ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ের ৩০ বছর
২ ডিসেম্বর ২০১৪মার্কিন ইউনিয়ন কার্বাইড কর্পোরেশন'এর ভারতীয় শাখা ইউসিল দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ভোপাল কারখানায় সেভিন নামধারী কীটনাশকটি উৎপাদন করা হতো যে প্রক্রিয়ায়, তা'তে মাঝপথে মিথাইল আইসো-সায়ানেট বা এমআইসি নামক অতিশয় বিষাক্ত গ্যাসটি উৎপন্ন হয়৷
দুর্ঘটনার রাত্রে একটি এমআইসি ট্যাঙ্কে পানি ঢুকে গ্যাস নির্গত হয়৷ এই গ্যাস এবং অপরাপর কমবেশি বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নির্গত হয়ে কারখানার কাছের বস্তিগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে: বিষাক্ত গ্যাসের প্রকোপে পড়েন পাঁচ থেকে সাত লাখের বেশি মানুষ৷ মধ্য প্রদেশ রাজ্য সরকারের এফিডেভিট অনুযায়ী গ্যাসের প্রকোপে প্রাণ হারান ৩,৭৮৭ জন মানুষ - যদিও অন্যান্য সূত্র ১৬ থেকে ২৫ হাজার অবধি মানুষের প্রাণহানির দাবি তুলেছে৷ আহতের সরকারি সংখ্যা ৫ লাখ ৫৮ হাজার একশো পঁচিশ৷
দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে: আদালতের ভিতরে এবং বাইরে৷ ভারত সরকার এবং স্থানীয় এনজিও'দের দাবি, কারখানা কর্তৃপক্ষের অক্ষমতা এবং বাজে মেরামতির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ অপরদিকে ইউসিল'এর বিশ্বাস, এ'টি ছিল একটি অন্তর্ঘাতের ঘটনা এবং কারখানার এক কর্মী এই অন্তর্ঘাতের জন্য দায়ী৷ সেই কর্মী নাকি হোসপাইপ দিয়ে ৬১০ নং এমআইসি ট্যাঙ্কে পানি ঢুকিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন৷
দুর্ঘটনার পর পরই ভারত সরকার অকুস্থলে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেন - এমনকি ইউনিয়ন কারবাইড কর্পোরেশেনের প্রতিনিধিদেরও কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ দুর্ঘটনার তদন্তের ভার দেওয়া হয় পুরোপুরি সিএসআইআর বা সরকারি কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের হাতে৷ ঘটনার কার্যকারণ নির্ধারণ, দোষীদের খোঁজ, ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত চিন্তা, এ'সবের আগেও আসে পীড়িত জনগণের চিকিৎসা৷ স্থানীয় ডাক্তার অথবা হাসপাতালগুলি এতবড় একটা বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত ছিল না৷ থাকে অগণিত মৃতদেহ সৎকারের প্রশ্ন৷ সেই সঙ্গে প্রায় দু'হাজার গৃহপালিত পশুর লাশ সরাতে হয়েছে৷
ক্ষতিপূরণ নিয়ে যে দীর্ঘমেয়াদি আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়, তা'তে ইউনিয়ন কার্বাইড, ভারত সরকার এবং মার্কিন সরকার, সবাই সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷ ১৯৮৫ সালেই ভারত সরকার আইন করে সরকারকে ভোপাল দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের একমাত্র প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করেন৷ ১৯৮৬ সালের মার্চে ইউনিয়ন কার্বাইড ৩৫ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়৷ সে'বছরের মে মাসেই গোটা মামলা ভারতীয় আদালতের এক্তিয়ারে চলে আসে - অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিপূরণের মামলা করার পথ ধাপে ধাপে বন্ধ হতে থাকে৷
শেষমেষ ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দু'পক্ষকে কোনো একটি আপোশে আসতে বলে৷ ১৯৮৯ সালের সেই আদালত-বহির্ভূত সমঝোতা অনুযায়ী ইউনিয়ন কার্বাইড ৪৭ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয় এবং অবিলম্বে তা প্রদানও করে৷ সব সত্ত্বেও দেখা যায় যে, ২০০৪ সালেও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে ক্ষতিপূরণের বাদবাকি অর্থ পীড়িতদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে৷