1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যশস্বীর যশে নয়া তারকার জন্ম ভারতীয় ক্রিকেটে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ভারতীয় ক্রিকেট পেল এক নতুন তারকাকে। মাত্র ২২ বছর বয়সে দ্বিশতরান করে চমকে দিলেন যশস্বী জয়সওয়াল।

https://p.dw.com/p/4c0VG
যশস্বীর ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে দেশ-বিদেশের ক্রিকেট তারকা থেকে ক্রীড়াপ্রেমীদের
যশস্বীর ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে দেশ-বিদেশের ক্রিকেট তারকা থেকে ক্রীড়াপ্রেমীদেরছবি: Francis Mascarenhas/REUTERS

অভিষেক টেস্ট ম্যাচে শতরান করে নজর কেড়েছিলেন যশস্বী। এবার ওপেনিং ব্যাটারের হাতযশে এল দ্বিশতরান।

যশস্বীর বিক্রম

দক্ষিণ ভারতের বিশাখাপত্তনমে চলছে ভারত ও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। এই ম্যাচে শুক্রবার ১৭৯ রানে অপরাজিত ছিলেন যশস্বী। শনিবার দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে তিনি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন।

এরপর একের পর এক ওভারে বাঁ হাতি যশস্বীর বিক্রম দেখল ক্রিকেট দুনিয়া৷ ফুলটস বলে চার মেরে ডবল সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১৯০ বলে ২০৯ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলেন। দ্বিশতরানের আগে আগে একটা ছক্কাও মারেন। শুক্রবার সেঞ্চুরি করেছিলেন মাঠের বাইরে বল পাঠিয়ে।

ডবল সেঞ্চুরি করার পর আর বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি যশস্বী। জেমস অ্যান্ডারসনের বলে ক্যাচ তুলে আউট হয়ে যান। তখন তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ২০৯ সংখ্যাটি। এই ইনিংস সাজানো ১৯টি চার ও সাতটি ছয় দিয়ে৷

উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা যশস্বী ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন মুম্বইয়ের হয়ে। ডিসেম্বরে ২২ পূর্ণ হয়েছে তার। ২২ বছর ৩৭ দিনে হল অফ ফেম-এ নাম লেখালেন তিনি। ভারতীয় দলের হয়ে তার তুলনায় কম বয়সে দ্বিশতরান করেছেন দুজন, সুনীল গাভাসকর ও বিনোদ কাম্বলি।

১৯৯৩ সালে ২১ বছর ৩৫ দিন বয়সে বিনোদ কাম্বলি ২২৪ রান করেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। পরপর দুটি দ্বিশতরান করেন তিনি। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে তিনি ২২৭ রান করেন ২১ বছর ৫৫ দিন বয়সে।

তার আগে এই নজির দীর্ঘদিন ছিল সুনীল গাভাসকরের দখলে। ২১ বছর ২৮৩ দিন বয়সে তিনি দ্বিশতরান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে, সেখানকার মাটিতেই।

শুভেচ্ছার বন্যা

যশস্বীর ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে দেশ-বিদেশের ক্রিকেট তারকা থেকে ক্রীড়াপ্রেমীদের। এক্স হ্যান্ডেলে শচীন তেণ্ডুলকর লেখেন, "যশস্বী ভব।” সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই টুইট।

ভারতীয় ব্যাটার শিখার ধাওয়ান লিখেছেন, "আপনার ব্যাট ম্যাজিক করেছে।" ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কেভিন পিটারসেন বলেছেন, "আন্তর্জাতিক খেলার দুনিয়ার অন্যতম সেরা ঘটনা।" সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার মহম্মদ কাইফ প্রশংসা করেছেন যশস্বীর ফুটওয়ার্কের।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মঞ্জরেকর বলেছেন, "জেমস অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে জয়সওয়ালের ব্যাটিং প্রমাণ করেছে, ও এখনই খুব পরিণত।" ভারতের সাবেক স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝার মন্তব্য, "যশস্বী যে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে, তা খুবই প্রশংসার যোগ্য।

ইংল্যান্ডের আর এক সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টেয়র কুক বলেছেন, "যখন দলের দরকার ছিল, তখন ঠিকঠাক পারফরম্যান্স দিয়েছেন জয়সওয়াল।"

সংগ্রামের পর সাফল্য

যশস্বীর সাফল্য শুধু ক্রিকেটার নয়, সব মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে। তার উঠে আসার পিছনে রয়েছে এক সংগ্রামের কাহিনী।

উত্তরপ্রদেশের বছর দশেকের ছেলেটি ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেটের ভক্ত। দরিদ্র পরিবারে মানুষ, বাবার ছিল একটি ছোট দোকান। তিনি ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার খরচ জোগাতে পারতেন না।

সেই লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে মুম্বইয়ে যান যশস্বী। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে কখনো দুধের দোকানে কাজ করেছেন, কখনো ফুচকা বা পকোড়া বিক্রি করেছেন। ক্রিকেটের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা ছেলেটির কোনো কাজেই মন বসত না।

ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। এবার নজির গড়ে ইতিহাসে নাম তুললেন যশস্বী
ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। এবার নজির গড়ে ইতিহাসে নাম তুললেন যশস্বীছবি: Francis Mascarenhas/REUTERS

ক্রিকেট মাঠেই আশ্রয় নেন তিনি। দিলীপ বেঙ্গসরকার ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখানেই দিনে অনুশীলন, বিকেলের পর দোকানদারি। একাডেমির তাঁবুতে একের পর এক রাত কেটেছে যশস্বীর।

হাতে তেমন টাকা না থাকায় রোজ ভরপেট খাবার জোটেনি। কিন্তু কিশোরের প্রতিভা ও নাছোড় মনোভাব ঘুরিয়ে দেয় তার জীবনের চাকা।

যশস্বীর পরিশ্রম শিক্ষণীয়: সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রথমে মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে নির্বাচিত হন যশস্বী। এরপর ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলার সুযোগ পান। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জয়সওয়াল ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। আইপিএলে মাঠে নেমেছেন রাজস্থান রয়েলস-এর।

ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। এবার নজির গড়ে ইতিহাসে নাম তুললেন যশস্বী। রঞ্জি ট্রফি জয়ী বাংলা দলের সাবেক অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "শুধু ২০০ রান করেছে বলে বলছি না। ও যেভাবে খেলেছে, তাতে বলতে পারি, ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেক দিন সমৃদ্ধ করবে। যে সততা, একাগ্রতা, পরিশ্রমে যশস্বী এতদূর এসেছে, তা সবার কাছে শিক্ষণীয়।"