শরণার্থী নিয়ন্ত্রণে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন চায় জার্মানি
২১ জুন ২০২১করোনা সংকটের জের ধরে ইউরোপে ভ্রমণের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়েছে৷ ইউরোপের দোরগোড়ায়ও মানুষের আগমন করে গেছে৷ ফলে শরণার্থীদের আগমনও গত বছর থেকে অনেকটা কমে গেছে৷ এবার করোনা সংকট কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় আবার আশ্রয়প্রার্থীদের ঢল নামার আশঙ্কা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এমন প্রেক্ষাপটে তুরস্কের সঙ্গে ইইউ-র চুক্তি নবায়নের ডাক দিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, তুরস্কের বর্তমান সরকারের সঙ্গে যাবতীয় সমস্যা সত্ত্বেও মানতে হবে, যে সে দেশ ইউরোপের শরণার্থী সংকটের একটা বড় ভার সামলে এসেছে৷ অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে এমন বোঝাপড়া সম্ভব হয়েছে৷ ভবিষ্যতেও এমন কাঠামো চালু রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর্থিক সহায়তা দেবে বলে মাস আশা প্রকাশ করেন৷ চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে তুরস্কের সরকার কড়া পদক্ষেপ নেবার কথা৷ তা সত্ত্বেও যে সব শরণার্থী তুরস্কের সীমান্ত পেরিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করছে, তাদেরও ফেরত নিচ্ছে তুরস্ক৷ ফেরত পাঠানো প্রত্যেক ব্যক্তির বিনিময়ে ইইউ তুরস্ক থেকে একজন করে সিরীয় শরণার্থী গ্রহণ করে থাকে৷ তুরস্কে শরণার্থীদের জন্য আর্থিক অনুদানও দেয় ইইউ৷ বিষয়টিকে নিয়ে অনেক রাজনৈতিক চাপানউতর সত্ত্বেও বোঝাপড়ার কাঠামো মোটামুটি অটুট রয়েছে৷
চলতি বছরের গ্রীষ্মে অবৈধ আশ্রয়ণার্থীদের ঢল নিয়ন্ত্রণ করতে গ্রিস জোরালো প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে৷ প্রাচীরে ঘেরা শিবির তৈরি ও সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে গ্রিক সরকার৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গ্রিস৷ তার মতে, গ্রিস, ইটালি, স্পেন, মাল্টা ও সাইপ্রাস শরণার্থী সংকট সামলাতে বাধ্য হলেও ইউরোপের বাকি অংশ থেকে যথেষ্ট সংহতি পাচ্ছে না৷ সে দেশের অভিবাসন মন্ত্রী নোটিস মিতারাচি বলেন, তার সরকার গ্রিসকে শরণার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে চায় না৷ কড়া হলেও সেই নীতি যথেষ্ট ন্যায্য বলে তিনি দাবি করেন৷ উল্লেখ্য, গত বছর লেসবোস দ্বীপে মোরিয়া শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে গ্রিসে শরণার্থীদের করুণ অবস্থা আরও স্পষ্ট হয়ে যায়৷ সে দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী জাতীয় জলসীমা থেকে শরণার্থীদের নৌকা ফেরত পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠলেও গ্রিক সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ শরণার্থী শিবিরগুলিকে প্রায় কারাগারের মতো করে গড়ে তোলার কারণেও গ্রিসের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়ছে৷
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স সংগঠন তুরস্কের কাছে গ্রিসের পাঁচটি দ্বীপে ‘নীতিগতভাবে' মানবিক বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে৷ সেই সংগঠন এই দ্বীপগুলিতে ১,৩০০-রও বেশি মানুষের চিকিৎসা করে ভয়াবহ এক চিত্র তুলে ধরেছে৷ সংগঠনের গ্রিক বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিনা প্সারা বলেন, সর্বশক্তি প্রয়োগ করে শুধু শরণার্থীদের দূরে রাখতে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গ্রিসের সরকার শরণার্থীদের সমাজে সম্পৃক্ত করার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ ফলে তাদের কষ্ট ও বেদনা বাড়ছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)