শীতেও পানির তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে চলে জীবজগৎ
৮ ডিসেম্বর ২০২০শীতকালে পানি গাছপালার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে৷ ‘ডেন্সিটি অ্যানোমালি’ নামের একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য এমনটা হতে পারে৷ বেশিরভাগ পদার্থের মতো শীতল হলে পানির ভরও কমে যায়৷ তবে সেই পার্থক্যের সর্বোচ্চ মাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে৷ তাপমাত্রা আরো কমে গেলে পানি আবার সম্প্রসারিত হয়৷ জমে গেলে পানির ভর প্রায় নয় শতাংশ বেড়ে যায়৷
অণুগুলি স্ফটিকের কাঠামো ধারণ করে বলে এমনটা ঘটে৷ তরল পানির তুলনায় সেটির আরও জায়গার প্রয়োজন হয়৷ সেই অবস্থার মোকাবিলা করতে গাছপালা একটি কৌশল কাজে লাগায়৷ পানির দ্রবীভূত হবার ক্ষমতা কাজে লাগাতে কোষে শর্করা জমা করা হয়৷ ভাসমান শর্করার অণুগুলি বরফের স্ফটিক তৈরি হতে দেয় না৷ ফলে হিমাঙ্কের মাত্রা পাঁচ থেকে ছয় ডিগ্রি কমে যায়৷
গ্লাসে ভরা সাধারণ পানি ডিপ ফ্রিজে রাখলে প্রায় এক ঘণ্টা পর জমে যায়৷ অথচ শর্করার দ্রবণ আরও বেশি সময় ধরে তরল থাকে৷ পানির নীচে বরফ থেকে বাঁচতে অন্যান্য গাছপালা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে৷ এ ক্ষেত্রে ওয়াটার সোলজার্স নামের উদ্ভিদ সত্যি ওস্তাদ হয়ে উঠেছে৷ গাছ পানির আরেকটি বৈশিষ্ট্য কাজে লাগায়৷ মনে রাখতে হবে, গভীর পানির নীচে কখনো বরফ তৈরি হয় না৷ হামবুর্গ বোট্যানিকাল গার্ডেনের বিজ্ঞানী কার্স্টেন শিরারেন্ড বলেন, ‘‘ওয়াটার সোলজার্স নামের পানির নীচের এই উদ্ভিদ বিশেষ এক কৌশল কাজে লাগায়৷ এই প্রজাতি গ্রীষ্মে সাধারণ পানির উপর ভাসমান উদ্ভিদের মতো আচরণ করে৷ তাতে পাতা ও ফল ধরে৷ হেমন্তকালে শীত বাড়লে সেই গাছের পাতা পানির এত গভীরে নেমে যায়, যেখানে সাধারণত বরফ জমতে পারে না৷ উপরের পানির ওজন অণুগুলির উপর এমন চাপ সৃষ্টি করে, যে সব সময়ে প্রায় চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় থাকে৷
রুই জাতীয় মাছও পানির বরফহীন অংশে আশ্রয় খোঁজে৷ সেই মাছের শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পানি হওয়ায় বরফ থেকে সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি৷ বসন্তকালে সব উদ্ভিদ ও প্রাণী আবার পানির উপরের স্তরে ফিরে যেতে চায়৷
মানুষের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ উপাদানও পানি৷ তবে মাছের মতো শীতল রক্তের প্রাণীর সঙ্গে আমাদের তফাত হলো, আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত রাখতে হয়৷ গ্রীষ্মে ঘাম ঝরিয়ে অথবা পার্কে হেঁটে সেই ব্যবস্থা করতে হয়৷ সেখানে সাধারণত অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও মনোরম পরিবেশ থাকে৷
বিয়র্ন প্লাৎস/এসবি