কে এই যোগী আদিত্যনাথ?
২১ মার্চ ২০১৭বিজেপির হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যেতে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে যোগী আদিত্যনাথকে সবথেকে যোগ্য ব্যক্তি বলে মনে করেছে বিজেপি নেতৃত্ব৷ অথচ রাজ্য বিধানসভার ভোটে তিন-চতুর্থাংশ আসন পাওয়ার পর, প্রথমদিকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর তালিকায় আদিত্যনাথের নাম ছিল না৷ নির্বাচনি প্রচারকালেও মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভাব্য নাম শোনা যায়নি৷ তাহলে কীভাবে হঠাৎ তিনি একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পদে উঠে এলেন?
আদতে যোগী আদিত্যনাথ প্রথম থেকেই কট্টরপন্থি হিন্দু সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচএস) এবং হিন্দু যুব বাহিনীর বড় মাপের এক ব্যক্তিত্ব৷ তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বিজেপি নেতৃত্বের ওপর চাপ আসে তাদের কাছ থেকেই৷ সহজেই অনুমেয় যে, মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে সেটা মেনে নিতে হয়৷ এছাড়া যে পথ ছিল না৷ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগী আদিত্যনাথের পরনে ছিল হিন্দুত্বাদের প্রতীক, অতিপরিচিত গৈরিক বসন৷ রাজ্যে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে গোটা দেশে ২০১৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে গৈরিক ঝড় তোলার ইংগিত কি তবে এটা? অনেকের মতে তাই৷ এর অর্থ ধর্মীয় মেরুকরণ ত্বরান্বিত করা৷
প্রশ্ন হলো, এ ঘটনা কি তবে ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার যবনিকা পতন? রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী অবশ্য সেটা মনে করেন না৷ ডয়চে ভেলেকে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নগ্নভাবে ধর্মীয় মেরুকরণ হয় না৷ হলে সেটা হবে হাল্কাভাবে৷ আদিত্যনাথ উগ্র হিন্দুত্বাবাদী হয়েও মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেছে৷ তার মানে তিনিও একদিকে মোদীর উন্নয়নের বার্তা, নেতৃত্ব ও বাগ্মিতা এবং অন্যদিকে নরম মেরুকরণের মধ্যে সমন্বয়সাধনের পথেই হাঁটবেন৷
রামমন্দির ইস্যু সম্পর্কে অধ্যাপক চক্রবর্তী মনে করেন, সেটা ধামা চাপা পড়ে যাবে৷ তবে এ নিয়ে দলের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে৷ বিরোধীরা উসকানি দিতে পারে যে, ক্ষমতায় আসার আগে রামমন্দির নিয়ে হৈচৈ করলে আর ক্ষমতায় এসে চুপ করে গেলে? তাই রামমন্দির ইস্যু যদি আদৌ মাথা চাড়া দেয়, তাহলে সেটা ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে নয়৷
মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার পর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে কিন্তু আদিত্যনাথ সে পথ মাড়াননি৷ মোদীর প্রচারিত বিকাশ অ্যাজেন্ডাকেই তুলে ধরেছেন তিনি৷ জোর দিয়েছেন মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' স্লোগানে৷ তুলে ধরেছেন ধর্মীয় অভিন্নতার ভিত্তিতে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলা, কৃষি, দলিত স্বার্থের কথা৷ আর এভাবেই চেপে গেছেন অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণ বা কবরস্থান-শ্বশ্মানের বিতর্কিত প্রসঙ্গ৷ পর্যবেক্ষকদের মতে, সম্ভবত নিজের সাম্প্রদায়িক বিশ্বাসের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করেছেন তিনি৷
কিন্তু কে এই যোগী আদিত্যনাথ? রাজনৈতিক জীবনের প্রথম থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে আদিত্যনাথের সাম্প্রদায়িক মন্তব্য চিরদিনই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল৷ তা সে লাভ জেহাদ, গো-সংরক্ষণ, জোর করে ধর্মান্তকরণ, তিন তালাক কিংবা কবরস্থান বনাম শ্বশ্মানই হোক না কেন৷ এর জন্য তাঁকে একবার জেলও খাটতে হয়েছে৷ এমনকি এখনও তাঁর বিরুদ্ধে দু-দু'টো মামলা ঝুলছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রাজেশ সিং মনে করেন, যোগী আদিত্যনাথ কঠোর পরিশ্রমী, সত্যনিষ্ঠ ও সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার মধ্যে৷ তাই রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম তিনি৷ আর যদি উগ্র কথাবার্তায় লাগাম দিতে পারেন এবং ‘রণং দেহি' মনোভাব ঝেড়ে ফেলতে পারেন, তাহলে তিনিই উত্তর প্রদেশের বিকাশপুরুষ হয়ে উঠতে পারেন৷
নতুন মুখ্যমন্ত্রী দু'জন উপ-মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন ইতিমধ্যেই৷ একজন দলিত সম্প্রদায়ের এবং একজন উচ্চবর্ণের৷ উদ্দেশ্য ভোট ব্যাংক ধরে রাখা৷ ১৯৯৮ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে পূর্ব-উত্তর প্রদেশের গোরখপুর সংসদীয় আসনে প্রথম নির্বাচিত হন আদিত্যনাথ৷ তারপর থেকে সেই আসনেই এক নাগাড়ে পাঁচবার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি৷ শুধু তাই ন, ঐ অঞ্চলের মোদীর সমান্তরাল রাজনৈতিক শক্তির এক ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠেন আদিত্যনাথ৷ মোদী এবং আদিত্যনাথের মধ্যে এক প্রচ্ছন্ন অহংবোধ কাজ করেছে বলে নাকি মোদী মন্ত্রিসভায় তাঁর স্থান হয়নি – এমনটা ধারণা অনেকেরই৷ শিক্ষাগত যোগ্যতায় আদিত্যনাথ বিজ্ঞানে স্নাতক৷ জন্ম উত্তরাখণ্ডের এক গ্রামে৷ প্রসঙ্গত, সে সময় উত্তরাখণ্ড ছিল উত্তর প্রদেশের অঙ্গ, এখন অবশ্য পৃথক রাজ্য৷
একজন যোগীর একটি গণতান্ত্রিক দেশে মুখ্যমন্ত্রী হওয়াটাকে কি আপনি সমর্থন করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷