ঈদের আগে গার্মেন্টসে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা
২৬ মে ২০১৮সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের আগে রাজধানীর আশেপাশেসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে৷ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এ বছর আগেভাগেই তা আমলে নিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ৷ ইতিমধ্যেই তৈরি পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকা বলে খ্যাত ঢাকার আশুলিয়া, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামে বাড়ানো হয়েছে নজরদারী৷
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার জানান, ‘এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন৷ এখনই অনেক গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে৷ আজ গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে বোনাসের জন্য শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন৷ এবার শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো নির্ধারণের জন্য যে কমিটি করা হয়েছে ওই কমিটি বৈঠকই করতে পারছে না৷ তারিখ ঠিক হলেও বিজিএমইএ সভাপতি বিদেশে চলে যান৷ মালিক পক্ষের অসহযোগিতার কারণে ওই বৈঠকগুলো হচ্ছে না৷ এবার ঈদে বেতন-বোনাসের সঙ্গে এই ইস্যুটা যুক্ত হতে পারে৷ ফলে শ্রমিক আন্দোলনের আশংকা আছে৷''
তবে বিজিএমইএ সভাপতি এই ধরনের আশঙ্কা আমলে নিতে রাজি নন৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন৷ কারণ মাসের মাঝামাঝিতে ঈদ পড়েছে৷ ফলে একটা সংকট তো হতেই পারে৷ কারণ বেতন দিতে হবে, বোনাস দিতে হবে৷ সবগুলো একসঙ্গে দিতে গেলে মালিকরা তো একটু চাপে পড়বেন৷ তবে আমরা আলোচনা করে সব সমস্যার সামাধান করে ফেলবো৷ আর শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই সমস্যা সমাধান করতে পারে৷ শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার কিছু নেই৷''
ঈদের আগে শ্রমিকরা যাতে সুষ্ঠুভাবে বেতন ভাতা পায় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ এর জন্য অন্যান্য বছরের মতো এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে ক্রাইসিস কন্ট্রোল রুম কাজ করছে৷ এর বাইরে আঞ্চলিক ক্রাইসিস কমিটি রয়েছে৷
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টার দিকে নজর রাখছি৷ মালিকদের ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ কোন মালিক নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ ঈদের বেতন বোনাসকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটার সুযোগ আমরা দেব না৷ শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিতে হবে৷ মালিকদের বলেছি, রেশনিং করে শ্রমিকদের ছুটির ব্যবস্থা করতে৷''
বিজিএমইএ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কারখানা মালিকদেরকে আগামী জুন মাসে একসঙ্গে প্রায় তিন মাসের বেতন পরিশোধ করতে হবে৷ জুন মাসেই পরিশোধ করতে হবে মে মাসের বেতন৷ এর পর দিতে হবে ঈদের বোনাস৷ একই সঙ্গে জুন মাসের পুরোটা না হলেও আংশিক বেতন দিতে হতে পারে৷ এর ফলে মালিকদের ওপর এক ধরনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে৷
এদিকে উৎপাদনে নেই দেড় হাজারেরও বেশি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা৷ এর মধ্যে কিছু কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে৷ কিছু কারখানায় নেই রপ্তানি আদেশ৷ কাজ না থাকায় এসব কারখানাও বন্ধ হওয়ার পথে৷ ফলে এসব কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস কীভাবে হবে তা নিয়ে আছে শংকা৷
এত কারখানা বন্ধ হওয়ায় পোশাক খাত যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি মালিক এবং শ্রমিক উভয় শ্রেণিই বিপদে পড়েছে৷ জানা গেছে, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর নিয়মিত উৎপাদনে না থাকাসহ অন্যান্য কারণে ৫৫০ কারখানার সদস্যপদ বাতিল করেছে বিজিএমইএ৷ আয়-ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় ৩০০ কারখানা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে মালিক পক্ষ৷ নিয়মিত উৎপাদনে না থাকার কারণে ১৮০ কারখানার সদস্যপদ বাতিল করেছে বিকেএমইএ৷ বিকেএমইএ ভুক্ত ২০০ কারখানা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা৷ সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এ পর্যন্ত ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ২৩২ কারখানা৷ এসব কারখানার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন ক্রেতারা৷ এ কারখানাগুলো দুই জোটের কোনো ক্রেতার রপ্তানি আদেশ পাচ্ছে না৷ কার্যত এসব কারখানা এখন বন্ধ৷
আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷