1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উগান্ডার মানুষখেকো কুমির

২২ মে ২০১৪

আফ্রিকার দেশ উগান্ডার জলাশয়গুলোতে মাছের পরিমাণ দিন দিন কমতে থাকায় মাছের বদলে মানুষ শিকারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে সেখানকার নদী আর হ্রদের কুমির৷ কেবল ২০১৩ সালেই কুমিরের হামলার শিকার হয়েছেন ৩১ জন৷

https://p.dw.com/p/1C3vc
Bildergalerie Yasuni Nationalpark im ecuadorianischen Amazonasdschungel
ছবি: Pablo Cozzaglio/AFP/Getty Images

দেশটির বন্যপ্রাণী বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, লেক ভিক্টোরিয়া, লেক আলবার্ট, লেক কিয়োগা এবং নীল নদের তীরে গত ১৪ বছরে নাকি অন্তত ৩৪০ জন মানুষ কুমিরের পেটে গেছে৷

সরকারি এ সংস্থার পরিচালক পিটার ওগওয়াং জানান, উগান্ডা আফ্রিকার স্বাদু পানির মাছের সবচেয়ে বড় উৎস হলেও অতি মাত্রায় মৎস্য আহরণের কারণে নদী ও হ্রদগুলোতে মাছের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে এসেছে৷ এতে কুমিরের খাবারেও টান পড়েছে৷ কিন্তু হ্রদ ও নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে মনুষ্যবসতি দিন দিন বাড়ছে৷ ফলে কুমিরেরা সহজ পথটাই বেছে নিচ্ছে৷

‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু এলাকায় কুমিরেরা আর মাছ ধরার চেষ্টা করছে না৷ বরং তাঁদের চোখ থাকছে জেলে এবং তীরের কাছাকাছি মানুষের ওপর৷ কুমির একবার কোনো মুনষ্য শিকার পেয়ে গেলে বাকিরাও ভোজে যোগ দিচ্ছে৷''

লেক ভিক্টোরিয়ায় মাছ ধরতে গিয়ে একদিন এভাবেই আক্রান্ত হয়েছিলেন স্থানীয় জেলে করিম ওনেই৷ সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে হ্রদের পানিতে কুমিরের ভাসমান পিঠ দেখে তিনি ভেবেছিলেন জলজ আগাছার স্তূপ৷ কিন্তু সেটাই হঠাৎ কুমিরের চেহারা নিয়ে তাঁর হাত কামড়ে ধরে এবং টেনে পানিতে নিয়ে যায়৷

‘‘তখন আমি মরিয়া হয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি৷ কিন্তু কুমির আমাকে কিছুতেই ছাড়ে না...৷ এক পর্যায়ে আমার চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে বৈঠা আর লাঠি দিয়ে পেটানো শুরু করলে কুমিরটা আমাকে ছেড়ে পানিতে ডুব দেয়৷''

Leistenkrokodil
উগান্ডায় ২০১৩ সালে কুমিরের হামলার শিকার হয়েছেন ৩১ জনছবি: imago/imagebroker

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ওই ঘটনায় একটি হাত হারাতে হয়েছে ৪০ বছর বয়সি করিমকে৷ সেই সঙ্গে ছাড়তে হয়েছে মাছ ধরার পেশা৷ তাঁর বুক আর কাঁধে কুমিরের ধারালো নখের চিহ্ন যে কাউকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে৷ করিমের ছোট ভাই জাকে কিজতোকেও দুটো হাত হারাতে হয়েছে কুমিরের হামলায়৷

কামপালার ৯৫ কিলোমিটার পূর্বে ভাইরাকা এলাকার জেলে হেনরি নিয়াজি বলেন, ‘‘এই কুমিরেরা খুবই ধূর্ত, তাদের গতিও সাংঘাতিক৷ সাধারণত সন্ধ্যা, মধ্যরাত আর ভোরের আগে আগে এরা হামলা চালায়, যখন চারদিন একেবারে সুনসান থাকে৷

তবে বিকেল বেলায় লেক ভিক্টোরিয়ার ওপর দিয়ে যখন গা জুড়ানো ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়, তখনো হ্রদের তীরে মরচে ধরা টিনের ঘরে জেলেদের মনে থাকে কুমিরের ভয়৷

পূর্ব আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত এই দেশে কুমিরের সংখ্যা কত তার সঠিক কোনো হিসাব নেই৷ তবে কেবল লেক আলবার্টেই অন্তত ৬০০ কুমির আছে বলে বন্যপ্রাণী বিভাগের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে৷

২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭৯টি মানুষখেকো কুমির ধরে ন্যাশনাল গেম পার্কে সরিয়ে নিয়েছেন বন্যপ্রাণী বিভাগের কর্মীরা৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ধরা হয় ২০০৫ সালে, যার ওজন ছিল প্রায় এক টন৷ ধারণা করা হয়, লেক আলবার্টের সেই কুমিরটি ১৫ বছরে অন্তত ৮৩ জন জেলের মৃত্যুর কারণ হয়েছে৷

গত ৩০ মার্চ ৮০০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি কুমির বন্যপ্রাণী বিভাগের রেঞ্জারদের হাতে ধরা পড়ে, যেটি গত এক বছরে ভাইরাকার অন্তত ছয় জেলেকে হ্রদে টেনে নিয়ে গেছে৷

বন্যপ্রাণী বিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) চার্লস তুমভেসিগে বলেন, ‘‘আমাদের হাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই৷ মাংসের টোপ দিয়ে কুমির ধরতে গিয়ে আমাদের লোকজন নিজেরাই আহত হচ্ছে৷ তবে সরকার আমাদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে৷ আমরা স্থানীয়দের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে তাঁরা হ্রদে সাঁতার না কাটেন, বড় নৌকা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের চেষ্টা করেন৷''

তবে আসল কথাটি এসেছে একজন জেলেরই মুখ থেকে৷ সরাসরি সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন হামজা মুগারিয়া৷

‘‘কুমির মানুষখেকো হচ্ছে এর কারণ লেকে আর পর্যাপ্ত মাছ নেই৷ সরকার এ বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না৷ এমনকি সাত বছরের একটা ছেলেকেও মাছ ধরার অনুমতি দেয়া হচ্ছে!''

জেকে/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান