1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা নিয়ে লাভ লোকসানের হিসাব!

১৬ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গারা শেখ হাসিনার জন্য আশীর্বাদ – এমন মন্তব্য করেছেন একজন আওয়ামী লীগ নেতা৷ এটা কি আসলেই আশীর্বাদ? যদি হয়, তাহলে এর ব্যাখ্যা কী? বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক বিরোধীরাই বা কী বলছেন এ মন্তব্য নিয়ে?

https://p.dw.com/p/2lu6K
Bangladesch Rohingya Flüchtlinge im Camp Cox's Bazar
ছবি: REUTERS

রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন, ‘‘অনেকে বলছে রোহিঙ্গারা আসছেন শেখ হাসিনার জন্য অভিশাপ হয়ে৷ তবে আমি বলবো, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছেন শেখ হাসিনার জন্য আর্শীবাদ হয়ে৷''

সোমবার ডয়চে ভেলেকে আহমেদ হোসেন অবশ্য তাঁর এই কথার ব্যাখ্যাও দেন৷ বলেন, ‘‘অনেকে মনে করেছিলেন, শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঝামেলায় পড়ে যাবেন৷ এমনকি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশ-সীমা লঙ্ঘন করে সংঘাতের উসকানি দিয়েছিল৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো ফাঁদে পা দেননি৷ তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, এটা সারা বিশ্বের একটি মানবিক সংকট৷ নিরাপত্তা পরিষদে তিনবার বৈঠক হয়েছে এই ইস্যুতে৷ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে৷''

আহমেদ হোসেন

তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছেন৷ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনার প্রশংসা করছেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি' উপাধি পেয়েছেন৷ এই উপাধি তাঁকে দিয়েছে বিশ্ব মিডিয়া৷

যারা এই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিল, যারা ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উসকানি দিয়ে বলতে চেয়েছিল শেখ হাসিনার মুসলামনদের জন্য দরদ নাই, তারা ব্যর্থ হয়েছে৷ শেখ হাসিনার কাছে মুসলিম, হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্ম নয়, বড় মানবতা৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘অং সান সু চির জায়গা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ আগে সু চি ছিলেন প্রশংসিত৷ কিন্তু এখন তিনি নিন্দিত৷ আর আমাদের প্রধানরমন্ত্রী আজ মানবতার জন্য প্রশংসিত৷''

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার না করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার কাজে ব্যস্ত বাংলাদেশ৷ ফলে এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে৷

আহমেদ আজম খান

আওয়ামী লীগ সরকার চিন, ভারত, রাশিয়া এবং অ্যামেরিকাকে এই সমস্যা নিয়ে এক কাতারে আনতে ব্যর্থ হয়েছে৷ তাছাড়া এই সংকটের সমাধান না হলে এই রোহিঙ্গারাই আমাদের সংকটে ফেলবে৷ ১৬ কোটি মানুষকেই সরকার খাওয়াতে পরছে না৷ এর মধ্যে আরো ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে দীর্ঘদির ধরে কীভাবে খাওয়াবে বাংলাদেশ?''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকার কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ৷ তারা এখন আত্মপ্রচারে লিপ্ত৷ তারা এটা নিয়ে রাজনীতি করছে৷ কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য৷ তা না করে এই সরকার সমস্যা জিইয়ে রেখে রাজনৈতিব ফায়দা লুটতে চায়৷''

রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের হিসাব করা অনুচিত৷ এটা নিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি করা ঠিক নয়৷ রোহিঙ্গারা জাতিগত নিপীড়নের শিকার, গণহত্যার শিকার৷ তারা রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার৷ তাঁদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অবশ্যই মানবিকতার পরিচয় নিয়েছে৷ এখন কাজ হলো, তাঁরা যাতে তাঁদের অধিকার নিয়ে সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করা৷ এটা কারুর আশীর্বাদ বা অভিশাপের বিষয় নয়৷''

ইমতিয়াজ আহমেদ

তিনি বলেন, ‘‘কোনো নেতা বা কেউ যদি এটা নিয়ে লাভ-লোকসানের হিসাব করেন, তাহলে বলতে হবে যে তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্কতার অভাব আছে৷ কারণ এ ধরনের ঘটনার শিকার যে কোনো দেশের মানুষ হতে পারেন৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের বড় ধরনে্র ভূমিকা নিতে হবে৷ কিন্তু বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো ‘স্পিডি' হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি৷ বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে৷ কিন্তু সেটা আরো জোরদার করা প্রয়োজন৷ এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা এটাকে কীভাবে আরো জোরদার করবে৷''

প্রসঙ্গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে অন্ততপক্ষে সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে৷ এর আগে থেকেই অবশ্য আরো চার লাখ রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশে৷

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনের মন্তব্য সম্পর্কে আপনার ভাবনা কী? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান