শিক্ষাই শক্তি
৮ মে ২০১২শিক্ষাই সব শক্তির মূল – এই প্রবাদ বাক্যটি চারশো বছরের পুরনো৷ ইংরেজ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন কথাটি বলেছিলেন এবং তিনি তার যথার্থ ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন৷ শত শত বছর পরেও কথাটি তার মূল্য হারায়নি৷ শিক্ষাই শক্তি৷ শিক্ষা হচ্ছে যে কোন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের মূল চালিকা শক্তি৷ গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে শিক্ষা কোন ধরণের ভূমিকা পালন করে তা নতুন বলার প্রয়োজন নেই৷ প্রতিদিনই আমরা তার উদাহরণ দেখতে পাচ্ছি৷ বিশেষ করে ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া আরব অভ্যুত্থানের দিকে তাকালে বোঝা যাবে শিক্ষা একজন মানুষের জীবনে, একটি দেশের পট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কী করতে পারে৷ কীভাবে শিক্ষা সংস্কারের দাবিতে, গণতন্ত্রের দাবিতে মানুষকে রাস্তায় নামাতে পারে৷ সবই শুরু হয়েছিল টিউনিশিয়ার জেসমিন রেভোলিউশন'এর মধ্যে দিয়ে৷
যখন পরাজিতরা বিজয়ীর বেশ ধারণ করে: আরব অভ্যুত্থান
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবার, সমাজের দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষেরা এক হয়েছিলেন আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, আন্দোলনে প্রাণ ধরে রাখতে৷ সবচেয়ে বেশি এবং ক্ষিপ্ত গতিতে এগিয়ে এসেছিল তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সবার বয়স ছিল ২০ থেকে ৩৫-এর মধ্যে৷ এদের মধ্যে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক কেউই বাদ ছিল না৷ এদের একের পর এক হুমকি দেয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷ রাবাত থেকে রিয়াধ – সবাই আন্দোলনে শরীক হয়েছিল৷ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক – সবাই একবাক্যে বলেছিল ‘আরো স্বাধীনতা চাই, রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হতে চাই, দেশ শাসনে অংশগ্রহণ করতে চাই, শ্রম বাজারে সমতা চাই – চাই আলোকিত ভবিষ্যৎ৷' সেই আকাঙ্ক্ষা এখনো পূর্ণ হয় নি৷ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই সংগ্রাম চালিত করতে হবে৷
শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম৷ শিক্ষাই মানুষকে সচেতন হতে শেখায়৷ এই খুবই সাধারণ বোধটি অবহেলা করেছিলেন আরব বিশ্বের নেতারা৷ যদি সেখানে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় না থাকতো তাহলে এই আন্দোলনের কথা ভাবাই যেত না৷ গত ২০ বছর ধরে মানুষেরা অপেক্ষা করেছে, নিজেদের তৈরি করেছে৷ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট জানিয়েছে গত ২০ বছরে আরব বিশ্বের দেশগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থেই এগিয়ে গেছে৷ অথচ এসব স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ২০ বছর আগেই৷ এমনকি টিউনিশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বেন আলি নিজেও ছিলেন একজন সংস্কারপন্থী৷ দেশটিতে মানুষেরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে, কিন্তু সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর কোন সুযোগ ছিল না৷ কয়েকটি গোষ্ঠীর হাতে ছিল ক্ষমতা, তারাই নিয়ন্ত্রণ করতো সবকিছু৷ আর ঠিক একারণেই দেশের বেকারত্ব ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ৷
শিক্ষিত হওয়ার অধিকার – মানবাধিকারের একটি অংশ
শিক্ষা ব্যতীত কোন ধরণের অগ্রগতি সম্ভব নয়৷ এই সহজ, সত্য বাক্যটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেক আগেই জেনেছে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে৷ উন্নত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে, রয়েছে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার৷ দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে তারা প্রশ্নও করতে পারে, রয়েছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা৷
জাতিসংঘের মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি হল – বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য অন্ততপক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা৷ অগ্রগতি হচ্ছে, মিলেনিয়ামের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হাতে নেয়া হয়েছে প্রকল্প৷ বিভিন্ন দেশ সে অনুযায়ী কাজও করছে, তবে খুব ধীরে৷ ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সংখ্যা সাত শতাংশ থেকে ৮৯ শতাংশে এসে পৌঁছেছে৷
এশিয়া এবং আফ্রিকাতে ২০১৫ সালের মধ্যে যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিজ্ঞা নেয়া হয়েছিল তা পূরণ করা হয়তো সম্ভব হবে না৷ যে সব দেশ উন্নত সেসব দেশে মাত্র ১০০ জন শিশুর মধ্যে মাত্র ৮৭টি শিশু নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে, এবং তারা স্কুলের পাঠ শেষ করছে৷ দরিদ্র দেশগুলোতে প্রতি দশটি শিশুর মধ্যে চারজন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়৷ গ্রাম এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলোর শিশুদের জন্য শিক্ষা আরো বেশি দুরূহ৷
প্রতিবেদন: উটে শেফার / মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন