লেজার দিয়ে সুলভে ক্যানসার চিকিৎসা
১৮ জুলাই ২০১৬ক্যানসারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লেজার প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা একটি লেজার রশ্মিকে এত ঘন ও নিখুঁতভাবে নিক্ষেপ করতে সফল হয়েছেন যে, সৌরশক্তি একটি পেনসিলের শীষের মাপে কনসেনট্রেট করা যাচ্ছে৷ এই রশ্মি ভবিষ্যতে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনে দিতে পারে৷ ড্রেসডেন শহরের বিকিরণ গবেষণা কেন্দ্রের প্রো. মিশায়েল বাউমান বলেন, ‘‘নিরাময়ের সম্ভাবনার অভাবে সব রোগীকে চিকিৎসা দিতে না পেরে আমি অসন্তুষ্ট৷ এই অসন্তোষ থেকেই গবেষণা চালিয়ে যাবার তাগিদ আসে৷''
এরিকা ভল্ফ ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন৷ প্রচলিত এক্স-রে পদ্ধতি দিয়েই তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে৷ মিশায়েল বাউমান ঠিক এমন উদাহরণ তুলে ধরে বোঝাতে চাইছেন, তাঁর নিরাময়ের সম্ভাবনা কতটা অনিশ্চিত৷ তিনি বলেন, ‘‘ফুসফুস আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে, তবে নিরাময় ঠিকমতো হবে কিনা জানা নেই৷ আমাকে ক্রমাগত নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে৷''
সমস্যা হলো, টিউমার মোকাবিলা করতে গিয়ে সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি হয়৷ তাছাড়া সব ক্যানসার কোষ ধ্বংস না হবার বিপদও আছে৷ চিকিৎসার তুলনায় রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি অনেক এগিয়ে আছে৷ অত্যাধুনিক ইমেজিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টিউমারের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা হয়৷ এমনকি কয়েক মিলিমিটার মাপের মেটাস্টাটিস পর্যন্ত অগোচর থাকে না৷ প্রো. নাসরেদ্দিন আবোলমালি বলেন, ‘‘আমরা রোগীর শরীরের মধ্য দিয়ে উপর পর্যন্ত স্ক্যান করে ফুসফুসের মাঝে বড় লেসিয়ন দেখতে পাচ্ছি, যা শর্করা গ্রহণ করে৷ আমাদের কাছে এটা ক্ষতিকারক টিউমারের অস্তিত্বের স্পষ্ট ইঙ্গিত৷ সিটিস্ক্যানের সঙ্গে কম্বাইন করে খতিয়ে দেখলে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারি৷''
টিউমারের মাপজোক যতটা নিখুঁতভাবে করা যাচ্ছে, গবেষকরা ঠিক ততটাই নিখুঁতভাবে ক্যানসার মোকাবিলা করতে চান৷ যেমন প্রোটন দিয়ে টিউমারের মোকাবিলা করতে চান তাঁরা৷ আরও ঘন ও নিখুঁতভাবে প্রোটন বিকিরণ করলে সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি হয় না৷ প্রো. বাউমান বলেন, ‘‘প্রথমে প্রোটনের খুব কম শক্তি থাকে, ফলে সেই অবস্থায় ক্ষতির মাত্রাও কম হয়৷ শরীরে প্রবেশ করে সামান্য ক্ষতি করতে পারে৷ সুস্থ টিস্যুর সামান্য ক্ষতি করে আচমকা তার শক্তি দ্রুত বেড়ে যায় এবং তারপর বিশাল ড্রপ দেখা যায়৷''
কিন্তু প্রোটন বিকিরণ অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া৷ প্রো. বাউমানের টিমের স্বপ্ন হলো সস্তায় সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা৷ লেজার এর সমাধান হতে পারে৷ অতি সম্প্রতি গবেষকরা মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন, যে লেজার রশ্মির মাধ্যমেও কোষ ধ্বংস করা সম্ভব৷ প্রো. বাউমান বলেন, ‘‘সেটা ছিল সত্যি এক অসাধারণ মুহূর্ত, কারণ আমরাই গোটা বিশ্বের প্রথম টিম, যারা বিভিন্ন পরীক্ষা একত্র করেছি৷ ডোজের মাত্রাও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি৷ এই সাফল্যকে মাইলফলক বলা চলে৷''
এ এক বিশাল অগ্রগতি৷ কারণ প্রোটন দিয়ে টিউমার ধ্বংস করতে হাসপাতালগুলির আর বিশাল ও ব্যয়বহুল পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটর প্রয়োজন হবে না৷ লেজার রশ্মি দিয়েই সেই কাজ করা যাবে৷ চরম ব্যস্ততার মধ্যে বিজ্ঞানীরা আগামী দিনের ক্যানসার চিকিৎসা উদ্ভাবন করছেন৷
প্রাথমিক পরীক্ষায় যা সফল হয়েছে, তার আরও উন্নতির প্রয়োজন৷ ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ঘন ও আলট্রা শর্ট পাল্সড লেজার আরও নিখুঁত করে তোলার চেষ্টা করছেন৷ উচ্চ মানের অপটিকাল যন্ত্রের মাধ্যমে সেই লেজার সৃষ্টি হবে৷
এই গবেষণা ভবিষ্যতধর্মী মনে হলেও পদার্থবিদ ও চিকিৎসকদের এই টিম নিখুঁত ও সুলভ চিকিৎসা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর৷