ভ্রমণের স্যুভেনিয়ার যখন গল্প বলে
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯কিয়েভ শহরের এক ফ্লি মার্কেটে কাটারিনা কপেনভালনার ইউক্রেনের চিরায়ত স্যুভেনিয়রের খোঁজ করেন৷ সেইসঙ্গে ঐতিহ্যগত এমব্রয়ডারি করা পোশাকও দেখতে পান৷ তিনি কিছু নমুনা দেখিয়ে বলেন, ‘‘এটা ছেলেদের জামা৷ অশুভ আত্মা দূরে রাখতে শরীর দেখা যায়, এমন অংশে এমব্রয়ডারি করা হয়েছে৷ এগুলিকে এখানে ভিশিভাংকা বলা হয়৷’’
কাটারিনা প্রায় ২০ বছর ধরে এ সবের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ এর মধ্যে তিনি ৫০টিরও বেশি দেশ ঘুরেছেন৷ যেমন উজবেকিস্তান, ভারত, ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চল ও চীন৷ সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভ্রমণের সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে সখ্যতা, তাদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় আমার জন্য জরুরি৷ তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আমি জানতে চাই, সেই সুযোগ পেতে চাই৷ আমি এমন সব দেশে যেতে চাই, যেখানে আধুনিকতা এখনো সবকিছু গ্রাস করে নেয় নি৷’’
যারা এমন বিশ্বভ্রমণ করতে পারেন না, তাদের জন্য কাটারিনা বার্লিনে তাঁর দোকানে বিভিন্ন দেশের সামগ্রী রেখেছেন৷ তিনি নিজেই সে সব সংগ্রহ করেন৷ বিশেষ করে কাপড় তাঁর পছন্দের জিনিস৷
সেরা স্যুভেনিয়য়ারগুলি নিয়ে তিনি একটি বইও লিখেছেন৷ নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কাটারিনা কপেনভালনার বলেন, ‘‘আমি আসলে সবসময়ে এমন জায়গার খোঁজ করি, যেখানে সাধারণ মানুষের থাকার সামর্থ্য রয়েছে৷ পর্যটকদের জন্য আমার লোককথার প্রয়োজন নেই৷ সব মানুষ পরে, এমন ঐতিহ্যগত পোশাক আমার পছন্দ৷ অনেক এলাকায় মানুষ দৈনন্দিন জীবনেও এমন পোশাক পরে৷’’
ভ্রমণ শেষে তিনি প্রায় কখনোই খালি হাতে ঘরে ফেরেন না৷ যেমন রুমেনিয়া থেকে তিনি সেরামিকের পাত্র এনেছেন৷ বুলগেরিয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে এক বিশেষ মুকুট পরা হয়৷ ইটালিতে এক ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া আছে৷ নিজের সাধের কথা বললে সেটি নাকি ইচ্ছাপূরণ করতে পারে৷ কাটারিনার মতে, এমন সব বস্তু সবচেয়ে ভালো গল্প বলতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘স্যুভেনিয়রের আইডিয়া আমার খুব ভালো লাগে৷ কোনো একটি বস্তুর সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে, এই বিষয়টিও আমার পছন্দ৷ কারণ চলচ্চিত্রের মতো স্মৃতি কিন্তু স্থায়ী হয় না৷ প্রত্যেকে বস্তুর সঙ্গে নিজস্ব যোগসূত্র গড়ে তুলতে পারে৷ সেটি ছবির মতো কোনো নির্দিষ্ট রূপ তুলে ধরে না৷’’
শিল্পের ইতিহাসবিদ হিসেবে তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যাত্রার পরিকল্পনা করেন৷ ভ্রমণকাহিনি ও অন্যদের অভিজ্ঞতার বয়ান পড়েন তিনি৷ এছাড়া তিনি এমন জায়গারও খোঁজ করেন, যেখানে সম্ভবত বিস্মৃত হস্তশিল্প রয়েছে৷ ইউক্রেন ভ্রমণের আগেও তিনি ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন৷ কাটারিনা বলেন, ‘‘ইউক্রেন আমার কাছে এক অজানা দেশ৷ সম্প্রতি আমাকে রুমেনিয়া, বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ডে ঘন ঘন যেতে হয়েছে৷ এবার ইউক্রেনের পালা৷ দেশটির আয়তন বেশ বড়৷ পশ্চিম ও পূর্বের মাঝের অংশ আমার কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়৷’’
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এক ফ্লি মার্কেটে পণ্যের বৈচিত্র্য কম নয়৷ বিয়েতে পরার এক স্কার্ফ তাঁর মনে ধরেছে৷ ঐতিহ্য অনুযায়ী সেটি আজীবন বিবাহবন্ধন অটুট রাখতে সাহায্য করে৷ কাটারিনার মতে, ‘‘এমন এক জমজমাট হাটে সবই পাওয়া যায়৷ অনেক তরুণ-তরুণী আসে, শনিবার বা সপ্তাহান্ত সেখানেই কাটায়৷ এ সব স্যুভেনিয়য়ার শুধু ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য রাখা হয় নি৷ সাধারণ মানুষ সে সব পছন্দ করে৷’’
সে কারণে কাটারিনা কপেনভালনার-এর ভ্রমণ আসলে এমন অভিজ্ঞতা, সঙ্গে করে আনা স্যুভেনিয়য়ারগুলির মুখে যার গল্প শোনা যায়৷
প্রেচ/কনোলি/এসবি