ম্যার্কেলকে আবার চ্যান্সেলর দেখতে চান জার্মানরা
১৪ জুন ২০১৭মধ্যপ্রাচ্যে একটানা রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে তুরস্ক৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দৃশ্যত দিনের পর দিন পশ্চিমের যৌথ মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন৷ এই পরিস্থিতিতে জার্মানরা আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে চ্যান্সেলর হিসেবে পেয়ে দৃশ্যত খুশি৷ ইনফ্রাটেস্ট-ডিমাপ জরিপ সংস্থা ও জার্মানির সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এআরডি-র সাম্প্রতিক একটি জরিপে এ কথা জানা গিয়েছে৷
জরিপ অনুযায়ী, ম্যার্কেলের ‘অ্যাপ্রুভাল রেটিং' বা অনুমোদনের অনুপাত ২০১৫ সালের হেমন্তে উদ্বাস্তু সংকট শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ প্রধানত সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে আগত প্রায় নয় লাখ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে জার্মানিতে স্বাগত জানানোর পর ম্যার্কেলের জনপ্রিয়তা অতলে নেমেছিল৷ কিন্তু এখন জার্মানদের ৬৪ শতাংশ চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেলের কর্মদক্ষতায় সন্তুষ্ট, যার অর্থ, ম্যার্কেল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ৷ এ সপ্তাহের সূচনায় ১,৫০০ জন বাছাই করা নাগরিককে প্রশ্ন করে এই সিদ্ধান্তে আসা হয়৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেল: সিডিইউ দলের সাফল্যের চাবিকাঠি
সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের বদলে যদি তাদের আজ ভোট দিতে হয়, তবে তারা কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন – এ প্রশ্নের উত্তরে ৩৮ শতাংশ জার্মান বলেছেন, তারা সিডিইউ বা তার বাভেরীয় সংস্করণ সিএসইউ দলকে ভোট দেবেন৷ সে তুলনায় এসপিডি দলের সমর্থন ২৪ শতাংশ ছাড়াতে পারেনি৷ এক্ষেত্রে মার্টিন শুলৎসের তুলনায় ম্যার্কেলের জনপ্রিয়তা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷ আরেকটি বিকাশধারায় উদারপন্থি এফডিপি দলের জনসমর্থন বেড়ে ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে – যদিও মুক্ত গণতন্ত্রীরা গত সাড়ে তিন বছর ধরে জার্মান সংসদে অনুপস্থিত৷
অভিবাসনবিরোধী দলগুলি জনপ্রিয় নয়
জরিপে বর্তমান দুই বিরোধী দল, বাম ও সবুজদের জনসমর্থন যথাক্রমে আট ও সাত শতাংশ৷ এর একটা কারণ সম্ভবত এই যে, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার সময় ভোটাররা সাধারণত ক্ষমতাসীন সরকারের উপরেই নির্ভর করে থাকেন৷
জার্মানির জন্য বিকল্প, অর্থাৎ এএফডি আদতে একটি অভিবাসন বিরোধী ‘পপুলিস্ট' দল৷ এই নতুন জরিপে তারা নয় শতাংশ সমর্থন পেয়েছে৷ অর্থাৎ এএফডি যে বুন্ডেসটাগে কিছু আসন পাবে, তা নিশ্চয় করে বলা যায়, যদিও তাদের জনপ্রিয়তা ইউরোপের অন্যান্য পপুলিস্ট দল – যেমন ফ্রান্সের ফ্রঁ নাসিনাল বা ন্যাশনাল ফ্রন্টের তুলনায় অনেক কম৷
এসপিডি-র ওঠানামা
ইউরোপীয় সংসদের সাবেক অধ্যক্ষ মার্টিন শুলৎস এ বছরের গোড়ায় কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই এসিপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করে৷ গত মার্চে একটি দলীয় সম্মেলনে তিনি প্রতিনিধিদের ১০০ শতাংশ সমর্থন পেয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেন৷ শুলৎস দলপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর দশ হাজারের বেশি নতুন সদস্য এসপিডি-তে যোগদান করেছেন, বলে প্রকাশ৷ পাশাপাশি এসপিডি দলের জনসমর্থনও বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে ম্যার্কেলের সিডিইউ দলকে ছাড়িয়ে যায়৷
কিন্তু শুলৎসের জনপ্রিয়তা হঠাৎই পড়তে শুরু করে৷ অপরদিকে ম্যার্কেল ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ও ইটালিতে জি-সেভেন শীর্ষবৈঠক উপলক্ষ্যে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ আজ এসপিডি দলের জনসমর্থন সিডিইউ দলের চেয়ে ১৪ শতাংশ পিছিয়ে; জার্মানদের মাত্র ৩৬ শতাংশের মতে শুলৎস প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছেন৷
ট্রাম্প ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন সংশয়
জরিপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি জার্মানদের মনোভাব সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ উত্তরদাতাদের মাত্র পাঁচ শতাংশ বলেছেন যে, তাঁরা নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপর আস্থা রাখেন৷ মাত্র ২১ শতাংশের মতে, দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আস্থাভাজন – যদিও অতীতে দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে বিবেচনা করা হয়ে এসেছে৷ প্রসঙ্গত, ঐ একই পরিমাণ জার্মান, অর্থাৎ ২১ শতাংশ রাশিয়াকে আস্থাভাজন বলে বিবেচনা করেন৷ সেক্ষেত্রে এমানুয়েল মাক্রোঁ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর এই জরিপে উত্তরদাতাদের ৯৪ শতাংশ বলেছেন যে, তারা ফ্রান্সের উপর আস্থা রাখেন৷
ইয়েন্স থুরাও/এসি