যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ বনাম দেশের স্বার্থ
২৭ জানুয়ারি ২০২২এর জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘আমরা যা করছি দেশের স্বার্থে করছি৷’’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, লবিস্ট নিয়োগ বেআইনি নয়, যুক্তরাষ্ট্রে এটা বৈধ৷ কিন্তু তার কথা, বিএনপি কোনো দলের বিরুদ্ধে এটা করতে পারে৷ কিন্তু তারা দেশের ক্ষতির জন্য করছে৷ এজন্য তিনি তাদের ধিক্কার জানান৷ তিনি সংসদে বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের আটটি উদাহরণ দেন ৷ এজন্য অর্থের পরিমাণও জানান৷ ফার্মের নামও উল্লেখ করেন৷
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমরা যা কিছু করি দেশকে রক্ষার জন্য করি, দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দেশকে করার জন্য করি৷’’
এই লবিস্ট বিতর্কে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মনে করেন, ‘‘এটা নিয়ে অযথাই বিতর্ক হচ্ছে৷ সারা দুনিয়ায়ই লবিস্ট নিয়োগের চল আছে৷ অ্যামেরিকায় তো আইনই আছে৷’’
তিনি জানান, ‘‘ব্যবসা-বাণিজ্য, কূটনৈতিক সম্পর্ক, রাজনীতি সখানেই লবিস্ট নিয়োগের প্রবণতা আছে৷ এটা রাষ্ট্র যেমন করে তেমনি রাজনৈতিক দল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সবাই করে তার স্বার্থের জন্য৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন করা হয় অন্যান্য দেশেও করা হয়৷’’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, বাংলাদেশে সরাসরি লবিস্ট বা লবিস্ট ফার্ম নেই৷ তবে কনসালটেন্ট আছেন৷ ফার্মও আছে৷ লবিস্ট নামে নেই৷ কিন্তু তাদের কাজের ধরন একই রকম৷ যুক্তরাষ্ট্রে আইনগতভাবেই লবিস্ট ফার্ম আছে৷ সেই ফার্মের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য কাজ করাতে পারেন৷ বাংলাদেশ থেকে যদি এই কাজের জন্য টাকা পাঠানো হয় তাহলে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করার আইনগত সুযোগ আছে৷ আর সেই দেশে যদি পেমেন্ট হয় তাহলে সেই অর্থ নিয়ে বাংলাদেশের আইনে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই৷
বাংলাদেশে এখন যে প্রশ্নটি উঠেছে তা হলে দেশের স্বার্থে এবং স্বার্থের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা৷ পরারাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন সরকারও লবিস্ট নিয়োগ করে৷ তবে তা দেশের স্বার্থে৷
এর জবাবে মনজিল মোরশেদ বলেন, দেশের স্বার্থ এবং দেশের স্বার্থ বিরোধী কথা দুইটি আপেক্ষিক৷ সরকার যেটাকে দেশের স্বার্থবিরোধী মনে করে, বিএনপি সেটাকে হয়তো দেশের পক্ষে মনে করে৷ তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যদি লবিস্ট নিয়োগ করে তারা কী উদ্দেশ্যে করবে? তারা বলবে দেশে গণতন্ত্র নাই৷ মানবাধিকার নাই৷ বাকস্বাধীনতা নাই৷ সরকার নিয়োগ করলে বলবে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা আছে৷ দেশের স্বার্থ বা দেশের স্বার্থবিরোধী এটা পলিটিক্যাল কথা৷ এটা আইনগতভাবে প্রমাণের কোনো বিষয় নেই৷’’
তবে বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ সরকার ছাড়া আর কারুর লবিস্ট নিয়োগের কোনো বিধান নেই বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের আইন ও প্রক্রিয়া আছে৷ বাংলাদেশের সরকার দেশের স্বার্থেই লবিস্ট নিয়োগ করবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি৷ সরকার লবিস্ট নিয়োগের কথা স্বীকারও করছে৷ তাহলে স্বচ্ছতার জন্য সরকারের স্পষ্ট করা উচিত কোথায় কোন খাত থেকে কত টাকা কোন কাজে লবিস্ট ফার্মকে দেয়া হচ্ছে৷ বাজেটেও সেটা উল্লেখ থাকবে৷’’
আর বিএনপিকে নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেটাও সরকারের প্রকাশ করা উচিত স্বচ্ছতার জন্য৷ তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যদি লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে সেটা দলীয় স্বার্থে করেছে৷ সরকার যেহেতু বলছে তাই তাদের এখন তথ্য প্রমাণ দেখানো উচিত৷ তারা কী উদ্দেশ্যে করেছে কীভাবে করেছে৷ আর বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকার বৈধ প্রক্রিয়ায় লবিস্ট-এর জন্য খরচ করতে পারে৷ কিন্তু বিএনপির সেই সুযোগ নাই৷ তাই বিএনপি যদি করে থাকে তাহলে তাদের উচিত হবে তারা কী প্রক্রিয়ায় কত টাকা খরচ করেছে তা প্রকাশ করা৷ এটা যদি অবৈধ প্রক্রিয়ায় হয় তাহলে কিন্তু মানি লন্ডারিং-এর ঝুঁকি আছে৷’’
দল হিসেবে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করতে পারবে কী না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার স্বচ্ছ ধারণা নেই৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রে করে থাকলে সেটা সেখানকার আইনে অবৈধ কিছু না৷ সেটাকে অবৈধ বলা কঠিন হবে৷ আমাদের দেশের আইনে কিছু বলা নাই৷ শুধু বলা আছে রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না৷ বিএনপি কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে টাকা পাঠাতে পারে না৷ কাজেই এখান থেকে টাকা গিয়ে থাকলে তা অবৈধভাবে গেছে৷ বিএনপির সেটা স্পষ্ট করা উচিত৷ সরকারেরও উচিত তার প্রকাশ করতে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করা৷’’
তিনি আরো বলেন, কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনে সেখানে লবিস্ট নিয়োগ করা যায়না৷
প্রসঙ্গত, র্যাব- পুলিশের সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর ডিসেম্বরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর এখন এই লবিস্ট বিতর্ক সামনে এসেছে৷