মোদী অতিথি হলে বঙ্গবন্ধুরও অসম্মান
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০আগামী ১৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে বাংলাদেশ৷ সেদিন বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসবেন বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব৷ ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ জায়েদ আল নাহিয়ান, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেস দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন-সহ অনেকেই থাকবেন সেদিনের অনুষ্ঠানে৷
তবে সেদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা তাদের কেউ নন৷ বাংলাদেশ সরকার সেই সম্মান দিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে৷
এমন সম্মান কি মোদীর প্রাপ্য? তার মুখের প্রশংসা কি বঙ্গবন্ধুর সম্মান সামান্য পরিমাণেও বাড়াবে?
বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই সম্মান মোদী পেতেই পারেন৷ শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের সম্পর্কও খুব ভালো৷ তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ও জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) নিয়ে ভারত উত্তপ্ত হওয়ার পর থেকে দৃশ্যত বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ৷
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর তিন দিনের ভারত সফর বাতিলের ঘোষণা দিয়ে ভারতকে হয়ত সেরকম বার্তাই দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন৷সফর বাতিলের কারণ হিসেবে অবশ্য সিএএ, এনআরসি বা এনপিআর-এর কথা বলা হয়নি৷ ভারত সরকারও সফর বাতিলের সিদ্ধান্তে কড়া কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷
বরং গত ৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মোদীকে প্রধান বক্তা করার ঘোষণা আসে৷
হতে পারে, স্রেফ ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক' বজায় রাখার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু সিএএ কার্যকর হলে প্রকৃত অর্থে বন্ধুত্ব কি আদৌ থাকবে? থাকা সম্ভব?
এনআরসি নিয়ে আপাতত চুপ হয়ে গেলেও সিএএ নিয়ে কিন্তু অনড় অবস্থানেই আছে মোদীর দল ও সরকার৷ তাদের তরফ থেকে সরাসরিই বলা হচ্ছে, সিএএ কার্যকর হবে এবং পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে যাওয়া সব মুসলমানকে ভারতছাড়া করা হবে৷
নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল বলে একরাতে ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করেছে মোদী সরকার৷ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তাই শুধু ভারতের পতাকাই উড়ছে৷ তবে এখনো অঘোষিত কারফিউ চলছে সেখানে৷ প্রথম সারির বিরোধী নেতাদের অনেকেই এখনো কার্যত বন্দি৷
কাশ্মীরের অবস্থা দেখে সিএএ নিয়েও শঙ্কা জাগে৷
রাজধানী দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে দীর্ঘদিন সিএএবিরোধী আন্দোলন চললেও মোদী সরকার কিন্তু একচুলও সরেনি৷বরং দিল্লিতে দাঙ্গা হতে দিয়ে সিএএ-র প্রতি সমর্থনই প্রকাশ করেছে নগ্নভাবে৷ অনেক জায়গায় পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে৷ এ পর্যন্ত ২৩ জন মানুষ মরেছে, জ্বলেছে অনেক গাড়ি-বাড়ি, দোকানপাট৷ কিন্তু প্রথম দু' দিন মোদী ছিলেন নীরব৷
অবশেষে আজ মুখ খুলেছেন নরেন্দ্র মোদী৷ ২৩ জন মানুষের মৃত্যুর পর দিল্লিতে শান্তি ফেরাতে তার এই মুখ খোলা কতটা আন্তরিক, দিল্লিতে দ্রুত শান্তি ফিরবে কিনা, তা বুঝতে সময় লাগবে না৷ তবে দিল্লি শান্ত হলেই ভারত যে শান্ত হয়ে যাবে, বা মোদী সরকার সিএএ এবং এনআরসি প্রত্যাহার করে নেবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই৷
আন্তর্জাতিক চাপ না থাকলে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তা হয়ত করেই ছাড়বে মোদী সরকার৷
এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে মোদীকে প্রধান বক্তা করলে সারা বিশ্বে ভুল বার্তা যাবে৷ মোদীর হাতকে করা হবে শক্তিশালী৷ গুজরাট দাঙ্গার জন্য যাকে ‘দায়ী’ করা হয়, যার নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষতার দেশ ভারত ধীরে ধীরে হিন্দুরাষ্ট্র হতে চলেছে, তার হাত শক্তিশালী করা বঙ্গবন্ধুর জন্য অসম্মানজনক, সার্বিক বিচারে বাংলাদেশের জন্যও ক্ষতিকর৷