দেবদাসী প্রথা কী এবং কেন?
১৩ জানুয়ারি ২০১৬শত শত বছর ধরে ভারতীয় মন্দিরগুলোতে চলে আসছে দেবদাসী নামে এই ধর্মীয় প্রথা৷ আসলে এ প্রথা ধর্মের তকমা দিয়ে পুরুষপ্রধান সমাজে নারীকে যৌন শোষণ করার আর একটি প্রক্রিয়া মাত্র৷
মেয়ে যেভাবে মন্দির-গণিকা হয়ে যায়
গরিব ঘরের নীচু জাতের মা-বাবা তাদের কুমারী মেয়েকে ঋতুমতী হবার আগেই নিয়ে যায় মন্দিরে৷ প্রথমে কুমারী মেয়েদের নিলাম করা হয়৷ তারপর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত উৎসর্গ করার নামে বিগ্রহের সঙ্গে কুমারী মেয়েদের তথাকথিত বিয়ে দিয়ে দেন৷ বিয়ের পর গরিব ঘরের সেই মেয়ে হয়ে যায় দেবদাসী বা যোগিনী, আক্ষরিক অর্থে সেবাদাসী৷ অর্থাৎ এরপর অন্য কোনো পুরুষকে মেয়েটির বিবাহ করতে পারে না৷ বরং খাওয়া-পরার বিনিময়ে মন্দিরে থেকেই তাদের সারা জীবন কাটে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত থেকে শুরু করে অন্যান্য পুরুষদের যৌন লালসার শিকার হয়ে৷ অনেক সময় সমাজের উচ্চবর্গীয় ধনী কিংবা সামন্ত প্রভুদের রক্ষিতার ভূমিকাও পালন করতে হয় তাকে৷ করতে হয় কায়িক পরিশ্রমও৷ বলা বাহুল্য, উৎসর্গের পর দেবদাসীকে ভোগ করার প্রথম অধিকার থাকে মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের হাতে৷
আইন হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি
১৯৮৮ সালে দেবদাসী প্রথা নিষিদ্ধ করা হলেও, এখনও তা বন্ধ হয়নি৷ বিশেষ করে ভারতের দক্ষিণী রাজ্যগুলিতে এবং মহারাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলের মন্দিরগুলিতে এই প্রথা আজও চলছে৷ খুব সম্প্রতি তার প্রমাণও পাওয়া গেছে৷ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে জবাবদিহি করতে বলার পর, ৮০-র দশকের সেই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে পালন করার জন্য রাজ্য সরকারগুলির কাছে নির্দেশিকা পাঠায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদপ্তর৷ নির্দেশিকায় বলা হয় – কোনো অজুহাত বা ধর্মীয় ছদ্মনামে এ প্রথা যেন আর চালানো না হয়৷ আর এর জন্য বিশেষ অভিযান চালিয়ে জীবিত দেবদাসীদের খুঁজে বের করে তাদের পুনর্বাসনের কথাও বলা হয়৷ বলা হয়, এই কাজে বিভিন্ন বেসরকারি বা স্বয়ংসেবী সংস্থাগুলোরও সাহায্য নেয়া হতে পারে৷
সমাজবিদদের মতে, দেবদাসী প্রথার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে৷ যেমন ধর্মীয় বিশ্বাস ও কুসংস্কার, জাতিভেদ, পুরুষতান্ত্রিকতা, যৌন শোষণ এবং দারিদ্র্য৷ অনেকে আবার ভারতে বৌদ্ধধর্মের পতনের সঙ্গে দেবদাসী প্রথাকে যুক্ত করতে চান৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অতীতে জমিদার বা ভূস্বামীদের সঙ্গে উচ্চবর্গীয় ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের অশুভ ষড়যন্ত্রের ফলে নীচু জাতের খুব গরিব মেয়েদের দেবদাসী বানানো হতো৷ পরে এরা যাথারীতি যৌন লালসার শিকার হতো, এমনকি শেষ পর্যন্ত অনেকের ঠিকানা হতো যৌনপল্লিতে৷ সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যায়, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রের কিছু এলাকায় আজও রয়েছে অন্ততপক্ষে ৩৫ হাজার দেবদাসী৷ এদের মধ্যে যৌবন-উত্তীর্ণ অনেকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা শোচনীয়৷ এদের অনেকেই আজ রাস্তার ভিখারি৷ রূপ-যৌবন হারানোর পর, এদের যেন কোথাও ঠাঁই নেই – না মন্দিরে, না ধনীদের ঘরে৷