লাভজনক পদ কোনটি?
১৫ নভেম্বর ২০১৮আওয়ামী লীগ থেকে এবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের জন্য মনোনয়ন পত্র কিনেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷ আর ঢাকা-১৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল৷ এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত দু'জন কর্মকর্তাও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন৷ সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন৷
সরকারি কর্মকর্তাদের পদ যে প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ, তা স্পষ্ট৷ এ কারণে আরপিওতে বলা আছে, সরকারি কর্মকর্তারা চাকরি থেকে অবসর নেয়ার তিন বছর পার না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না৷ এবার তা সংশোধন করে ৫ বছর করার প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি৷
সংবিধানের ৬৬ (চ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন৷
আর এই অনুচ্ছেদেই আবার বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন না৷
এমপিদের পদ লাভজনক কিনা তা নিয়ে বিতর্ক ছিল৷ সংবিধানে এ ব্যাপারে কিছু বলা নেই৷ এমপিরা যেহেতু বেতন নেন না, তাঁরা ‘সম্মানি' নেন তাই তাঁদের পদও লাভনক নয় বলে সিদ্ধান্ত আছে৷
এখন প্রশ্ন হলো, অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের কৌঁসুলির পদ লাভজনক কিনা? তাঁরা ওই পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন কিনা? বর্তমান আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি ছিলেন৷ তিনি তাঁর ওই পদে থেকেই নির্বাচন করেছেন৷ আইন কোনো বাধা হয়নি৷
সংবিধানে লাভজনক পদের ব্যাখ্যা নেই৷ তা আছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-এর ১২ ধারায়৷ সেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি শেয়ারসম্বলিত কোম্পানির চাকরি বা পদকে ‘লাভজনক পদ’ বলা হয়েছে৷
সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে সরকারি কর্মচারী'র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে বেতনাদিযুক্ত পদে অধিষ্ঠিত বা কর্মরত ব্যক্তি সরকারী কর্মচারী৷ প্রজাতন্ত্রের কর্ম মানে হলো: বাংলাদেশ সরকারের সামরিক বা বেসামরিক প্রকৃতির কোনো কর্ম, চাকুরি বা পদ, কিংবা আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্ম হিসেবে ঘোষিত হতে পারে এরূপ অন্য কোনো কর্ম৷
অন্যদিকে ২০০১ সালে আদালতের এক রায়ে বলা হয়, যে পদে নিয়োগ ও পদচ্যুতির ক্ষমতা সরকারের হাতে, সে পদ লাভজনক পদ৷
আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে আগ্রহী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ কোনো লাভজনক পদ নয়৷ এটা সাংবিধানিক পদ৷ এই পদে থেকে নির্বাচনে কোনো বাধা নেই৷’’ তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘‘আমি যে সুবিধা পাই, তা বেতন নয়, সম্মানি৷’’
অন্যদিকে দুদকের বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমি দুদকে কোনো চাকরি করি না৷ এটা চুক্তিভিত্তিক৷ আমি অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক সম্মানি পাই৷’’
তিনি আরো বলেন,‘‘অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচন করতে পারলে আমার নির্বাচনে কেন বাধা থাকবে৷ আর আইনমন্ত্রীও তো বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি থাকা অবস্থায় নির্বাচন করেছেন৷’’
রাষ্ট্রের লাভজনক পদ ও নির্বাচনের অযোগ্যতা নিয়ে ডয়চে ভেলে'র সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াৎ হোসেন৷ তিনি বলেন,‘‘লাভজনক পদের ব্যাখ্যা সংবিধানে নেই৷ তবে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের লাভজনক পদ বলতে সরকারি চাকরি বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে, প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত কোনো পদকে বুঝায়৷ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ আরো কিছু পদ লাভজনক হলেও সংবিধানে ওই পদগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে বলা আছে যে, তা লাভজনক বলে বিবেচিত হবে না৷ এমপিদের পদ লাভজনক কিনা তা নিয়ে বিতর্ক ছিল৷ কিন্তু এমপিরা যেহেতেু বেতন নেন না, ভাতা নেন, তাই তাঁদের পদ লাভজনক নয় বলে সিদ্ধান্ত আছে৷ তাঁরা সরকারি অফিস, গাড়ি বা ব্যক্তিগত কর্মকর্তাও নেন না৷ তবে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা স্থানীয় সরকারের অনেক নির্বাচিত পদ লাভজনক৷ কারণ, তাঁরা প্রশাসনিক কাজে আছেন, বেতন নেন, সরকারি অফিস, গাড়ি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নেন৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘‘অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ লাভজনক নয়৷ এটা সাংবিধানিক পদ৷ আর সাবেক নির্বাচন কমিশনারেরও নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই৷ কারণ, আইন হলো তিনি পুনর্বার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারবেন না৷ তিনিও সাংবিধানিক পদে ছিলেন৷’’