ভারতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতি-বিরোধী তোপ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪দুর্নীতি-বিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবার তোপ দেগেছেন ওপর মহলের দিকে৷ তাঁর মতে দুর্নীতি শুরু হয় ওপর মহলে, পরে সেখান থেকে চুঁইয়ে পড়ে নীচের দিকে৷ তাই ব্যবস্থা নিতে হবে সেখান থেকেই৷ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও তার কর্ণধার এবং দেশের সবথেকে ধনী শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি, বর্তমান পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি, প্রাক্তন মন্ত্রী মুরলি দেওরা এবং প্রাক্তন হাইড্রোকার্বন বিভাগের মহাঅধিকর্তা ভি.কে সিব্বালের বিরুদ্ধে কৃত্রিমভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর যোগসাজসের অভিযোগে কেজরিওয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির দুর্নীতি দমন শাখাকে৷ অভিযোগ, দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণা-গোদাবরি অববাহিকার তেল ও গ্যাস উৎপাদন ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি কোরে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয় ৮.৪ ডলার, যেটা উৎপাদন ব্যয় থেকে অনেক বেশি৷ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে এর প্রভাব অনিবার্য৷
কেজরিওয়ালের অভিযোগ অনুসারে হাইড্রোকার্বন বিভাগের ডিজিকে লেখা চিঠিতে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গ্যাসের উৎপাদন খরচের হিসেবে দেখিয়েছে প্রতি এমবিটিইউ গ্যাসের দাম পড়ে এক মর্কিন ডলারের কম৷ কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে ১৭ বছরের জন্য গ্যাস সরবরাহের চুক্তি হয় প্রতি এমবিটিইউ গ্যাসের দাম ২.৩৪ ডলার দরে৷ তারপর মন্ত্রীদের যোগসাজসে তা বাড়িয়ে করা হয় ৪.২ ডলারে, এমনটাই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর৷
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল এই যুক্তিও দেখান যে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ দাম বাড়ালেও তার বাণিজ্যিক পার্টনার নিকো রিসোর্সেস সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করে প্রতি এমবিটিইউ ২.৩৪ মার্কিন ডলারে৷ ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে, ভারত তার নিজের গ্যাস কিনবে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দামে৷ ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ডলারে স্থির না করে করা দরকার ভারতীয় টাকায়৷ কারণ উৎপাদন ব্যয় হয় ভারতীয় টাকায়৷ এই বর্ধিত দাম কার্যকর হবে আগামী এফ্রিল মাস থেকে৷ এই গ্যাস প্রধানত ব্যবহার করা হয় সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে৷ প্রসঙ্গত, একই অভিযোগ এর আগে দায়ের করেছিলেন কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ৷
সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি বলেছেন, এই সব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই৷ দিল্লি নতুন মুখ্যমন্ত্রী জানেনই না কী করে সরকার চালাতে হয়৷ পেটেরোলিয়াম পণ্যের দাম বাড়ানো হয় বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে৷ অনুরূপ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে৷ বলা হয়েছে, প্রতিটি অভিযোগ ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন৷ এর জন্য উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মুকেশ আম্বানির ছোট ভাই অনিল আম্বানির রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অধীন দুটি সংস্থা দিল্লিতে বিদ্যুৎ বন্টনে দাম বাড়ানো নিয়ে কেজরিওয়ালের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে৷ অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, রাঘব বোয়ালদের সঙ্গে কেজরিওয়াল কতটা পেরে উঠবেন তাতে সন্দেহ আছে৷ পর্যবেক্ষক মহলের বক্তব্যও তাই৷ এমনকি, নতুন সরকার ক্ষমতায় এলেও দুর্নীতি দমনে কতটা সফল হবে, তাও প্রশ্নচিহ্নের মুখে৷ কারণ যে দলই ক্ষমতায় আসুক বেশির ভাগেরই টিকি বাঁধা একই জায়গায়৷