‘জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে’
২২ অক্টোবর ২০১৭কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সঙ্গে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের এই নোবেলজয়ী অধ্যাপক রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক খোলামেলা কথা বলেন৷ ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশ কীভাবে এ বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে বা কতদিন এভাবে আশ্রয় দিতে পারবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এটা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়৷ এটা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়ও৷ ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে৷ তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে৷ পুরো অঞ্চলটি খুব শিগগিরই সন্ত্রাসবাদের আখড়া হয়ে উঠবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নেটওয়ার্কও এখানে কাজ করা শুরু করবে৷ ফলে এটা বাংলাদেশের জন্য তো বটেই, পুরো অঞ্চলের জন্যই হবে ভয়াবহ৷ একসময় সবকিছু মিলিয়ে একটা বিস্ফোরণ হবে৷ আমি বলতে চাই, এসব ঘটার আগেই এ সমস্যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করতে হবে৷''
হেফাজতে ইসলাম রোহিঙ্গা স্রোত ব্যবহার করছে, তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়েছে৷ আর এই হেফাজত নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ পুরো অঞ্চলই এতে জড়িয়ে পড়বে৷ ভারত ও পাকিস্তানও এতে জড়াবে, সব জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোও এতে জড়াবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সু চি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন৷ বিশ্বব্যাপী তিনি তাঁর একটি ইমেজ তৈরি করেছেন, সারা বিশ্ব তাকে সম্মান করে৷ কিন্তু এখন তিনি পুরোপুরি উল্টো আচরণ করছেন৷ বিশ্ব এখন তার ভিন্ন রূপ দেখছে৷ নিজ দেশের মানুষের গণহত্যার সাথে নিজের নাম জড়াচ্ছেন সু চি৷''
সু চিকে কতোটুকু দোষ দেওয়া যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তিনি বলতে পারেন, সেনাবাহিনী তাকে চাপে রেখেছে, তাহলে তো তাঁর পদত্যাগ করা উচিত৷ কারণ তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না৷ রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের নাগরিক৷''
যদি সু চির সাথে সরাসরি কথা হয়, তাহলে তাকে কী বলতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘তাকে বলতাম যে আপনার তো একটি অবস্থান নেওয়া উচিত৷ বছরের পর বছর ধরে আপনি আপনার যে ইমেজ তৈরি করেছেন, সেটি রক্ষা করতে হবে৷ আপনি মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার একজন নেত্রী হিসেবে নিজের ইমেজ তৈরি করেছেন৷ এখন এসব নীতি, নৈতিকতার কী হলো?''
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স এটাশে এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল শহীদুল হক ড. ইউনূসের রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেয়া বক্তব্যকে বাস্তবতার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি এই রোহিঙ্গা সমস্যার যদি দ্রুত সমাধান করা না হয় তাহলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা হুমকির মুখে পড়বে৷ রোহিঙ্গারা এখন জঙ্গি বা অপরাধমূলক কাজের রিক্রুটমেন্টের উর্বর ক্ষেত্র৷ আর এর প্রথম শিকার হবে বাংলাদেশ৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও এর প্রভাব পড়বে৷ কিন্তু তারা কি করল তার দিকে চেয়ে আমাদের বসে থাকলে হবেনা৷ আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে৷ কারণ রোহিঙ্গা সমস্যার প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ বাংলাদেশ৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী আগুনে পোড়া সম্পদ ও ঘরবাড়ি রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত হয়৷ মিয়ানমার এখন রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেয়া ঘরবাড়ি ফসল জমি রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে৷ তাহলে তারা তাদের ফেরত নিয়ে রাখবে কোথায়? তারা আসলে ফেরত নিতে চায় না৷ আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো শেষ পর্যন্ত প্ল্যান ‘বি' অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখেই সহায়তা দিতে চাইবে৷ যদি তাই হয় তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য হবে মহাবিপর্যয়ের কারণ৷ তাই বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে৷''