1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাঙামাটিতে উচ্ছেদের ভয়

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১২ জানুয়ারি ২০১৫

রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন নিয়ে আতঙ্ক আর ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ শনিবার মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনের দিন এর বিরোধিতা করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ডাকা অবরোধের মধ্যে সংঘর্ষের জের এখনো চলছে৷

https://p.dw.com/p/1EIxJ
Bangladesh Ausschreitungen Streik
প্রতীকী চিত্রছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

জেলা প্রশাসন কারফিউ আর ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন৷ আর এরই মধ্যে অন্তত ৩৫ জন পাহাড়ি আদিবাসীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ গণগ্রেপ্তারের আশঙ্কায় আছেন পাহাড়িরা৷

‘‘রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে স্থানীয় মানুষের কোনো মতামত নেয়া হয়নি৷ আলোচনা করা হয়নি জেলা পরিষদ বা আঞ্চলিক পরিষদের৷ যা ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন৷ এখানে এই দু'টি প্রতিষ্ঠান হলে শত শত পাহাড়ি আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদ হবে৷ তারা তাদের ভিটে মাটি হারাবেন,'' – এই অভিযোগ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামটি জেলা সভাপতি বাচ্চু চাকমার৷

তিনি ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘আগেই আমরা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি, স্মারক লিপি দিয়েছি৷ তারপরও শনিবার মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনে সরকার অনড় থাকায় আমরা শান্তিপূর্ণ অবরোধের ডাক দেই৷ আর সেই কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে রাঙামাটিকে অশান্ত করে তোলে৷''

বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘আমরা এখন কারফিউ এবং ১৪৪ ধারার মধ্যে আছি৷ রবিবারের কারফিউ সোমবার সকাল ১১টায় তুলে নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ আবার সোমবার সন্ধ্যা থেকে কারফিউয়ের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন৷ এর মধ্যেই গ্রেপ্তার অভিযান চলছে৷ আমরা আশঙ্কা করছি যে কোনো সময় গণগ্রেপ্তার অভিযান শুরু হতে পারে৷'’

Indigene Völker in Bangladesch
আদিবাসীদের জীবন সহজ নয়ছবি: STR/AFP/Getty Images

শনিবার মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনের পরদিন রবিবার বিকেলে ১১৪ ধারার মধ্যেই রাঙামাটি বনরূপা বাজারে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷ জেলা প্রশাসন বলছে, নানা গুজব ছড়িয়ে এই সংঘর্ষে ইন্ধন দেয়া হয়৷ সংঘর্ষের সময় দোকানপাট ভাঙচুর এবং আগুন দেয়া হয়৷ পাহাড়িদের অভিযোগ, চার-পাঁচজন মুখোশ পরা বাঙালি যুবক বনরূপা বাজারের গিয়ে পাহাড়িদের মারধর শুরু করে৷ এ সময় পাহাড়িরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়৷ আর এরপরই কারফিউ-এর ঘোষণা আসে৷

কেন মেডিক্যাল কলেজের বিরোধিতা

রাঙামাটির সাংবাদিক ছত্রং চাকমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাহাড়ি আদিবাসীদের মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের বিরোধিতার মূল কারণ উচ্ছেদ আতঙ্ক৷ এখন রাঙামাটি শহরের জেনারেল হাসপাতালের পাশের একটি ভবনে অস্থায়ীভাবে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হলেও এর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে৷ আর তখন শত শত পরিবার উচ্ছেদ হবে৷'' তিনি জানান, ‘‘রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ আগেই শুরু হয়েছে৷ আর জমি অধিগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে রাঙামাটি শহরের কাছে ক্ষেত্তা এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন৷'' তিনি বলেন, ‘‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় এ ধরনের কোনো কাজ করতে হলে তা জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে করার বিধান থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি৷ ফলে পাহাড়িদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধছে৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘১৯৬০ সালে উন্নয়নের নামে শত শত পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের জমি, বাড়ি-ঘর হুকুম দখল করা হয়৷''

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামটি জেলা সভাপতি বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘রাঙামাটিতে ভালো কোনো প্রাইমারি বা হাই স্কুল নাই, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র খুবই করুন৷ হাসপাতালে চিকিৎসক নেই৷ নার্সিং ইন্সটিউট চলছে না৷ এসবের উন্নয়ন না করে কেন মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনের প্রয়োজন পড়ছে, তা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ আইনে এই দু'টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হলে তাতে পাহাড়িরা তেমন সুযোগ পাবেনা৷'' তিনি দাবি করেন, ‘‘এরই মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে৷ তার মধ্যে পাহাড়ি মাত্র ৪/৫ জন৷''

বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘আমরা কোনোভাবেই জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে পাশ কাটিয়ে রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে দেব না৷''

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে৷ আর এজন্যই কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ তিনি রবিবার বনরূপা বাজারের সংঘর্ষের পর নতুন করে কোনো হামলা বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান৷ তিনি আরও জানান, মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন সরকারের সিদ্ধান্ত এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই৷

শনিবার ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১ টি মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য