৫৫ ভাগ শ্রমিক এখনো বেকার
২৪ এপ্রিল ২০১৫
আর দু'বছরেও ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা পাননি তারা৷
অ্যাকশনএইডের ‘পোস্ট রানা প্লাজা: হোয়্যার উই স্ট্যান্ড' শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের ৫৫ শতাংশ এখনো বেকার৷ বাকি ৫৪ শতাংশ শ্রমিক দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন৷ শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে না পারার বড় কারণ শারীরিক প্রতিকন্ধকতা৷ ৬৯ শতাংশ শ্রমিক নানা জটিলতায় ভুগছেন৷ ১৫ শতাংশ পছন্দসই কাজ পাচ্ছেন না৷ আর ৭ শতাংশ শ্রমিককে এখনো রানা প্লাজার আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে৷'
চলতি বছরের ১৩ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত রানা প্লাজা ধসে আহত এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারের দুই হাজার ২০০ জনের ওপর এ সমীক্ষা চালান হয়৷ এক হাজার ৪১৪ জন আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৭৮৬ জনের সঙ্গে কথা বলেছে অ্যাকশনএইড৷
সমীক্ষা অনুযায়ী, আহত শ্রমিকদের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন তাদের শারীরিক অবস্থা অনেকটা ভালো হয়েছে৷ তবে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বলেছেন, তাদের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে৷ আর এক দশমিক ৫ শতাংশ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন৷ ৬১ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিককে এখনো চিকিত্সকের কাছে যেতে হয়৷ প্রতি মাসে গড়ে একজন শ্রমিককে চিকিত্সা বাবদ ব্যয় করতে হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা৷ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মানসিক অবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি৷ ৫৯ শতাংশ শ্রমিকের আতঙ্ক ও হতাশা রয়েছে৷ ছয় দশমিক ৬ শতাংশ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন৷
সমীক্ষায় আহত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত, মানসিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ রানা প্লাজার ঘটনায় ন্যায়বিচারের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ সমীক্ষায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৮৬ জন রানা প্লাজার মালিক এবং ২৫০ জন কারখানা মালিকের শাস্তি দাবি করেছেন৷ এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত চার্জশিট দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷
এদিকে দুই বছরেও শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পুরো পাননি৷ তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে চলছে নানা টালবাহানা৷
আইএলও-র নেতৃত্বে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেখানে এখন পর্যন্ত ২৪ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে৷ এখনো ৬ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি আছে৷ শ্রম অধিকার বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিলসের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরে ২,৯০৯ জনকে ৭০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ৷ ক্ষতিপূরণের জন্য পাঁচ হাজার শ্রমিক আবেদন করলেও বাকিদের ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা হয়নি৷
শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান ইসরাফিল আলম এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সব শ্রমিক যাতে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পায় তার জন্য কাজ করছি৷ আশা করি আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যে সব ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে৷''তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি অনেক শ্রমিক এখনো বেকার আছে৷ যারা আর কাজ করতে পারবেন না তাদের জন্য পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে৷ আর যারা কর্মক্ষম আছেন কিন্তু নান ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের নিয়ে আমরা পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷''
আর রানা প্লাজার ঘটনায় মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘বিচার প্রক্রিয়া খুবই হতাশাজনক অবস্থায় আছে৷ শ্রম আইনে আমরা নয়টি মামলা করেছি৷ সেগুলোর অগ্রগতি নেই৷''
বিজিএমইএ-র সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজীম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রানা প্লাজায় হতাহত ৪৫ শ্রমিকের সন্তানের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের দায়িত্ব বিজিএমইএ নিয়েছে৷ অনেক আহত শ্রমিককে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে৷ ভবন ধসে হতাহতদের সঙ্গে বিজিএমইএ নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকরা আমাদের লোক, তাদের জন্য আমাদের আন্তরিকতা ও চেষ্টার কমতি নাই৷''
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক নিহত ও প্রায় আড়াই হাজারের শ্রমিক আহত হন৷ আর ধসের সময় সেখানে কমপক্ষে ৫,০০০ শ্রমিক পাঁচটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন৷