বনের বাঘ এখন হামলা চালাচ্ছে লোকালয়ে
৩ নভেম্বর ২০০৮জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গোটা বিশ্বে যে উষ্ণায়ন চলছে তার প্রভাব যে কেবল মানুষের ওপর পড়ছে তা কিন্তু নয়৷ সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় যেমন ডুবে যাচ্ছে মানুষের আবাসভুমি তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার পশুপাখীরাও৷ সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলবর্তী বনাঞ্চলের মাটি হয়ে যাচ্ছে লবনাক্ত৷ ফলে মরে যাচ্ছে গাছ, বন হারিয়ে ফেলছে তার সবুজ প্রকৃতি৷ যেমনটি ভারতের সুন্দরবন এলাকা৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় গত ৪০ বছরে সেখানকার সুন্দরবনের ২৮ শতাংশ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে৷ পশু পাখির সংখ্যাও অনেক কমে গেছে যা ছিলো বাঘের খাবারের অন্যতম উত্স৷
ওয়াইল্ড লাইফ বিশেষজ্ঞদের মতে বন বা জঙ্গল হচ্ছে বাঘের প্রাকৃতিক আবাসভুমি৷ বনের আয়তন কমে আসার পাশাপাশি শিকারের অভাবেও বাঘ এলাকা ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে৷ গবাদী পশু ছাড়াও কখনো কখনো মানুষের ওপরও হামলে পড়ছে ক্ষুধার্ত বাঘ৷ গত কয়েকমাসে এমন ঘটনার সংখ্যা বেশ বেড়েছে৷ ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়নের প্রনবেশ স্যানাল জানালেন, সুন্দরবনের নেতিধোপানি এলাকায় গত ছয় মাসে কমপক্ষে সাত জন জেলে বাঘের আক্রমনে প্রাণ হারিয়েছে৷
উল্লেখ্য, ভারতের অংশে অবস্থিত সুন্দরবন সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে অবস্থিত৷ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ইতিমধ্যে এমন দুটি দ্বীপ তলিয়ে গেছে এবং আরও অনেক দ্বীপ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷ কেবল প্রাকৃতিক কারণেই নয় মানুষের জন্যও নষ্ট হচ্ছে সুন্দরবন৷ সেখানকার বেশ কিছু এলাকা বাঘের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত থাকায় সেসব এলাকায় মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু স্থানীয় লোকজন প্রায় সময়ই এ নিয়ম মেনে চলে না৷ যে কারণে অনেক সময়ই তারা বাঘের আক্রমনের শিকার হয়৷ এছাড়া নিয়ম ভেঙ্গে বাঘ শিকারের কারণেও এখন বাঘের সংখ্য অনেক কমে গেছে৷
ওয়াইল্ডলাইফ কর্মকর্তাদের মতে ষাটের দশকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিলো পাঁচ শতাধিক৷ কিন্তু এখন তা নেমে এসেছে মাত্র আড়াইশ থেকে দুইশ সত্তরের মধ্যে৷ আর ভারতের পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্য তো আরও ভয়াবহ! তাদের মতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্য এখন মাত্র ৭৫টি৷ বিশ্বের সবচে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের গর্ব এ বাঘকে টিকিয়ে রাখতে হলে যে কোনভাবে এ সংখ্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে হবে৷