শব্দ দূষণ থেকে রক্ষায় ‘কোয়েটপ্রো’ প্রযুক্তি
১৯ নভেম্বর ২০১০মেগাসিটি ঢাকায় বসবাস এবং চলাচল যাদের তাদের কাছে বায়ু দূষণের চাইতে হয়তো বড় সমস্যা মনে হয় শব্দ দূষণকেই৷ এমনকি অনেকেই ভাবেন যে, হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ ঢাকাতেই ঘটে৷ কিন্তু সেটা যে সম্পূর্ণ সঠিক নয় তা বেশ স্পষ্টভাবেই বোঝা যায় গভীর সমুদ্রের মাঝে তেল উত্তোলন ক্ষেত্রগুলোতে গেলেই৷ ইউরোপের সবচেয়ে তেল সমৃদ্ধ দেশ নরওয়ের উত্তর সাগরের বুকে এ ধরণের তেল ক্ষেত্রগুলোতে বিকট শব্দের মাঝে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের শ্রবণ ক্ষমতা খোয়াচ্ছেন শ্রমিকরা৷ এমনকি প্রতিবছর এ ধরণের ঘটনা ঘটছে কমপক্ষে ৬০০ জনের ক্ষেত্রেই৷
নরওয়ের মূল ভূখণ্ড থেকে তেলক্ষেত্রগুলোতে যাওয়া-আসার জন্য একমাত্র বাহন হেলিকপ্টার৷ ফলে তেল উত্তোলন ক্ষেত্রের অন্যান্য শব্দের সাথে হেলিকপ্টারের বিকট শব্দ সেখানকার কর্মীদের নিত্য সঙ্গী৷ উচ্চ শব্দের মধ্যেই দশ বছরের বেশি সময় ধরে উত্তর সাগরে কাজ করছেন স্টেলে আস৷ তিনি বললেন,‘‘ঘূর্ণন যন্ত্রপাতি, জলের তোড়ে ঘুরতে থাকা মোটরের চাকা, কপাটক এবং উত্তোলক যন্ত্রসহ রয়েছে আরো অনেক যন্ত্রপাতির তীব্র শব্দ৷'' আসের বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছে উচ্চমাত্রার শব্দ দূষণে কাজ করার৷ তাই নিজের শ্রবণক্ষমতার সমূহ ঝুঁকির ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক তিনি৷
বিকট শব্দ থেকে কর্মীদের বাঁচাতে তাই ‘কোয়েটপ্রো' নামের বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে নরওয়ের বৃহত্তম তেল কোম্পানি ‘স্টাটওয়েল'৷ এটি কানে ব্যবহার করার মতো একটি ডিজিটাল প্লাগ৷ এটি ১২০ ডেসিবেল মাত্রার বিকট আওয়াজকে ৩০ ডেসিবেলে নামিয়ে এনে শ্রবণ উপযোগী করে কানে পৌঁছায়৷ শুধু শব্দের মাত্রা সহনীয় করে তোলা নয়, সাথে পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এনে দিয়েছে দ্বিগুণ ফল৷ এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করছেন আসলে মেলভ্যার৷ তিনি বললেন, ‘‘বাহিরের শব্দের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম এটি৷ যেমন হেলিকপ্টার উড্ডয়নের সময় সৃষ্ট বিকট আওয়াজকে কানে পৌঁছতে দেবে না এই প্লাগ৷ আবার এটি সাধারণ শ্রবণযন্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়৷ যেমন এটির ব্যবহারকারী স্পষ্টভাবে শুনতে পাবে তার কাছে পাঠানো রেডিও বার্তা এবং এর সাথে সংযুক্ত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে বার্তা ফেরত পাঠাতেও পারবে অপর প্রান্তে৷''
বিমানে কিংবা একটু গোলমালের মধ্যেও ভালো ঘুমের জন্য যেসব ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা হয়, এটিও তেমনই একটি প্লাগ৷ তবে এর সাথে তার দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে পকেটে বহনের মতো ছোট্ট কম্পিউটার৷ তাই সেকেন্ডের মধ্যেই বাইরের শব্দের মাত্রা বিশ্লেষণ করে তাকে কানের উপযোগী করা আবার মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠানো বার্তা অপর প্রান্তে সরবরাহ করাও সম্ভব হচ্ছে৷ এটিকে দ্বিমুখী বেতার প্রযুক্তির সাথে যুক্ত করা থাকে যা যোগাযোগের উন্নত মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এমনকি তেল ক্ষেত্রগুলোতে কর্মরত মানুষদের জন্য এটি জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে৷ মেলভ্যার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, ‘‘মানুষের শ্রবণ শক্তি সুরক্ষায় বিশ্বে এটিই প্রথম যন্ত্র যা ব্যবহারকারীর কানের পর্দায় পৌঁছানো শব্দের সঠিক মাত্রা নিরূপণ করতে পারে৷ এমনকি আমরা এটির সাহায্যে নির্ধারিত সময়ে শব্দ শ্রবণের মাত্রা মেপে পরবর্তীতে কারো শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের ঘটনাও নির্ণয় করতে পারবো৷ ফলে কতটুকু মাত্রার শব্দ সহনীয় আর কত মাত্রা অসহনীয় সেটিও নির্ণয় করা যাবে আরো নিখুঁতভাবে৷''
তবে শুধুমাত্র প্রযুক্তি নির্ভর সুরক্ষাই নয়, বরং কর্মক্ষেত্রের শব্দ দূষণ কমানোর জন্য চাই আরো কিছু পদক্ষেপ৷ যেমন উত্তর সাগরের বিকট আওয়াজ উৎপাদনকারী যন্ত্রগুলোকে আলাদাভাবে কিছুটা দূরে স্থাপন করা৷ আর সেটি পুরোপুরি সম্ভব না হলে শব্দ রোধী যন্ত্রটি যেন সহজে ব্যবহার উপযোগী হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক