1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেড জোনে হেনস্তা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

৩০ জুন ২০২০

জোন ভিত্তিতে লকডাউনের কার্যকরিতা যাচাই করতেই ২০ দিন আগে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ কৌশল কতটা সফল তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ কিন্তু স্থানীয়রা হেনস্তা ও চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন৷

https://p.dw.com/p/3eaIS
Bangladesch Ost Dhaka Lockdown Coronavirus
ছবি: DW/M. Rashed

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল৷ ওই সময়ে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকা সচল করতে সরকার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বিবেচনা করে দেশকে রেড, ইয়ালো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রেড জোন ঘোষণা করে তা অন্তত ১৪ দিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়৷

গত ৯ জুন মধ্যরাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন কার্যকর হয়৷ ২৩ জুন লকডাউন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়ায় লকডাউন আরো সাত দিন বাড়ানো হয়৷ মঙ্গলবার মধ্যরাতে সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা৷

টানা ২১ দিনের এই বন্দিজীবন কেমন কেটেছে বা কতটা কার্যকর ছিল এই লকডাউন; তা জনাতে টেলিফোনে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ যদিও তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি৷

তাদের একজন গ্রিন পয়েন্ট সোসাইটির বাসিন্দা৷ পেশায় সাংবাদিক এ ব্যক্তি জানান, সেখানে তিনি একাই বসবাস করেন৷ মাঝে মধ্যে ছেলে-মেয়ে দেখা করতে আসে৷

তিনি নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমার এলাকা পূর্ব রাজাবাজারের মধ্যে নয়, পান্থপথের মধ্যে৷ তারপরও পুরো এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়৷ আমরা এমনকি বাজারও করতে পারিনি৷ প্রথম কয়েকদিন ওষুধের দোকানও খোলা ছিল না৷ এ এলাকায় অনেক বয়স্ক মানুষ বসবাস করেন৷ যাদের নিয়মিত ওষুধের প্রয়োজন হয়৷

‘‘ইন্দিরা রোড থেকে সোবহান বাগ পর্যন্ত পুরো এলাকা বন্ধ করে দিয়ে কমিশনার ইরান ও স্থানীয় বণিক সমিতির সভাপতি বাহাদুরের সমর্থকদের প্রশ্রয়ে স্থানীয় সব মুদি দোকান বন্ধ করে দিয়ে কভার্ডভ্যানে নিত্যপণ্য বেশি দামে বিক্রি শুরু হয়৷ এজন্য প্রতিদিন প্রতি ভ্যান থেকে তারা পাঁচ হাজার করে চাঁদা নিচ্ছে বলে আমি শুনেছি৷''

লকডাউনের এ সময়ে অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘মুদি দোকানদার  বা সবজি বিক্রেতাদের আয় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে৷  নানা দোকানের কর্মচারীরা কাজে যেতে পারছেন না৷ গেটে বসে থাকা ছেলেপেলেদের টাকা দিয়ে এপার-ওপার হচ্ছে৷ গত কয়েক দিনে চোখের সামনে অনেক পরিবারকে মালপত্র নিয়ে চলে যেতে দেখেছি৷''

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় সব দিকে যাতায়াতে সুবিধা এবং নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাছে হওয়ায় পূর্ব রাজাবাজারে প্রচুর মেস আছে, যেখানে মূলত শিক্ষার্থীরা থাকেন৷ কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং কবে নাগাদ খুলবে তার নিশ্চয়তা না থাকায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা ছেড়েছেন৷

এরকম একটি বাড়ির মালিক বলেন, ‘‘আমার ছয়তলা বাড়ির পুরোটাই মেস ভাড়া দেই৷ স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একে একে সবাই চলে গেছে৷ তারা কবে ফিরতে তাও বুঝতে পারছি না৷

‘‘আর কত দিন বাড়ি ফাঁকা রাখবো৷ আমাকেও তো চলতে হবে৷ তাই পরিবারকে বাসা ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ মেসের আসবাবপত্র পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছি৷ আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে৷’’

লকডাউন শুরু হওয়ার পর স্থানীয় নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বুথ স্থাপন করে এলাকার লোকজনের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়৷ গত ২৭ জুন পর্যন্ত বুথে মোট ৩০৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানায় দৈনিক প্রথম আলো৷ তারা মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৫৫ জনের দেহে৷

লকডাউন শুরুর সময় ওই এলাকায় রোগী ছিল ৩১ জন৷ একাধিক জনের মৃত্যুর খবরও আছে৷ ওই এলাকায় মোট ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করেন৷

স্থানীয় ওই সাংবাদিক বলেন, ‘‘লকডাউনে একেবারে অকার্যকর হয়েছে তেমনটা বলা যাবে না৷ কিছুটা কাজ হয়েছে৷ কিন্তু স্থানীয়দের যে পরিমাণ হেনেস্তা হতে হচ্ছে, সেটা সহ্য করা কঠিন৷ এভাবে লকডাউন না করে যে বাড়িতে রোগী পাওয়া যায় সেটা লকডাউন করা যেতে পারে৷

‘‘এছাড়া যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছেন তাদের উচিত এলাকায় বয়স্ক যারা আছেন তাদের ওষুধ ও অন্যান্য জিনিস এনে দিতে সাহায্য করে৷ আর তারা যদি দুর্ব্যবহার না করতো তবে খুব ভালো হত৷''

পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন আর না বাড়লে মঙ্গলবার রাতে সেটা শেষ হওয়ার কথা৷ এদিকে, পুরান ঢাকার ওয়ারীতে ‘রেড জোন' হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় শনিবার সকাল ৬টা থেকে লকডাউন কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস৷

টানা ২১ দিন এই লকডাউন কার্যকর থাকবে বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷

ওয়ারীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন) আউটার রোড এবং ইনার রোড হিসেবে লালমিনি রোড, হরে রোড, ওয়ার রোড, র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিট এবং নওয়াব রোডকে ‘রেড জোন' হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এসএনএল/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)