মাত্রাছাড়া বায়ুদূষণে অস্বাস্থ্যকর ঢাকা
৬ নভেম্বর ২০২২রোববার (০৬.১১.২২) সকালে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-এ(একিউআই) ১৮৬টি দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার এই অবস্থান দেখা যায়।সকাল ৮টা ২৬ মিনিটে বাতাসের মান পরীক্ষা করে এই ইনডেক্স প্রকাশ করা হয়।
ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অর্থাৎ একিউআই স্কোর হলো ১৮৬। স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর' ধরা হয়। ভারতের দিল্লি ও চীনের বেইজিং-এর একিউআই যথাক্রমে ২২৬ ও ১৭০। বাংলাদেশসহ দিল্লি ও বেইজিং অস্বাস্থ্যকর শহরের শীর্ষে রয়েছে। এই তিন দেশের যা স্কোর তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোর ‘খারাপ' এবং ৩০১ থেকে ৪০০ এর স্কোর ‘ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়। যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ূদূষণে ভুগছে। এর বাতাসের গুণ মান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নতি হয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে ‘পলিউশন অ্যান্ড হেলথ: আ প্রোগ্রেস আপডেট' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় বিভিন্ন প্রকার দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে শুধু বায়ু দূষণের কারণেই সর্বাধিক এক লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ জনের মৃত্যু হয়।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ূ দূষণের কারণেপ্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ঢাকার বায়ূ দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হল- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।
ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের মাধ্যমে। গবেষণা বলছে, বায়ূ দূষণের জন্য নির্মাণখাত ৩০ শতাংশ দায়ী। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ূ দূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মাধ্যমে। যার হার ২৯ শতাংশ। বায়ূ দূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো যানবাহনের কালো ধোঁয়া, যার শতকরা হার ১৫ শতাংশ।
ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানের বায়ুমান নিয়ে গবেষণা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন," ঢাকায় উন্নয়নমূলক কাজই বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। আমরা বায়ু মান পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেছি বাতাসে ডাস্ট পার্টিক্যাল সবচেয়ে বেশি। এটা শীতকালে বেশি হয়। বর্ষাকালে কমে কারণ তখন বৃষ্টি হয়।”
তিনি জানান," ঢাকা শহরে নতুন নতুন বাড়িঘর নির্মাণ ছাড়াও সড়ক এবং অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে উন্মুক্ত অবস্থায়। যা ধুলিকণা ব্যাপকভাবে বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। আর গাছপালা কম। আমাদের এইসব স্থাপনার কাজ উন্নত বিশ্বের মতো ঢেকে করতে হবে। আর প্রচুর গাছপালা লাগালে ধুলিকণা উড়তে পাববেনা।”
চিকিৎসকরা বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, ব্রঙ্কাইটিস হয়। এগুলো স্বল্পস্থায়ী রোগ। যাদের অ্যাজমা আছে, তাদের সমস্যা বাড়ে। বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে। অন্তঃসত্ত্বা বায়ুদূষণের শিকার হলে গর্ভের সন্তানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এর ফলে বাচ্চা আকারে ছোট হতে পারে, ওজন কম হতে পারে, মানসিক ও স্নায়ুগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। অটিস্টিক বাচ্চা জন্ম হওয়ার একটি কারণ বায়ুদূষণ। আর শিশুদের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব সচয়েচেয়ে বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান বলেন," বায়ুদূষণ আমাদের শরীর এবং লাইফ স্টাইলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুদের উপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। মায়ের গর্ভের সন্তান ক্ষতির শিকার হতে পারে।”
তার কথা," ঢাকার বাতাসে হেভি মেটালও আছে। আর আছে নানা ধরনের বস্তু কণা, ফাইবার ও ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এর কারণে ক্যানসার ছাড়াও লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রন্ত হয়। এমনকি মস্তিস্কেরও ক্ষতি হয়।”