ব্রিটিশ সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে বিতর্ক
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার উদ্যোগনিয়েই থামছেন না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ তাঁর মতে, ইইউ ব্রিটেনের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে৷ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করে ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ বানচাল করে ইইউ এমনটা করতে চাইছে বলে জনসন দাবি করেছেন৷ উল্লেখ্য, খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন এড়াতে ইইউ ব্রিটেনের কাছে কয়েকটি বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান দাবি করছে৷ চলতি সপ্তাহে ব্রাসেলসে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় বিষয়টি আবার উঠে আসার কথা৷
বলা বাহুল্য, ইইউ এমন দাবিকে ভুল ও প্ররোচনা হিসেবে গণ্য করছে৷ একাধিক ইইউ নেতা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন৷ আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন কোভেনি এমন দাবিকে ‘সত্য নয়’ বলে জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে, এমন কোনো প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে না৷ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে এমন প্ররোচনামূলক মন্তব্যের নিন্দা করেন তিনি৷ অস্ট্রিয়ার অর্থমন্ত্রী গ্যারনট ব্ল্যুমেল বলেন, ‘‘যখনই কোনো অগ্রগতি সম্ভব হয়, কোনো না কোনো সময় ব্রিটেন তার প্রতিশ্রুতি পালন করতে চায় না৷’’
ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও বিষয়টিকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে৷ সোমবার ব্রিটিশ সংসদের নিম্ন কক্ষে নতুন আইনের খসড়া নিয়ে বিতর্কের আগেই একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্রিটেনের ভাবমূর্তি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ দুই প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ‘সানডে টাইমস’ সংবাদপত্রে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে লিখেছেন, যে এমন উদ্যোগ সরকার ও দেশের জন্য লজ্জাজনক৷ জন মেজর ও টোনি ব্লেয়ার এমন খোলাখুলি বরিস জনসনের সমালোচনা করায় রাজনীতি জগত উত্তাল হয়ে উঠছে৷
সংসদের উভয় কক্ষে সরকারি দলের অনেক ব্রেক্সিটপন্থি নেতাও চুক্তি ভাঙার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না৷ তবে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে তাঁরা খোলাখুলি বিদ্রোহের পথে যাবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ জনসনের সরকার যত দ্রুত সম্ভব আইন প্রণয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শুক্রবার রাতে জনসন নিজে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রায় ২৫০ এমপি-র সঙ্গে কথা বলেছেন৷ এ প্রসঙ্গে তিনি গত বছর সংসদের অচলাবস্থার কথা মনে করিয়ে দেন৷ প্রধানমন্ত্রীর চাপের মুখে কিছু সংসদ সদস্য ব্রেক্সিট চুক্তিতে যে কোনো রদবদলের ক্ষমতা সরকারের বদলে সংসদের হাতে রাখার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷
চলতি মাসে ব্রিটেনের সরকার সত্যি ব্রেক্সিট চুক্তি ভেঙে আইন প্রণয়ন করলে ইইউ সে দেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ সেইসঙ্গে কিছু শাস্তিমূলক পদক্ষেপ সম্পর্কেও ভাবনাচিন্তা চলছে৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য দুই পক্ষের মধ্যে কোনো বোঝাপড়া সম্ভব হলে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না৷ তবে একবার আন্তর্জাতিক আইন ভাঙার উদ্যোগ নিয়ে ব্রিটেনের বিশ্বাসযোগ্যতা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)