকৃত্রিম বৈশিষ্ট্য৷ কবি বেগম সুফিয়া কামাল তো পিঠা খাওয়ার সাথে মায়ের বকুনি খাওয়াকে উপরি পাওনা মনে করতেন – 'পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশিতে বিষম খেয়ে, আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে'৷ কৃত্তিবাসী রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, চৈতন্য চরিতামৃত, মৈমনসিংহ গীতিকায় পিঠা পার্বনের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ সে হিসেবে কমপক্ষে ৫০০ বছর ধরে বাঙালির শীত আয়োজনে পিঠাপুলি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে আছে৷ মূলধারার গণমাধ্যমে আমরা পিঠা উৎসবের খবর পাই৷ তবে সেগুলো শহুরে আর বড় বড় রেসুরেন্ট ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎসবের খবর৷ নারকেল কোরা আর খেজুর গুড়ের অনবদ্য রসায়ন ছাড়া বাঙালির পৌষ সংক্রান্তি যেখানে ঐতিহাসিকভাবে জমে না সেখানে শহুরে কর্পোরেট পিঠা উৎসবে প্যানকেকের আয়োজনই থাকে বেশি৷ কিম্ভুতকিমাকার নকশায় শীতকালীন পিঠার নানা আয়োজনের শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি পত্রিকাগুলোর সাপ্তাহিক বিশেষ আয়োজনে৷ অথচ বাঙালির পৌষ ও মকর সংক্রান্তির পিঠা হলো দুধকুলি, ক্ষীরকুলি, তিলকুলি, চিতই পিঠা, দুধচিতই, ফুলঝুরি, ধুপি, নকশি, মালাই, পাকন, লকসি, মালপোয়া, গোকুল, সিদ্ধ পুলি— এমন নানা ধরনের পিঠা৷ শহরের বেশিরভাগ মানুষ বিশেষ করে তরুণ সমাজ এসব পিঠার বেশিরভাগেরই নামই জীবনে শুনেইনি৷ তরুণ সমাজের কাছে আবহমান কাল ধরে চলে বহমান একটি দেশীয় সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিক অজ্ঞাত থাকার এ দায় সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর৷ পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমেরও এ দায় কোনো অংশে কম নয়৷ কারণ তথ্য জানানো, শিক্ষিত করা ও বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমের একটি গুরু দায়িত্ব হলো নিজ দেশের সংস্কৃতির বিশেষ দিকগুলো এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরা, বয়ে নিয়ে যাওয়া৷ আর তা করতে হয় অবিকৃতভাবে; আরোপিত ও খণ্ডিতভাবে নয়৷ কিন্তু আমাদের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো যে প্রক্রিয়ায় নব্বইয়ের দশকের পর থেকে সংস্কৃতির গণমাধ্যমীকরণ করে আসছে তাতে একটি বিষয় পরিষ্কার, সেটি হলো সংস্কৃতির ঐতিহ্যগত দিকগুলোর বাণিজ্যিকীকরণটাকে তারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ বিজ্ঞাপনদাতাদের মর্জিমত ভোক্তা শ্রেণি তৈরিতে তরুণ সমাজকে প্রলুব্ধ করে আসছে৷ সংস্কৃতির যেসব ঐতিহ্যের আচার উদযাপনের সাথে অর্থের গন্ধ নেই সেগুলো নিয়ে আমাদের গণমাধ্যমের আগ্রহের লেশমাত্র নেই৷ যেমন শীতের রাতে গ্রামবাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হলো নানা ধরনের পালা গানের উৎসব৷ কবিগান, মুর্শিদিগান, জারিপালা, মাইজভাণ্ডারি গান, যাত্রাপালাসহ নানা আয়োজন থাকে গ্রামগঞ্জে৷ পল্লী জীবনের এসব আনন্দ উপলক্ষ আমাদের শহরমুখী গণমাধ্যমে একেবারেই অনাহূত৷ যাত্রাপালার মতো একটি প্রাচীন লোকসংস্কৃতির ক্ষুয়িষ্ণু চিত্র নিয়ে গণমাধ্যমের কোনো হা-পিত্যেশ আপনি কখনই দেখবেন না৷ যদি কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যাত্রাপালার আয়োজন করে তবেই কেবল সেসব অনুষ্ঠানে শ'য়ে শ'য়ে ক্যামেরা ছুটে যেতে দেখা যায়৷
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা খুব বেশি থকে৷ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের দুর্ভোগ যেমন বেশি তেমনি শীতজনিত নানা রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবও এখানে বেশি৷ ফি বছর শীতের শুরুতে কিংবা শীতের প্রকোপ বাড়লে আমরা এ নিয়ে গণমাধ্যমে কিছু খবর দেখতে পাই৷ তবে এসব সংবাদের বেশিরভাগই শিরোনামসর্বস্ব৷ এগুলোকে একেবারেই মৌসুমী স্ট্যান্ডিং ম্যাটার মনে হতে পাারে৷ 'সারাদেশে ঝেঁকে বসেছে শীত, জনদুর্ভোগ চরমে' এমন শিরোনামের খবর প্রায় সব পত্রিকা, টিভি ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে দেখা যায়৷ কিন্তু এসব খবরের ৯৯ শতাংশেই কি ধরনের দুর্ভোগ, এসব দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় প্রশাসন দায়িত্ব পালনে কতটা সচেষ্ট তা নিয়ে কোনো অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ খুঁজে পাওয়া যায় না৷ যেমন এ বছর শীতের শুরুতে একটি গণমাধ্যমের খবর ছিল ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপ বাড়ায় শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে৷ ২৫০ শয্যার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছিল ৪০০ জন৷ কিন্তু রিপোর্টটিতে হাসপাতালে রোগীদের যে দুর্ভোগ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা নিরসনে কি করছে তা নিয়ে একটি বাক্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ জনদুর্ভোগের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের এই নির্লিপ্ততা নতুন কিছু নয়৷ এটি বিশ্বের অনেক দেশেই হয়ে থাকে৷ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে জেনেভায় কেয়ারের 'দুর্ভোগে নীরবতা' শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১০টি জনদুর্ভোগের কথা তুলে ধরা হয়েছিল৷ এসব ঘটনায় দেশগুলোর ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন অনেক দূরে ছিল রাজধানীর বড় বড় হোটেলে পিঠা উৎসব নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করলেও হোটেলের পেছনে থাকা বস্তি মানুষগুলোর দুর্দশার চিত্র নিয়ে গণমাধ্যম নীরবই থাকে। কোন কোন হোটেলে কোন কোন পিঠা কিনতে পাওয়া যায় তা নিয়ে পত্রিকাগুলো ফিচার প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে৷ কিন্তু বায়ুদূষণে রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়া ঢাকা শহরে ফুটপাতে বেচা পিঠাগুলো কতটা জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে তা নিয়ে গণমাধ্যমের মাথাব্যাথা হয় না৷ যে কোনো জনদুর্ভোগের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া৷ একই ধরনের মানবিক সংকট বছরের পর বছর ঘটতে থাকার অর্থ হলো সংকট নিরসনে পদ্ধতিগত ব্যর্থতাগুলোর ভূমিকা আছে৷ সাংবাদিকদের এসব ব্যর্থতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে হয় এবং ভবিষ্যতে এসব কারণ যেন আর অনুঘটক হিসেবে কাজ না করে তা নজরে আনতে হয়৷
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো মূলতঃ শহরকেন্দ্রিক৷ গ্রামাঞ্চলে এদের পাঠক-দর্শক কম৷ এই কম হওয়ার মূল কারণ আর্থিক৷ গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম হওয়ায় পণ্যের বিজ্ঞাপনদাতাদের গ্রামীণ জনপদ নিয়ে আগ্রহ থাকে না৷ এ কারণে গণমাধ্যমগুলোও গ্রামীণ জনপদ নিয়ে বিচলিত হয় না৷ শীতে বীজতলা লালচে হয়ে যাওয়ায় অনেক মৌসুমেই কৃষকের ক্ষতি হয়৷ কিন্তু এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর হয় না বললেই চলে৷ বিজ্ঞাপনের বাজারটা ঢাকার বাইরে বড় না হওয়ায় গ্রামীণ সংস্কৃতির শহুরে রূপ তৈরিতে গণমাধ্যম চেষ্টা করে৷ গণমাধ্যমের যে কোনো উপস্থাপনা বা পরিবেশনা নানাভাবে ফিল্টার হয়৷ এক্ষেত্রে মিডিয়ার কিছু লজিক অনুঘটক হিসেবে কাজ করে৷ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে আদর্শিক অবস্থান ও সামাজিক দায়বদ্ধতার চেয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার লজিক অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে৷ এখানে গণমাধ্যমের কাছে সংস্কৃতি নিছক একটি পণ্য ছাড়া আর কিছু নয়৷ সংস্কৃতির যে অংশটুকু যেভাবে বেচলে বিজ্ঞাপন আসবে সেভাবেই তারা উপস্থাপন করে৷
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে এজেন্ডা নির্ধারণ করে এবং ক্রমাগত তা প্রচার করার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যম জনমনে গভীর ও সূক্ষ্ম উপনিবেশ তৈরি করতে পারে৷ অর্থাৎ গণমাধ্যম প্রথমে মানুষের অভ্যাস তৈরি করে দেয় এবং পরে মানুষ সে অভ্যাসের দাসে পরিণত হয়৷ সংস্কৃতির আরোপিত ও খণ্ডিত রূপকে বারংবার চিত্রায়িত করার মধ্য দিয়ে আমাদের গণমাধ্যমগুলো সংস্কৃতি নয় পণ্যের ভোক্তা শ্রেণি তৈরি করছে৷ আবার সংস্কতির প্রাচীন ও মূল অনুষঙ্গগুলো হারিয়ে যেতে দেখেও গণমাধ্যমগুলোর চুপ থাকার প্রবণতা বাড়ছে৷ ফলে গ্রামের প্রান্তিক মানুষ আরো প্রান্তিক হয়ে পড়ছে৷ শীতের উৎসব আর দুর্ভোগ নিয়ে বাঙালিদের আয়োজনের টুকটাকি সংবাদ চোখে পড়লেও সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীদের নিয়ে কোনো খবর আমরা দেখি না৷ ফলে একই দেশের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও অধিকতর প্রান্তিক মানুষগুলো এবং তাদের সংস্কৃতির আচারগুলো নিয়ে গণমাধ্যমের অতিমাত্রায় নীরবতায় তারা আরো বেশি প্রান্তিক হয়ে পড়ছে৷ গণমাধ্যমের নীরবতার কুণ্ডলীতে এভাবেই ধীরে ধীরে প্রান্তিকতার মাত্রা আরো বাড়ছে৷
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো কোনোভাবেই সংস্কৃতির দর্পন নয়৷ শুধু শীতের উৎসব নয়, বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখের ক্ষেত্রেও আমাদের গণমাধ্যমগুলো সংস্কৃতির আদি বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কর্পোরেট স্বার্থকে প্রাধান্য নিয়ে নিজেদের এজেন্ডা পাঠক-দর্শকের সামনে উপস্থাপন করতে দেখি৷ তারা মূলধারার সংস্কৃতির সেটুকু তারা উপস্থাপন করে যে অংশের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টতা আছে৷ এর চেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো, সংস্কৃতির অনুষঙ্গগুলোর সাথে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টতার মাত্রা বাড়ানোর জন্য গণমাধ্যম সংস্কৃতিকে কর্পোরেট স্বার্থের সাথে সঙ্গতি রেখে তৈরি করছে৷ গণমাধ্যমের এই আরোপিত বার্তা মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনে প্রভাব বিস্তার করছে৷ সংস্কৃতির আদি ও অকৃত্রিম অংশগুলোকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন করে নতুন নতুন প্রবণতা ও ধরন যুক্ত করে দিচ্ছে৷ এর ফলে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সৃষ্টিশীলতা ও বহুমুখিতা নষ্ট হচ্ছে৷ শীতে ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির জন্য' কবি সুকান্ত সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছিলেন৷ আমরাও বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলোর কর্পোরেটিকরণ থেকে মুক্তির জন্য গণমাধ্যমের সাহায্য চাইতে পারি৷