রাজ্য নির্বাচনে ম্যার্কেলের দলের ভরাডুবি
১৫ মার্চ ২০২১অশনি সংকেত আগেই পাওয়া যাচ্ছিল৷ নির্বাচনের ফল জানার পর ম্যার্কেলের দলের মাথায় হাত৷ সাধারণ নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে দু-দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভরাডুবির ধাক্কা জার্মানির সরকারের প্রধান শরিক দলকে দিশাহারা করে তুলেছে৷ ম্যার্কেলের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ১৬ বছর পর দলের হাত থেকে চ্যান্সেলর পদও হাতছাড়া হবার আশঙ্কা বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ শুধু তাই নয়, সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে জার্মানির আগামী সরকারের সম্ভাব্য রূপরেখাও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷
বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ ও রাইনলান্ড-প্যালেটিনেট রাজ্যে রোববারের নির্বাচন জার্মানি তথা ইউরোপীয় রাজনীতির উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে পারে৷ এর প্রথম কারণ অবশ্যই চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের রক্ষণশীল সিডিইউ দলের ভরাডুবি৷ করনো সংকটের কারণে ভোটাররা রেকর্ড সংখ্যক পোস্টাল ব্যালটের সদ্ব্যবহার না করলে সেই ভরাডুবির মাত্রা আরও মারাত্মক হতে পারতো বলে মনে করা হচ্ছে৷ কারণ নির্বাচনের ঠিক কয়েক দিন আগেই দুর্নীতির অভিযোগে দলের জনপ্রিয়তা আরও কমে গিয়েছিল৷
দ্বিতীয় কারণ বাকি দলগুলির ফলাফল৷ ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে জার্মানির আগামী সরকারে সবুজ দলের অংশগ্রহণ প্রায় নিশ্চিত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গে আবার প্রধান শরিক হিসেবে আগামী সরকারের নেতৃত্ব দেবে এই দল৷ কিন্তু রাইনলান্ড-প্যালেটিনেটে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি জয়ের বিরল জয় জার্মানির আগামী সরকারের মডেল হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন৷ সেখানে এসপিডি সবুজ দল ও উদারপন্থি এফডিপি দলের সঙ্গে সফলভাবে সরকার চালিয়ে আসছে৷ সেই জোটই কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মালু দ্রায়ার৷ বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গেও শেষ পর্যন্ত সেই মডেলে সরকার গঠন হলে আগামী সাধারণ নির্বাচনে এই ‘ট্রাফিক লাইট’ জোট ভোটারদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে ১৬ বছর পর বিরোধী আসনে বসতে হবে রক্ষণশীল সিডিইউ ও বাভেরিয়ার সিএসইউ শিবিরকে৷ সবুজ দলের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের জনপ্রিয় নেতা ভিনফ্রিড ক্রেচমানের সাফল্যের দৃষ্টান্ত আগামী চ্যান্সেলর বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে৷ সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেলে সবুজ দলের কোনো নেতা জার্মানির আগামী চ্যান্সেলর হতে পারেন৷
রাজ্য নির্বাচনে সিডিইউ দলের ভরাডুবির পর ম্যার্কেলের উত্তরসূরি বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও জটিল হয়ে উঠলো৷ সাধারণ নির্বাচনের ছয় মাস আগেও এমন শূন্যতা ইউনিয়ন দুর্বলতা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে৷ সিডিইউ দলের সদ্য নির্বাচিত প্রধান আরমিন লাশেট নির্বাচনে এমন বিপর্যয়ের ফলে নিজেকে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চাইবেন কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷ তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বাভেরিয়া রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডারও শেষ পর্যন্ত এমন দুর্বল রথের সারথী হতে চাইবেন কিনা, তাও স্পষ্ট নয়৷ সে ক্ষেত্রে ভোটারদের কাছে ম্যার্কেল-পরবর্তী ইউনিয়ন শিবিরের গ্রহণযোগ্যতা আরও কমে যেতে পারে৷
সিডিইউ দলের সাধারণ সম্পাদক পাউল সিমিয়াক দুই রাজ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেন, সরকারের করোনা সংকটের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মানুষের ক্রোধ বাড়ছে৷ এর কারণ বুঝতে না পেরে মানুষ ধৈর্য হারাচ্ছেন৷ দুর্নীতি কেলেঙ্কারি সেই বিতৃষ্ণায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছে৷ অন্যদিকে এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ওলাফ শলৎস অন্তত একটি রাজ্যে এসপিডি দলের সাফল্যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)