রাজপরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন হ্যারি-মেঘান
৮ মার্চ ২০২১ডাচেস অব সাসেক্স মেঘানের প্রতি ব্রিটেনের ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর আচরণের সমালোচনা করে ২০২০ সালের ব্রিটিশ রাজপরিবার ছেড়ে স্বাধীন জীবন যাপন শুরু করেন তারা৷ তারপর থেকে নানা কারণে খবরে এলেও রাজপরিবার সম্পর্কে কখনো সরাসরি কথা বলেননি হ্যারি এবং মেঘান৷ রবিবার প্রচারিত অপরাহ উইনফ্রো শো-তে অবশেষে চমকে দেয়ার মতো অনেক কথাই বললেন তারা৷
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেসিটো অঞ্চলের বাসিন্দা হ্যারি-মেঘান দম্পতি৷ সেই সুবাদে অপরাহ উইনফ্রের প্রতিবেশীও তারা৷
মেঘানকে নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ার লাগাতার খবর পরিবেশনের প্রসঙ্গে উঠে আসে বিয়ের অনুষ্ঠানে ডাচেস অব ক্যামব্রিজ কেট-কে বিয়ের অনুষ্ঠানে কাঁদানোর খবরের বিষয়টি৷ অভিযোগ অস্বীকার করে খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মেঘান৷ এ সময় অপরাহ-ও এমন কিছু শিরোনাম পড়ে শোনান যাতে কেট এবং মেঘানের বিষয়ে মিডিয়ার ‘দ্বৈত নীতি’ স্পষ্ট৷
তবে সাক্ষাৎকারভিত্তিক টেলিভিশন অনুষ্ঠানটির এবারের পর্বে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে রাজপরিবার সম্পর্কে মেঘান আর হ্যারির বক্তব্য৷
রাজপরিবারে বাক স্বাধীনতা
এক প্রশ্নের জবাবে মেঘান বলেন, রাজ পরিবার আর প্রতিষ্ঠানটিকে (রাজতন্ত্র) যারা চালান, তারা সম্পূর্ণ আলাদা দুটি সত্তা৷ তিনি জানান, তার প্রতি রানির আচরণ সবসময়ই খুব চমৎকার৷ তবে অপরাহ যখন জানতে চান রাজপরিবারে নীরব থাকতেন, নাকি নীরব থাকতে বাধ্য করা হতো, সরাসরি জবাব না দিয়ে মেঘান শুধু বলেন, ‘‘দ্বিতীয়টি৷’’
হ্যারি-মেঘানকে রক্ষায় নিষ্ক্রিয়তা
মেঘান দাবি করেন, ‘‘আমাকে আর আমার স্বামীকে রক্ষা করার জন্য সত্যি কথা বলার ইচ্ছা তাদের (রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের) ছিল না৷’’
এ সময় হ্যারি জানান, রাজপরিবার ছেড়ে আসার পর তার বাবা প্রিন্স চার্লসকে ফোন করলেও তিনি ধরতেন না৷ এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে আর তাই সন্তানের সঙ্গে বাবা ফোন করে আবার কথা বলেন বলেও জানিয়েছেন হ্যারি৷
এসব বিষয়ে হ্যারির অবশ্য কোনো অভিযোগ নেই৷ তিনি মনে করেন, তার বাবা এবং ভাই, অর্থাৎ প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্স উইলিয়াম আসলে ‘জালে আটকে গেছেন’৷
মা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন
হ্যারি মনে করেন, তার আর মেঘানের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তা দেখলে তার প্রয়াত মা, প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানা ‘‘খুব রেগে যেতেন, ভীষণ দুঃখ পেতেন৷’’ হ্যারি আরো জানান, ২০২০ সালে রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা কমিয়ে দেয়া হয়, তখন শুধু মায়ের উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্য টাকাটাই পেয়েছেন তিনি৷
রাজ পরিবারে বর্ণবাদ
রাজ পরিবারে পরোক্ষ বর্ণবাদের বিষয়টিও উঠে আসে মেঘানের কথায়৷ ডাচেস অব সাসেক্স জানান, প্রথম সন্তান কতটা কালো হতে পারে এ নিয়ে পরিবারের কেউ কেউ বেশ চিন্তায় ছিলেন৷ তবে তারা কারা তা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি৷ এ সময় অশ্বেতাঙ্গ পারিবারিক অতীতের কারণে ব্রিটিশ মিডিয়ায় তাকে নিয়ে যে ‘বর্ণবাদী প্রতিবেদন’ প্রকাশিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে পরিবারের কেউ কিছু না বলায় হতাশাও ঝরেছে মেঘানের কণ্ঠে৷
আত্মহত্যার দোরগোড়া থেকে ফেরা
রাজপরিবারে থাকার সময় ভয়ংকর চাপে মানসিকভাবে প্রায় ভেঙে পড়েছিলেন মেঘান৷ সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে জানান, এক সময় আত্মহত্যাই মনে হয়েছিল একমাত্র সমাধান, ‘‘আমি তখন আর বাঁচতে চাইছিলাম না৷’’ অপরাহ উইনফ্রে শো-তে মেঘান আরো জানান, তখন মানসিক স্বাস্থ্যের বিপর্যয়ের কথা জানিয়ে রাজপ্রাসাদের সহযোগিতাও চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু কেউ তার কথায় কান দেয়নি৷
এসিবি/কেএম (এএফপি, রয়টার্স)