শরীর সুস্থ রাখার চাবিকাঠি পেটের ব্যাকটেরিয়া
২৯ জুন ২০২০আলেক্সিস সবে কয়েক ঘণ্টা আগে জন্মেছে৷ সিজেরিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সে ভূমিষ্ঠ হয়েছে৷ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম হলে সে জঠর থেকে বের হবার সময় মায়ের ব্যাকটেরিয়া গিলে ফেলতে পারতো৷ প্রোফেসর ফ্লেমার এবার কৃত্রিম উপায়ে সেই কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাবা-মার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা মায়ের যোনিস্রাব বার করে সন্তানের মুখে আঙুল দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছি৷ এভাবে মায়ের শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়া সন্তানও পেলো৷’’
তবে নবজাতকের কোনো বিপদ এড়াতে একমাত্র সুস্থ মায়ের ক্ষেত্রে এমনটা করা হয়৷ জন্মের সময় মায়ের ব্যাকটেরিয়া সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা জরুরি, একাধিক গবেষণায় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ মায়ের প্রথম দুধও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷
কোনো কারণে জন্মের পর সন্তানকে সেই দুধ খাওয়ানো সম্ভব না হলে হাসপাতালের নিজস্ব ‘মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক’ এগিয়ে আসে৷ মায়ের দুধে ব্যাকটেরিয়ার সঠিক মিশ্রণ শিশুর আন্ত্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷
তারপর জীবনের কোনো এক পর্যায়ে পিৎসা, বার্গার, মিষ্টি ও সফট ড্রিংকসের হাতছানি উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না৷ অতিরিক্ত পরিমাণ ফাস্ট ফুড কি আমাদের আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া, সেইসঙ্গে আমাদের মন-মেজাজের উপরেও প্রভাব ফেলে?
একদল গবেষক এমনটাই মনে করছেন৷ অস্ট্রিয়ার গ্রাৎস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইতাক ফারজি ও আহমেদ হাসান এমন ইঁদুরের আচরণ পরীক্ষা করেছেন, যেগুলিকে অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয়েছে৷ একদল ইঁদুরকে হয় স্বাস্থ্যকর দানা অথবা শুকনো ঘাস খাওয়ানো হয়েছে৷ অন্য দলকে বিশেষ এক ধরনের খোরাক খাওয়ানো হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ক্যালোরির উৎস ফাস্ট ফুডে ব্যবহৃত ফ্যাটের মতো৷
আট সপ্তাহ পর বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন৷ আইতাক ফারজি স্বাস্থ্যকর খোরাক খাওয়া একটি ইঁদুরকে অচেনা এক খাঁচায় বন্দি করেছেন৷ ইঁদুরটি স্বাভাবিক চঞ্চলতা দেখিয়ে নতুন পরিবেশ চেনার চেষ্টা করেছে৷
কিন্তু ফাস্টফুড খাওয়া, মোটাসোটা একটি ইঁদুর বেশি নড়াচড়া করতেই প্রস্তুত নয়৷ এটা ডিপ্রেশন বা অবসাদের লক্ষণ৷ ফাস্টফুড খাওয়া ইঁদুর তেমন মিশুকেও নয়৷ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ইঁদুরের মতো সেটি অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের বদলে নিঃসঙ্গ থাকতে পছন্দ করে৷
ইঁদুরের বিষ্ঠা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যেফাস্টফুড খাওয়া ইঁদুরের আন্ত্রিক ব্যাকটিরিয়ায় বড় পরিবর্তন ঘটেছে৷ সেটাই কি আচরণ পরিবর্তনের কারণ? গ্রাৎস চিকিৎসাবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. আহমেদ হাসান বলেন, ‘‘আন্ত্রিক মাইক্রোবায়োম দমিয়ে রাখতে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক্স ব্যবহার করবো৷ যে সব ইঁদুর অ্যান্টিবায়োটিক্স খাচ্ছে, সেগুলির অবসাদের মতো আচরণ দূর হচ্ছে কিনা, গবেষণায় আমরা সেদিকে খেয়াল রাখবো৷ সে ক্ষেত্রে বোঝা যাবে, যে অবসাদের মতো আচরণের জন্য আন্ত্রিক মাইক্রোবায়োমের প্রয়োজন রয়েছে৷''
এই অনুমান যে ঠিক, তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে৷ ভুল আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া ইঁদুরের মধ্যে অবসাদের মতো আচরণ জাগিয়ে তুলতে পারে৷
ক্যালোরি কমাতে চাইলে চিনিযুক্ত খাবারের চেয়ে প্রাকৃতিক শর্করাযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া উচিত৷ কোন খাদ্যের মধ্যে যে চিনির বিকল্প রয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা তা জানিই না৷ আমাদের ‘গাট ফ্লোরা’-র জন্য এর পরিণাম কী?
ওরেলি বুকিমার ও গিলি ভাইনব্যার্গকে এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক ১২ স্যাচেট স্যাকারিন পান করতে হবে৷ আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া এবং সেই সূত্রে স্বাস্থ্যের উপর সুইটনারের কোনো প্রভাব রয়েছে কিনা, ইসরায়েলের এক গবেষণায় সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
ইসরায়েলের ওয়াইৎম্যান ইনস্টিটিউটে দুই নারীর উপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে৷ ড. ইয়টাম সুয়েজের অনুমান, সুইটনার অবশ্যই আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়ার উপর প্রভাব ফেলে৷ সে কারণে তিনি এই দুই নারীর মল পরীক্ষা করতে চান৷ গবেষণাগারে তিনি নানা ধরনের আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করেছেন৷ পরীক্ষায় সত্যি প্রমাণিত হয়েছে, যে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগ মানুষের ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্য কমে গেছে৷ ড. সুয়েজ বলেন, ‘‘গাট ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে যখন কৃত্রিম শর্করার দেখা হয়, তখন শর্করা সরাসরি গাট ব্যাকটেরিয়ার উপর প্রভাব ফেলে৷ এমনকি কৃত্রিম শর্করা সম্ভবত কিছু ব্যাকটিরিয়া মেরে ফেলে, বা তার মাত্রা কমে যায়৷ কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বেড়ে যায়৷ আমাদের অনুমান, সেগুলি কৃত্রিম শর্করা ব্যবহার করছে৷’’
দুই নারীর মধ্যে একমাত্র আমেলির আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়ায় পরিবর্তন দেখা গেল৷ আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া ঠিক কোন ভূমিকা পালন করে, এখনো তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷
ইয়ুটা হেংকেল/এসবি