যেতে চান না অনেক রোহিঙ্গা
১৪ নভেম্বর ২০১৮জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এই কাজে সহায়তার প্রক্রিয়ায় থাকলেও সংস্থাটি ডয়চে ভেলেকে জানায় যে, মিয়ানমার এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়৷ শরণার্থী, ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে পালিয়েছে কিনা, সে বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই৷''
তাঁর দাবি,‘‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমার – দু'দেশই এখন প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত৷''
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিহ্নিত করা ৪৮৫টি পরিবারের মোট ২২৬০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নিতে রাজি হয়েছে৷তবে দেশটি প্রতিদিন মাত্র ১৫০ জন করে ফেরত নেবে৷ এ জন্য টেকনাফের কেরানতলীতে একটি ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় আরেকটি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে৷ ১৫ নভেম্বর প্রথমে তাঁদের সেখানে নিয়ে রাখা হবে৷ তারপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে৷ দু' দেশের প্রতিনিধিরাই তখন সেখানে থাকবেন৷ এদিকে এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের একাংশ মিয়ানমারে ফিরতে অনীহা প্রকাশ করেছে৷ টেকনাফের উনচিপ্রাং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের আবুল কাশেম জানান, ‘‘যতদিন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হবে, ততদিন আমরা মিয়ানমারে যাবো না৷ আমাদের জায়গা-সম্পত্তি যা ছিল, তা ফিরিয়ে দিলে তবেই আমরা যাবো৷ ওখানে এখনো অত্যাচার করা হচ্ছে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে৷ তাই আমরা নিরাপত্তা পাবো না৷''
একই ক্যাম্পের আরেকজন রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘‘আমরা অনেক দুঃখ-কষ্ট স্বীকার করে বাংলাদেশে এসেছি৷ আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে৷ মা-বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে৷ আমাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে৷ জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে৷ এই অত্যাচার, নির্যাতেনের বিচার করতে হবে৷ আমাদের সবকিছু ফিরিয়ে দিতে হবে৷ নিরপত্তা দিতে হবে৷ তাহলে আমরা যাবো, না হলে যাবো না৷''
নুরুল হক নামের এক তরুণ রোহিঙ্গা উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পে ছিলেন৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পঠানো হবে শুনে তিনি ৩-৪ দিন আগে টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পে পালিয়ে এসেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের বর্মা (মিয়ানমার) পাঠানো হবে শুনে আমি ক্যাম্প থেকে এখানে চলে এসেছি৷ আমরা যাবো না৷ আমাদের আবার তারা নির্যাতন করবে৷''
এ প্রসঙ্গে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম বলেন, ‘‘কেউ ক্যাম্প থেকে পালিয়েছে কিনা – এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত কোনো তথ্য পাইনি৷ ‘মাথা' গণনা শেষে আমরা বুঝতে পারব আসলেই কেউ পালিয়েছে কিনা৷ আমরা প্রাথমিক তালিকা থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করছি৷''
প্রত্যাবাসন তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছে ইউএনএইচসিআর৷ মঙ্গলবার তারা ১১টি পরিবারের সাথে কথা বলেছে৷ বুধবার আরো ১৯টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলার কথা৷ রোহিঙ্গারা আদৌ ফেরত যেতে ইচ্ছুক কিনা, তা-ও তারা জানছেন৷ গত ২৮ অক্টোবর ৪৮৫টি পরিবারের ২২৬০ জন রোহিঙ্গার তথ্য সরবরাহ করে অনুরোধ করা হয় যে, তাঁরা যেন এই পরিবারগুলির সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের মতামত সংগ্রহ করেন৷
জানা গেছে, এই প্রত্যাবাসন স্থল সীমান্ত দিয়ে হবে৷রোহিঙ্গারা ঘুনদুম-বুথিডং সীমান্ত দিয়ে রাখাইনে প্রবেশ করবেন৷
কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর-এর পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার যোশেফ সূর্য ক্রিপুরা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘কারুর কারুর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ার খবর আমরা পর্যবেক্ষণ করছি৷ এছাড়া পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় আমরা যুক্ত হওয়ার কাজও করছি৷ সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে কাউকে তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে ফেরত পঠানো হবে না৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সবাই স্বেচ্ছায় ফিরে যাচ্ছেন কিনা, সেটা জানার কাজ করছি আমরা৷ অ্যাসেসমেন্ট শেষ না হলে বলা যাবে না যে সবাই স্বেচ্ছায় ফিরে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না৷ তবে আমাদের কথা হলো, মিয়ানমারে এখানো ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি৷ তাই আমাদের মতে, সেখানে ফেরত পাঠানোর মতো পরিবেশ এই মুহূর্তে নেই৷''
২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন৷ এতদিন পর যে প্রক্রিয়ায় মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া শুরু করতে যাচ্ছে, তাতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে৷