জার্মান নজরদারি ব্যবস্থা
২৫ এপ্রিল ২০১৩হুসেম আলাদিন অনেক সতর্ক ছিলেন৷ সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে বছর দেড়েক কাজ করার সুবাদে তিনি নজরদারি প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন৷ তাই সেনাবাহিনী ত্যাগের পর ইন্টারনেটে যোগাযোগের জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন একগাদা নকল ই-মেল ঠিকানা৷ ইন্টারনেটও তিনি ব্যবহার করতেন ক্যাফেতে গিয়ে, যেখানে অন্যান্য মানুষের বিচরণ আছে৷ ঘরে বসে কখনোই নয়৷
আলাদিন মুক্তপেশাজীবী সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন৷ সিরিয়ায় খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া বিদেশি সাংবাদিকদের সহায়তা করতেন তিনি৷ তাঁকে কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার করেছে সিরিয়ার শাসকগোষ্ঠী৷ সম্ভবত, আলাদিনের ইন্টারনেট যোগাযোগের উপর নজর রাখছিল তারা৷ ফলে সতর্ক হলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর৷
মোবাইল এবং কম্পিউটার যোগাযোগের উপর নজরদারির ব্যবস্থা সিরিয়াকে সরবরাহ করেছে জার্মানি৷ ২০১০ সালে সিরিয়ার মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিরিয়াটেলকে প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্স৷ বাহরাইনেও একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে, যা ইউরোপ থেকেই তাদের সরবরাহ করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ লিবিয়া এবং মিশরও পশ্চিমাদের সরবরাহকৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর নজর রাখত বলে তথ্য প্রমাণ রয়েছে৷
গোটা বিশ্বের মধ্যে নজরদারি প্রযুক্তি তৈরি এবং সরবরাহের দিক থেকে জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান বেশ উপরের দিকে৷ তাদের যুক্তি হচ্ছে, এই প্রযুক্তি মূলত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে সহায়তা করছে৷ নজরদারি পণ্য কম্পিউটার এবং টেলিফোনের উপর নজর রাখতে সহায়তা করে, পাশাপাশি বিশেষ সফটওয়্যার টেক্সট ম্যাসেজ নিয়ন্ত্রণ, ইন্টারনেট যোগাযোগের উপর গোয়েন্দাগিরি, পাসওয়ার্ড উদ্ধার, এমনকি নজর রাখা ব্যক্তিটির অবস্থান পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে৷
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরডাব্লিউবি), জার্মানির পরিচালক ক্রিস্টিয়ান মায়ার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘নজরদারি প্রযুক্তি ভুল মানুষের হাতে পৌঁছালে তা দ্রুতই ‘ডিজিটাল অস্ত্রে' রূপ নেয়৷'' সংগঠনটির অভিযোগ, পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বৈরাচারী সরকারের কাছে নজরদারি প্রযুক্তি বিক্রি করছে, যা ব্যবহার করে তারা ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর নজর রাখছে এবং প্রয়োজনে তাদের গ্রেপ্তার করছে৷
বলাবাহুল্য, জাতীয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে নজরদারি প্রযুক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে খুব কম বিধিনিষেধ রয়েছে৷ সিরিয়া এবং ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেসব দেশে এখন এই প্রযুক্তি রপ্তানিতে বাধা থাকলেও সামগ্রিকভাবে জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানির ক্ষেত্রে তেমন একটা বাধার মুখে পড়ে না৷ ফলে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর কাছে কিছু বিক্রি করার ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা কম, বিষয়টি বরং অনেকটাই নৈতিক৷ কিন্তু ব্যবসার কাছে নৈতিকতার গুরুত্ব কতটা সেটাও এক বড় প্রশ্ন৷