মমতা ফ্রি চাল-গম দেবেন আরো এক বছর
১ জুলাই ২০২০প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ মাস বনাম মুখ্যমন্ত্রীর বারো মাস। পশ্চিমবঙ্গে সরগরম চালের রাজনীতি। রাজনীতিতে লাভ যাঁরই হোক, বিনা পয়সায় চাল-গম হাতে পেলে অন্তত লাভবান হবেন গরিবরা। জুন পর্যন্ত তাঁদের খাদ্যচিন্তা অনেকটাই কমবে।
আগামী মে মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। করোনা, আমফানের মধ্যেই ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে রাজনৈতিক লড়াই। মূলত তৃণমূল বনাম বিজেপি-র। সেই লড়াই এখন আবর্তিত হচ্ছে করোনা-আমফানের ত্রাণ তথা গরিব মানুষকে সাহায্য করাকে ঘিরে। এই আবহে চাল-রাজনীতি নতুন মাত্রা পেয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা চারটের সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচমাস বিনা পয়সায় দেশের ৮০ কোটি লোকের প্রত্যেককে মাসে পাঁচ কিলো চাল বা গম এবং এক কিলো করে ছোলা দেবে কেন্দ্র। তিনি বলেন, সামনে উৎসবের মাস আসছে। প্রধানমন্ত্রী একাধিক উৎসবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তার মধ্যে ছিল দুর্গাপুজো এবং ছট উৎসব। তারপরই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, গরিবদের সাহায্য করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের ভোটে জেতার একটা তাসও খেলে দিলেন। বিহারে এই বছর নভেম্বরের মধ্যে ভোট হওয়ার কথা।
ভোট রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিছিয়ে থাকবেন এটা সচরাচর হয় না। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গে জুন পর্যন্ত বিনা পয়সায় চাল-গম দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ''কেন্দ্রীয় সরকার তো ৬০ ভাগ লোককে চাল-গম দিচ্ছে। আমরা রাজ্যের ১০ কোটি লোককে দিচ্ছি। সব মানুষ পাবেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ কোটি লোককে চাল ও আটা দুটোই দেব।'' তারপর জুন পর্যন্ত সকলে বিনা পয়সায় চাল-গম পাবেন, না কি শুধু গরিবরা পাবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ''কেন্দ্রও ১৩০ কোটি লোককে বিনা পয়সায় চাল-গম দিক।''
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্যের দেওয়া চালের মান উন্নত। কারণ, রাজ্য সরকার চাল সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কেনে। আর কেন্দ্র এফসিআই এর গুদামে থাকা চাল-গম দেয়।''
এ ভাবেই চাল-রাজনীতির চালে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে পরাস্ত করতে চাইছেন মমতা। তৃণমূল ইতিমধ্যে একটা ভিডিও বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। মোদী ও মমতার কথা পাশাপাশি তুলে ধরে। মোদীর ছবির নীচে লেখা 'নির্বাচনের জন্য'। মমতার ছবির নীচে লেখা 'মানুষের জন্য'। বিজেপি-ও পাল্টা প্রচারে নামবে।
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''রাজনীতিকরা রাজনীতি করবেন এতে আর আপত্তির কী আছে। তবে এখানে ফলটা ভালো। আমি একটি সংবাদপত্রে পড়েছি, আমাদের মজুত বাড়তি। সেটা না দিলে নষ্ট হয়ে যেত। আবার বলি, এটা ভালো সিদ্ধান্ত। একটাই প্রশ্ন রয়েছে, ভারতে এখনও ৮০ কোটি লোকের রেশন দরকার হয়? এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, লোকের আর্থিক অবস্থা কোন জায়গায় আছে।''
জিএইচ/এসজি(এএনআই, আবাপ)