অজ্ঞাতদের শনাক্তের উদ্যোগ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩গত ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১,১৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়৷ এরমধ্যে ৩১৮ জনের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিএনএ ল্যাব দাফনের আগেই এই ৩১৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে৷ ডিএনএ ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ৫৫৫ জন আত্মীয় স্বজনের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে৷ এই দুই ধরনের ‘‘ডিএনএ প্রোফালিং'' শেষ হয়েছে৷ এখন অজ্ঞাত পরিচয়দের সঙ্গে আত্মীয় স্বজনের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে৷
তিনি জানান, মিলিয়ে দেখার কাজে আর বেশি সময় লাগবেনা৷ বড়জোর এক সপ্তাহ৷ কারণ এই কাজ দ্রুত করার জন্য তারা এফবিআই'র সহযোগিতা নিয়েছেন৷ তারা সফটওয়্যার এবং কারিগরি সহায়তা দিয়েছে৷
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘বেওয়ারিশ হিসেবে যাদের দাফন করা হয়েছে তাদের সবার পরিচয়ই জানা যাবে৷ আর প্রত্যেকটি বেওয়ারিশ লাশের একটি কোড নাম্বার আছে৷ সেই নম্বার দেয়া আছে কবরেও৷ ফলে চিহ্নিত করতে কোন সমস্যা হবেনা৷''
তবে এই ৩১৮ জনের বাইরেও এখনো নিখোঁজ আছেন বেশ কয়েকজন৷ সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেন, তারা ৩২৯ জনকে নিখোঁজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন৷ সেই হিসেবে আরো ১১ জনের কোন খোঁজ নেই এখনো৷ তবে তারা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান৷
এদিকে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত এবং নিহতদের পরিবার এখনো তেমন কোন ক্ষতিপূরণ পাননি৷ এখন পর্যন্ত নিহতদের পরবারের সদস্যদের ১ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ আর আহতরা পেয়েছেন বিচ্ছিন্নভাবে৷ তবে নিখোঁজদের পরিবার কিছুই পায়নি৷ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সবার পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ দেয়ায় দেরি হচ্ছে৷ প্রতারণা যাতে না হয় সেজন্যই দেরি করা হচ্ছে৷
কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা দাবি করছেন ক্ষতিপূরণের নানা আশ্বাস পাওয়া গেলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি৷ পোশাক শিল্পের মালিকরা ৫০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের কথা বললেও তারা তা করেননি৷ ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিদেশি ক্রেতারা৷ কিন্তু কোন প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি৷ ‘‘ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়নের'' বাংলাদেশ প্রতিনিধি রায় রমেশ চন্দ্র ডয়চে ভেলেকে জানান, তাদের দাবি নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২৮ লাখ এবং আহতদের এর দেড়গুণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷
উল্লেখ্য, ২৪শে অক্টেবর রানা প্লাজা ধসের ৬ মাস হবে৷ এই সময়ের মধ্যে যদি সরকার, মালিক এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এই ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে তা আদায়ে শ্রমিকরা ‘‘ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়নের'' মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু করবেন৷