মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নেই!
২৯ জানুয়ারি ২০১৬ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কয়েকটি মন্দিরে প্রাচীন প্রথার নামে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মেয়েদের এখনও মন্দিরে ঢোকা বারণ৷ মন্দিরে কেন মেয়েদের প্রবেশাধিকার থাকবে না – তাই নিয়ে সম্প্রতি নারীবাদী সংগঠনগুলি আন্দোলন শুরু করেছে৷ গত মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার সুপা গ্রামে কয়েক'শ মহিলা মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁদের বাধা দিলে তাঁরা মন্দিরের সামনেই ধর্ণা দেন৷ জানতে চান কোন যুক্তিতে তাঁদের মন্দিরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না, রাজ্যের বিজেপি সরকারের পুলিশ, প্রশাসন কেন না দেখার ভান করে আছে? মন্দির কর্তৃপক্ষ বলেন, ৪০০ বছরের প্রাচীন এই মন্দিরে যেহেতু এই প্রথাই চলে আসছে৷ ধর্মীয় বিশ্বাস, মেয়েরা শনি দেবতার মন্দিরে ঢুকলে শনি বিগ্রহের বেদী থেকে এক অশুভ কম্পন ওঠে৷ তা সংসার ও সমাজের ক্ষতি ডেকে আনে৷ কারণ শাস্ত্র মতে শনিদেবতা অশুভ শক্তির প্রতীক, এমনটাই সংস্কার জানায় মন্দির কর্তৃপক্ষ৷ মহারাষ্ট্রের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি আলোচনার পক্ষপাতি৷
ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এটা একটা যুগপ্রাচীন কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়৷ প্রশ্ন হচ্ছে, এইসব ইস্যু এখন কেন মাথা তুলছে? এর পেছনে আছে মৌল হিন্দুত্ববাদীদের ভূমিকা৷ হিন্দু জাতীয়তাবাদে গো-মাংস ভক্ষণের মতো এটাও অসহিষ্ণুতার অন্য মুখ৷ এ পেছনে ধর্মশাস্ত্রের কোনো বিধান নেই৷ বেদ, উপনিষদ, গীতাতে মেয়েদের মন্দিরে ঢোকার ওপর নিষেধ আছে, এমন কথা লেখা নেই৷ এটা অ-সাংবিধানিকই নয় অ-মানবিকও৷ আইন করে এটা বন্ধ করা উচিত৷ ভারতে সেই আইন অন্য সব ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে৷ মুসলিম ব্যক্তিগত আইন বলে ছাড় দেয়া হবে না৷ সর্বোপরি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এটা লিঙ্গ-বৈষম্যের এক নগ্নরূপ৷ নারী শিক্ষা ও সচেতনতার যুগে এটা আর চলতে পারে না৷ নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের দাদু শাস্ত্রবিদ ক্ষিতিমোহন সেনের লেখাতে হিন্দুধর্মকে এক সংস্কৃতি হিসেবেই দেখানো হয়েছে৷ অমর্ত্য সেন নাকি তাঁর দাদুকে বলেছিলেন, তিনি হিন্দু নন, কারণ তিনি নাস্তিক৷ উত্তরে তাঁর দাদু বলেছিলেন, হিন্দুধর্মে আস্তিক ও নাস্তিক সকলেরই জায়গা আছে৷ কথা প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে এ কথা বলেন, সমাজবিজ্ঞানী বুদ্ধদেব ঘোষ৷
দক্ষিণী রাজ্য কেরালার বিখ্যাত সবরীমালা মন্দিরে বছরে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়, সেখানে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিয়ে ভারতের ইয়াং ল-ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে এক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করায় তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়৷ সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারকের এক বেঞ্চ মন্তব্য করেন, ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই৷ এরসঙ্গে জড়িত সাংবিধানিক অধিকারের প্রশ্ন৷ মন্দিরে ঢোকা বা না ঢোকা একজন মহিলার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, সেটা আটকাবার যুক্তি কি তা জানতে চাইবে আদালত৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুম্বই হাইকোর্ট এই প্রসঙ্গে মুম্বইয়ের হাজি আলি দরগায় মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
আসল কথা হচ্ছে, মন্দিরে মেয়েদের ঢোকার অনুমতি চেয়ে যে লড়াই তার সাফল্য নির্ভর করছে এই আন্দোলন কতটা তীব্র এবং ব্যাপক৷ এই লড়াইয়ে সমাজের বৃহত্তর অংশ এবং রাজনৈতিক দলগুলি যতক্ষণ না যোগ দিচ্ছে, ততক্ষণ এই সংগ্রাম কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সীমাবদ্ধ থেকে যাবে৷ সমাজের রক্ষণশীলতার অচলায়তন দু-একদিনে ভাঙা যাবে না, লড়ে যেতে হবে লাগাতার৷ তবেই সতীদাহ প্রথা, বিধবাবিবাহ প্রথা বা দেবদাসী প্রথার মতো তথাকথিত পুরানো ঐতিহ্য ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে৷
বন্ধুরা, আপনি কি মন্দির অথবা মসজিদে নারীর অবাধ প্রবেশাধিকারের পক্ষে? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷