হাবিবি সেন্টার
৪ জুন ২০১২১৯৩৬ সালের ২৫শে জুন সুলাওয়েসির পারেপারে জন্মগ্রহণ করেন বাচারুদ্দিন ইউসুফ হাবিবি৷ ১৯৯৮ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৫৪ সালে তিনি বৃত্তি নিয়ে জার্মানির আখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন প্রকৌশলী বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য৷ তিনি ডিগ্রি কোর্স শেষ করার পর ১৯৬৫ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন৷ এরপর ১৯৭৪ সালে তিনি ফিরে যান ইন্দোনেশিয়ায়৷ ১৯৭৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সুহার্তো তাঁকে গবেষণা এবং প্রযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রী করেন৷ প্রেসিডেন্ট সুহার্তো ক্ষমতা ছাড়ার পর ১৯৯৮ সালের মে মাসে হাবিবি এক বছরের জন্য ইন্দোনেশিয়ার তৃতীয় প্রেসিডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত হন৷ তবে তা মাত্র এক বছরের জন্য৷ এর পরের বছরেই তিনি তার স্ত্রী এবং পুত্রদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন হাবিবি সেন্টার৷
ইন্দোনেশিয়া একসময় উপনিবেশ ছিল৷ তারপর স্বৈরতন্ত্রের কবলে ছিল অনেক দিন৷ বৈষম্য ছিল নিত্যদিনের ঘটনা৷ কিন্তু এরপরও ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে ইন্দোনেশিয়া৷ এ প্রসঙ্গে ইউসুফ হাবিবি জানান, ইন্দোনেশিয়ায় ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস৷ দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ৷ তাই এই দেশটিতে বেশ কয়েকবার হানা দিয়েছে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি৷ আর এসব আঘাতের কারণেই মানুষরা সবসময়ই এক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে৷ এক জাতি, এক কণ্ঠ, এক গোষ্ঠী, এক ভাষা – এই প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়ার মানুষ স্বাধীনতার দাবিতে৷ যদিও বার বার আঘাত এসেছে, তারপরেও কয়েক'শো বছর সময় লেগেছে গণতন্ত্রের ছোঁয়া পেতে৷
গণতন্ত্র চর্চায় হাবিবি সেন্টার
জাকার্তার হাবিবি সেন্টারের গণতন্ত্রের জন্য মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা হয়৷ রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানো হয় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে৷ শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ খেলার ছলে সব কিছু বোঝানো হয়, শেখানো হয়৷ আর ঠিক এই খানেই শিক্ষার সঙ্গে গণতন্ত্রকে জুড়ে দিয়েছেন ইউসুফ হাবিবি৷
তিনি জানান, বিশ্বায়নের এই যুগে উৎপাদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ একটি সমাজ কী উৎপাদন করলো তা সবাই জানতে চায়, দেখতে চায়৷ আর ইতিবাচক উৎপাদন সবসময়ই একটি দেশের, একটি জাতির, সেই দেশের মানুষের মানসিকতা, সৃজনশীলতা, সংস্কৃতি, ধর্মের সুষম সমন্বয়কে উপস্থাপন করে৷ এর পাশাপাশি রয়েছে প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান৷ প্রথাগত শিক্ষা এবং পারিবারিক শিক্ষার প্রতিফলন হচ্ছে সুষম সমন্বয়৷ তবে এসব অর্জনের জন্য চাই স্বাধীনভাবে চিন্তা করা সুযোগ এবং ক্ষমতা৷ আর ঠিক এ কারণেই মানবাধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পালন করে৷ মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের কারণেই বাক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক দল গঠনের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা – এসব নিশ্চিত করতে হবে৷ আর তা করতেই ইউসুফ হাবিবি প্রতিষ্ঠা করেছেন হাবিবি সেন্টার৷
শিক্ষার জন্য প্রবল তৃষ্ণা
গণতন্ত্রের দাবিতে শিক্ষা বা গণতন্ত্রের প্রয়োজনে শিক্ষা – বিশ্বায়নের এই যুগে তা কতটা প্রয়োজনীয়? এ প্রশ্নের উত্তরে ইউসুফ হাবিবি বলেন, প্রযুক্তির কারণে শিক্ষা আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ হয়েছে৷ অনেক দ্রুত মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরণের তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে৷ এখন জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস – এগুলোর চেয়ে ন্যায়-বিচার, উন্নয়ন এবং অগ্রগতির দিকে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে৷ আমাদের চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে, না এলেও পরিবর্তন আনতে হবে৷ মানুষের আচার-আচরণেও পরিবর্তন এসেছে৷ ইন্টারনেট, গ্লোবাল টেলিভিশন প্রোগ্রামিং – এসব প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলছে৷ এছাড়া সুশিক্ষা এবং উন্নতমানের শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার আলোকিত পথ দেখায়৷ এর পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত প্রচার মাধ্যমও একটি জাতিকে, একটি সমাজকে তথ্যে সমৃদ্ধ করতে পারে৷ প্রচার মাধ্যমগুলো যদি দয়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে, তাহলে তারাও হয়ে উঠতে পারে শিক্ষা ব্যবস্থার আরেকটি অংশ৷
২০০৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয় আইনে বলা হয়েছে, যে দেশের জাতীয় বাজেটের শতকরা ২০ শতাংশ শিক্ষার পেছনে ব্যয় করতে হবে৷ ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত তা পূর্ণ করা সম্ভব হয়েছে৷ শতকরা ৯০ শতাংশ শিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে৷ এর পেছনে কাজ করেছে সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং শিক্ষার জন্য প্রবল তৃষ্ণা৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন