রোগীর আত্মীয়কে প্রহার
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪‘আবারো ল্যাবএইড স্ক্যানডাল (ভিডিও সহ)' – এই শিরোনামে সামহয়্যার ইন ব্লগে একটি পোস্ট দিয়েছেন শাহ আজিজ৷সেখানে তিনি জানান, ঢাকার ‘‘একটি হাসপাতালের সিসিইউ কক্ষে একজন যুবককে কয়েকজন ধরে পেটাচ্ছেন৷ তানভীর খান নামের এক যুবক ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি শনিবার ইউটিউবে আপলোড করেছেন৷''
শাহ আজিজ আরো জানান, ‘‘তানভীর জানিয়েছেন, ঘটনাটি নগরীর অন্যতম ‘আধুনিক' হাসপাতাল ল্যাবএইডে ঘটেছে৷ সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় হাসপাতালের লোকজন তাদের ওপর হামলা করেছে৷ তানভীর অভিযোগ করেছেন, অনেক টাকা খরচ করে ল্যাবএইডে তাঁর দাদাকে ভর্তি করান তিনি৷ সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার একটাই কারণ, সেটা হলো একটু ভালো মানের চিকিৎসাসেবা পাওয়া৷ কিন্তু সেখানে ভর্তি হওয়া রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি মনিটরে দেখে বুঝতে পারেননি কর্তব্যরত নার্স৷ উচ্চমূল্যে চিকিৎসাসেবা বিক্রি করা ল্যাবএইডের সিসিইউ রুমে নার্সের জ্ঞানের বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ ভিডিও আপলোড করে তানভীর লিখেছেন, ‘যখন সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় রোগীরা চিকিৎসা পায় না, তখন আমার দাদা ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিউতে চিকিৎসা নিতে যান৷ আমার দাদা মারা যান ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪৷'''
শাহ আজিজ লেখা থেকে জানা যায়, রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি প্রথমে লক্ষ্য করেন তানভীরের চাচা৷ পরের ঘটনা তানভীরের বর্ণনাতেই তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, ‘‘যখন আমার চাচা কর্তব্যরত নার্সকে জিজ্ঞেস করেন, হার্টবিট মনিটরের সোজা দাগের কারণ কী, তখন নার্স বলেন, এমনটি হতে পারে, কারণ রোগী ঘুমাচ্ছে৷ কিছুক্ষণ পর দায়িত্বরত ডাক্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে জানান, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং তাকে লাইফসাপোর্ট দিতে হবে৷ ....এই কথার সুত্র ধরে আমার চাচা তখন তাদের সেবার মান সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন আত্মীয়-স্বজনরা কি ডাক্তারকে রোগীর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করবে, নাকি ডাক্তার তাদেরকে অবহিত করবে? কেন একজন অদক্ষ নার্সকে সেখানে সিসিইউ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাখা হয়েছে, যে কিনা বলে হার্টবিটের সোজা দাগ মানে রোগী ঘুমাচ্ছে? কেন হঠাৎ লাইফসাপোর্ট দরকার হলো? এত খরচ করার পরেও কি আমরা আপনাদের কাছ থেকে ভালো সেবা আশা করতে পারি না? জবাবে ডাক্তার বলেন, তাদের আরো অনেক রোগী আছে৷ আর যদি তাদের নার্স নিয়ে আমাদের এত সমস্যা থাকে, তাহলে আমরা যেন নিজেরাই নার্সের ব্যবস্থা করি৷''
তারপর এক পর্যায়ে সিসিউ থেকে রোগীর আত্মীয়কে বের করে দেয়া হয়৷ তানভীর দাবি করেছেন, ‘‘কিছুক্ষণ পর আমি ও আমার এক বন্ধু সিসিইউ-তে গেলাম আমার দাদার ছবি তুলতে৷ ক্যামেরা দেখে তারা আমাদের মারতে শুরু করলো এবং আমাদের ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করলো৷ তারপর পুলিশ এবং ল্যাবএইডের একজন কর্মকর্তা এলেন৷ তারা আমাদের হুমকি দেন, যদি আমরা পুলিশের কাছে মামলা করি, তবে তারাও আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন৷''
মৃত্যুবরণ করা রোগীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি – এ তথ্য জানিয়ে শাহ আজিজ জানিয়েছেন, ‘‘এ ব্যাপারে ল্যাবএইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শামীমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি৷ তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়৷ ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে এর আগেও বহু অভিযোগ উঠেছে৷ ভুল চিকিৎসা ও গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে অনেকবার৷ তাদের ভুল চিকিৎসায় মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. মৃদুল কান্তি৷ পরে ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ ৫০ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে৷ ২০১০ সালের প্রথমদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ল্যাব এইডের ‘ভুল চিকিৎসার' শিকার হন৷ পরবর্তিতে পায়ের সামান্য আঘাত থেকে ক্যানসার মাসুমের পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে৷ এই ঘটনায় ২০১৩ সালের শেষের দিকে ঢাবির শিক্ষার্থীরা ল্যাবএইড ঘেরাও করে আন্দোলন করে৷ পরবর্তিতে সুমনকে (মাসুম?) ল্যাবএইডের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস এবং বাঁচানো সম্ভব না হলে তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা (৩০ লাখের নীচে নয়) দেয়ার ঘোষণা দেয় ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ৷''
লেখার শেষে শাহ আজিজের মন্তব্য, ‘‘মানুষের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান তার জীবন৷ .... কেউ প্রিয়জনের চলে যাওয়া সহ্য করতে পারেন না৷ অসুস্থতায় যখন প্রিয় মানুষটির জীবন ওষ্ঠাগত, তখন টাকার কথা চিন্তা না করে রোগীকে সারিয়ে তোলাটাই পরিবারের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে৷ আর এই সুযোগটাই নেয় অনেক বেসরকারি হাসপাতাল৷ অতিরিক্ত টাকা নেয় তারা৷ কিন্তু তারপরও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যর্থ হাসপাতালগুলো৷ মাঝেমধ্যেই ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার খবরগুলো আমাদের সামনে ভেসে ওঠে৷ আর এ বিষয়ে বরাবরই চুপ থাকে প্রশাসন৷''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ