1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কমায় রেকর্ড

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ২০২৩ সালে যে সহায়তা চাওয়া হয়েছিল তার মাত্র ৫০ শতাংশ পাওয়া গেছে৷ এই অবস্থায় বুধবার ২০২৪ সালের জন্য ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে জাতিসংঘ৷

https://p.dw.com/p/4dTYV
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুকে ২০১৬ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেমে আশ্রয় নেয়৷ ছবি: Kazi Salahuddin Razu/NurPhoto/picture alliance

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বিশ্ব পরিস্থিতি বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা পরিস্থিতির কারণে সামনে সহায়তা আরো কমতে পারে৷ কারণ এখন মানবিক সহায়তা ভাগ হয়ে যাচ্ছে৷ এতে বাংলাদেশের ওপর আর্থিক চাপ তৈরি হতে পারে৷ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সংকটও তৈরি হতে পারে৷

২০২৩ সালে জাতিসংঘ ও দাতারা রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল৷ কিন্তু পাওয়া গেছে মাত্র ৪৪০ মিলিয়ন ডলার৷

২০১৭ সাল থেকে কোনো বছরই প্রত্যাশিত সহায়তা পাওয়া যায়নি৷ তবে গত বছর রীতিমতো ধস নেমেছে৷ ২০১৭ সালে প্রত্যাশিত সহায়তার ৭৩ ভাগ, ২০১৮ সালে ৭২, ২০১৯ সালে ৭৫, ২০২০ সালে ৫৯, ২০২১ সালে ৭৩ এবং ২০২২ সালে ৬৯ ভাগ সহায়তা পাওয়া গেছে৷ আর ২০২৩ সালে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ অর্থাৎ ২০২৩ সালে সহায়তা কমায় রেকর্ড হয়েছে৷

এদিকে ২০২৪ সালের জন্য ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে জাতিসংঘ৷ বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এই সহায়তা চাওয়া হয়৷

আর্থিক সংকটের কারণে গত বছর থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য দৈনিক রেশন ৩৩ শতাংশ কমানো হয়৷ একজন রোহিঙ্গার জন্য এখন প্রতিমাসে আট মার্কিন ডলারের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়৷ গত বছরের শুরুতে মাথাপিছু মাসে ১২ মর্কিন ডলারের খাদ্য সহায়তা দেয়া হতো৷ সেটা মার্চে করা হয় ১০ মার্কিন ডলার৷ জুনে করা হয় আট মার্কিন ডলার৷

জাতিসংঘ বলছে, রেশনের কাটছাঁট প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জীবনে প্রভাব ফেলবে৷

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাদ্য সংকটে পড়বেন: মো. শহীদুল হক

গত বছর জুনে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছিলন, ‘‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সাহায্য কমাতে বাধ্য হচ্ছে৷ এতে তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ফলাফল হবে ভয়াবহ৷ নারী, শিশু ও সবচেয়ে নাজুক মানুষেরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷’’

‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চাপে পড়তে পারে’

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান মনে করেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে পারে৷ শুধু রোহিঙ্গা নয়, মিয়ানমারে এখন যে পরিস্থিতি চলছে তাতে অন্য জাতিগোষ্ঠীর লোকও বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারে৷ তখন সব দিক দিয়েই বাংলাদেশের জন্য সংকটের কারণ হবে৷''

তার কথা, ‘‘প্রথমে ইউক্রেন যুদ্ধ, এরপর গাজা পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে ফোকাস সরে গেছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন ইউরোপে অনেক নতুন শরণার্থী৷ এরপর গাজায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেই কারণে রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগ আরো কমেছে৷ মধ্যপ্রাচ্যেও সংকট বেড়ে গেছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী একটা হিউম্যানিটিরিয়ান ফেটিগ তৈরি হয়েছে৷ ফলে আমাদের এখান থেকে দৃষ্টি সরে যাচ্ছে৷ সম্পদ ভাগ হয়ে যাচ্ছে৷ আমাদের ব্যর্থতা হলো আমরা কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে রাখতে পারিনি৷ আমাদের উচিত হবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে অব্যাহতভাবে বিষয়টি তুলে ধরা৷’’

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে পারে: আ ন ম মুনীরুজ্জামান

‘রোহিঙ্গারা খাদ্য সংকটে পড়বেন’

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, ‘‘সহায়তা কমে যাওয়া অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাদ্য সংকটে পড়বেন৷ তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য না পেলে অপুষ্টির শিকার হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হবেন৷ বিশেষ করে বৃদ্ধ, গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বেশি৷ এছাড়া তাদের স্বাস্থ্যসেবাসহ আরো অনেক বিষয়ে কাটছাঁট হবে৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘এরফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ বিশেষ করে কক্সবাজার অঞ্চলে এই রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ তাদের খাদ্য না থাকলে তারা ক্যাম্পে এবং ক্যাম্পের বাইরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন৷’’

‘নতুন ঘটনা পুরনো ঘটনার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়’

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘২০১৭ সাল থেকে কখনোই কাঙ্খিত সহায়তা পাওয়া যায়নি৷ আর নতুন নতুন ঘটনা পুরনো ঘটনার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়৷ এখন ইউরোপেই ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাত মিলিয়ন শরণার্থী৷ স্বাভাবিক কারণে ইউরোপ ও অ্যামেরিকার নজর সেদিকেই বেশি থাকবে৷ তাই হয়েছে৷ তারপর গাজা আরেকটি নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷’’

‘‘আমাদের সমস্যা এখন দুই রকম৷ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এবং তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়া৷ আমাদের দুইটি নিয়েই এখন কাজ করা দরকার৷ কারণ আন্তর্জাতিক নানা সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়েও এখন আর তেমন কথা হচ্ছে না৷ মিয়ানমারের যা পরিস্থিতি তাতে এখন হয়তো সেখানে আমাদের পক্ষে প্রতিনিধি পাঠানো সম্ভব নয়৷ তারপরও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে চেষ্টা করা উচিত৷ আর রাখাইন যদি পুরোটা আরাকান আর্মির দখলে চলে যায় তাহলে কী করণীয় তাও ভাবতে হবে৷ তখন তাদের সঙ্গে আমরা কীভাবে যোগাযোগ করব তা এখনই ভাবা দরকার৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য