মানুষ পাচারের স্বর্গ জার্মানি?
১০ এপ্রিল ২০১৩জার্মানি ও জার্মানরা আইন মেনে চলার ব্যাপারে খুবই সতর্ক এবং অন্যদেরও নিয়মিত সতর্ক করে দিয়ে থাকে – দুনিয়ার লোক তা'ই জানে৷ কেবল একটি ক্ষেত্রে দৃশ্যত সেটা খাটে না৷ মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে৷ ইইউ'এর নির্দেশগুলি জার্মানিতে বাস্তবায়িত করতে বড় বেশি সময় লাগে৷ মানুষ পাচার রোধ সংক্রান্ত ইউরোপীয় নির্দেশাবলী ৫ই এপ্রিল, ২০১৩'র মধ্যে জাতীয় আইনে পরিণত হবার কথা ছিল৷ সে তারিখ পার হয়ে গেছে, কিন্তু আইন এখনও প্রণীত হয়নি৷
তার কারণ ইইউ'এর নির্দেশাবলীর বাস্তবায়ন নিয়ে জার্মানিতে বিতর্ক৷ আইন মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় নাকি ইইউ'এর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়৷ কিন্তু বিভিন্ন সাংসদদের ধারণা হল, মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দলের নেতৃত্বাধীন ফেডারাল আইন দপ্তর ভিক্ষুকবৃত্তি, পকেটমারি কিংবা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য মানুষ পাচারের ঘটনাগুলিকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে চলেছে৷ কিন্তু যৌন অপব্যবহার এবং শোষণের জন্য মানুষ পাচার পূর্বাপর সেই আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে৷
গণিকাবৃত্তির জন্য মানুষ পাচার
রোমানিয়া থেকে কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীকে জার্মানিতে এনে তাকে গণিকাবৃত্তিতে বাধ্য করাটা যৌন অপব্যবহার এবং শোষণের অপরাধ হতে পারে, কিন্তু মানুষ পাচারের অপরাধ নয়, যার দণ্ড অনেক বেশি৷ এর কারণ হল, অপরাধের সাক্ষ্য-প্রমাণ দাখিল করার দায়িত্ব বাদিপক্ষের, অর্থাৎ যারা মানুষ পাচারের শিকার হয়েছে, তাদের৷ সেটা তারা অনেক সময়েই ভীতি থেকে করে না; কিংবা জবানবন্দি দিলেও শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করে৷
প্রতি বছর এক লাখ বিশ হাজার থেকে পাঁচ লাখের মতো নারী মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে পশ্চিম ইউরোপে পাচার করা হয় এবং গণিকা হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়, বলে ওইসিডি'র অনুমান৷ তাদের মধ্যে অনেকেই আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ মুশকিল এই যে, এই সব তরুণী-কিশোরীরা পুলিশের কাছে ধরা পড়লে, তারা নিজেরা যে বে-আইনিভাবে জার্মানিতে প্রবেশ করেছে, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়৷
ইউনিসেফ জার্মানির মুখপাত্র রুডি টার্নেডেন মনে করেন, মানুষ পাচারের ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা জোরদার করলে জার্মানির কড়া বহিরাগত আইন কিছুটা ঢিলে হয়ে যাবে, এই হল জার্মান সরকারের আশঙ্কা৷