পোশাকে শরণার্থীদের ‘অসম্মান'
২৬ জানুয়ারি ২০১৬মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাক এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের প্রসঙ্গ ঘুরেফিরেই আসছে আলোচনায়৷ তবে এবারে যে বিষয়টি তাদের আলোচনায় এনেছে তার সঙ্গে জার্মান এবং ইটালিয়ানদের অতীতেরও একটা সম্পর্ক আছে৷ দু'টি দেশেরই আছে বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা৷ দেশ দুটিতে বিশ্বযুদ্ধের প্রজন্মের অনেক মানুষ এখনো সেই সময়ের অভিজ্ঞতার গল্প নতুন প্রজন্মকে শোনান৷ নতুন প্রজন্মের বড় একটা অংশ তাই গত এক-দেড় বছরে ইউরোপে আসা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল৷
অ্যামাজন-এর ‘শরণার্থী পোশাক' দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের এবং বর্তমানের সব শরণার্থী ও তাঁদের উত্তরসূরিদেরও কষ্ট দিয়েছে, অপমান করেছে৷ এমন অনুভূতির কথা অ্যামাজনকে লিখে জানিয়েছেনও অনেকে৷ অবশেষে ‘ভুল' বুঝতে পেরে ওয়েবসাইট থেকে বিতর্কিত পোশাকগুলোর ক্যাটালগ সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন৷
জার্মানিতে ফেব্রুয়ারি মাসে আবার দেখা যাবে জমজমাট কার্নিভাল উৎসব৷ পোশাক কেনার হিড়িক শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷ ওদিকে ইটালিতে গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে ভেনিস কার্নিভাল৷ এই দুই দেশের উৎসবপ্রেমীদের জন্য অভিনব এক পোশাক বাজারে ছেড়েছিল অ্যামাজন৷ বাচ্চাদের পোশাক৷ পোশাকের নাম ‘রিফিউজি কস্টিউম'৷ মডেল ছেলে-মেয়ে দু'টির হাতের স্যুটকেস দুটো দেখেই বোঝা যায়, অ্যামাজন শুধু সাম্প্রতিক সময়ের শরণার্থীদের কথা মাথায় রেখে এ সব পোশাকের ডিজাইন করেনি, ডিজাইন করার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শরণার্থীদের কথাও মনে ছিল৷
জার্মানরাও বিষয়টি লক্ষ্য করেছে৷ তাই জলদস্যু, নভোচারি, রাজকন্যা, সুপারহিরোর মতো অতিচেনা কার্নিভাল পোশাকের সঙ্গে এবার ‘রিফিউজি পোশাক'-ও যোগ হওয়ার বিষয়টিকে তাঁরা মোটেই ভালো চোখে দেখেননি৷
তবে জার্মানি, ইটালি এবং বাইরের অনেকেও অ্যামাজন-এর পোশাকটিকে বুঝে বা না বুঝে ‘লাইক'-ও দিয়েছেন৷ তাঁদের কটাক্ষ করে কয়েকদিন আগে টুইটারে একজন লিখেছিলেন, ‘যুদ্ধকালীন শরণার্থীদের শিশুদের পোশাকের আদলে তৈরি পোশাকগুলো অ্যামাজন-এ এখনো বিক্রি হচ্ছে, বেশ কিছু নির্বোধ আবার এই উদ্যোগকে পাঁচ তারকা দিয়ে সমর্থনও জানাচ্ছে!'
অ্যামাজন অবশেষে ওয়েবসাইট থেকে পোশাকগুলোর ক্যাটালগ সরিয়ে নেয়ায় পাঁচ তারকা দিয়ে তাদের উদ্যোগকে সমর্থন জানানো কিছু মানুষ হয়ত তাঁদের ‘ভুল', ‘নির্বুদ্ধিতা' কিংবা ‘অমানবিকতার' বিষয়টি এখন বুঝতে পারছেন৷
আশীষ চক্রবর্ত্তী
দেবারতি গুহ