1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জার্মান সাংবাদিকদের উপর হামলা

সমীর কুমার দে ঢাকা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মা ও দুই শিশু কন্যাকে অপহরণের অভিযোগ তুলে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গারা বৃহস্পতিবার দুপুরে জার্মান সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে৷ হামলায় তিন জার্মান সাংবাদিকসহ চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/3Dngk
ছবি: DW/S. Kumar Dey

হামলায় তাদের ব্যবহৃত গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ লুটপাট করা হয় তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ক্যামেরাসহ সবকিছু৷ সেনা সদস্যরা দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে ক্যাম্প হাসপাতালে ভর্তি করেন৷ এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ অন্যরা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

ঢাকাস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফারেনহলৎস রোহিঙ্গা শিবিরে জার্মান সাংবাদিকদের উপর হামলার খবর নিশ্চিত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মান সাংবাদিকরা এখন নিরাপদে আছেন৷'' 

Deutsche Journalisten in Bangladesch angegriffen
হামলায় আহত এক সাংবাদিকছবি: DW/S. Kumar Dey

এদিকে, উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘জার্মানির সাংবাদিক দলটি বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাঁদের প্রয়োজনীয় শুটিং শেষ করে ফেরার সময় ৮ ও ৯ বছরের দুটি শিশু ও তাদের মাকে সঙ্গে নিয়ে পাশের বাজারে যান৷ সেখানে তাঁরা শিশুদের জামা-কাপড়, খাবার ও খেলনা কিনে দেন৷ এরপর মাসহ শিশু দু'টিকে ক্যাম্পে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন৷ কিন্তু হঠাৎ করেই শিশু দু'টির মায়ের সন্দেহ হয় তাদের অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷ এরপর তিনি চিৎকার দেন৷ তখন আশপাশ থেকে শত শত রোহিঙ্গা সেখানে হাজির হয়ে জার্মান দলটির উপর হামলা চালায়৷ পুলিশ ছাড়াও সেনা সদস্যরা দ্রুত সেখানে হাজির হয়ে তাঁদের উদ্ধার করে পাশের হাসপাতালে ভর্তি করেন৷''

জার্মান সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়ীর চালক কক্সবাজার টেকপাড়া গ্রামের নবী আলম (৩০) স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে কুতুপালং ৪ এক্সটেনশন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও ছবি ধারণ করেন সাংবাদিকরা৷ এরপর সকাল পৌনে ১১টার দিকে লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে দুটি শিশু ও মার সাক্ষাৎকার নেন৷ সবশেষে শিশু বুশেরা বেগম (৯), কাচুনামা আকতার (৮) ও তাদের মা হাসিনা আকতারকে (৩৫) সঙ্গে নিয়ে তাঁরা লম্বাশিয়া বাজারে যান৷ এ সময় জার্মানির সাংবাদিকরা তাদেরকে চাহিদামত ভালো কাপড় ও খাবার কিনে দেওয়ার পর ক্যাম্পে পৌছে দেয়ার জন্য গাড়িতে তোলেন৷ সেখান থেকে রওনা দিলে হঠাৎ করেই হাসিনা আকতার তাদের অপহরণ করা হচ্ছে বলে চিৎকার শুরু করেন৷ 

নবী আলম আরও বলেন, হাসিনার চিৎকারে রোহিঙ্গারা দা, কিরিচ, লাঠিসোটা নিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়৷ এই সময় রোহিঙ্গাদের এলোপাতাড়ি মারধরে তিন জার্মান সাংবাদিক আহত হন৷ তাঁরা জার্মানির সরকারি প্রচারমাধ্যম এআরডির সাংবাদিক বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে৷

তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য জাকির হোসাইন আহত হয়েছেন৷ রোহিঙ্গারা সাংবাদিকদের ক্যামরা, সাউন্ড রেকর্ডার, লাইসেন্স, মানিব্যাগ, তিনটি লাগেজ, পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি লুটপাট করে তাঁদের জিম্মি করে রেখেছিল৷

পরে খবর পেয়ে সেনা সদস্য ও পুলিশ লম্বাশিয়া বাজারে রোহিঙ্গাদের ধাওয়া করে জার্মান সাংবাদিকদের উদ্ধার করে৷ এ ঘটনায় সাংবাদিকদের বাংলাদেশি দোভাষী সিহাব উদ্দিন (৩৫) বাদি হয়ে উখিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন৷

উখিয়া থানা চত্বরেই স্থানীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুই রোহিঙ্গা শিশুর মা হাসিনা আকতার৷ ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে ওই রোহিঙ্গা নারী বলেন, তাদেরকে বাড়ী পৌঁছে দেয়ার কথা বলে জার্মান সাংবাদিকরা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল৷ তারা চিৎকার দিলে রোহিঙ্গারা তাদের উদ্ধার করে৷ তবে বাংলাদেশি দোভাষী সিহাব উদ্দিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন৷

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, জার্মান সাংবাদিকদের লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷ পুলিশের একটি টিম ক্যাম্পে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, জার্মানির দেয়া অর্থ সহায়তায় তারা খেতে পারছেন৷ যারা খাবারের যোগান দিচ্ছে তাদের উপর হামলা করে ঠিক কাজটি করেননি তারা৷ পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে যা লুট করা হয়েছে তা ফিরিয়ে না দিলে জার্মানি অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে৷ তাহলে তাদেরই সমস্যা হবে৷ ওসি বলেন, এভাবে বুঝিয়ে মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে৷