বৃষ্টির দাপটে জলমগ্ন পশ্চিমবঙ্গের অনেক এলাকা
৬ আগস্ট ২০২৪বর্ষা এলেও জুলাই মাসে তেমন বৃষ্টি হয়নি দক্ষিণবঙ্গে। যদিও উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। চলতি মাসের শুরু থেকেই মিলে গিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ। প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টির জেরে আরো ভোগান্তির আশঙ্কা।
জারি থাকবে বৃষ্টি
কোথাও কম, কোথাও বেশি। দফায় দফায় বৃষ্টি চলছে দক্ষিণবঙ্গে। সার্বিকভাবে দক্ষিণের জেলাগুলিতে বৃষ্টি কমলেও একেবারে রেহাই মেলেনি। সোমবার ভারী বৃষ্টি হয়নি দক্ষিণবঙ্গে। বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হয়েছে।
তবে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে সোমবার। আবহাওয়া দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, মঙ্গলবারও রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। উত্তরে অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও লাগোয়া বাংলাদেশের উপর নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে জোরালো বৃষ্টি। এই নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বিহার ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে গিয়েছে। তার জেরে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও পুরোপুরি থামবে না।
ভারী বৃষ্টির শঙ্কা
নিম্নচাপের জন্য কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। রবিবার থেকে পরিস্থিতিতে বদল হয়েছে। ভারী বৃষ্টি না হলেও মৌসুমি অক্ষরেখার কারণে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুলিয়া এবং দিঘার উপর দিয়ে বিস্তৃত রয়েছে মৌসুমি অক্ষরেখা যেটি মিশেছে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে।
মৌসুমি অক্ষরেখার জেরে দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলায় মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির কথা বলেছে আবহাওয়া দপ্তর। পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর পরেও থাকবে নিম্নচাপের প্রভাব। পশ্চিম বর্ধমানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বুধবারও। এই জেলাগুলির বিভিন্ন এলাকায় সাত থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
মঙ্গলবার দার্জিলিং, কালিম্পঙে ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। বুধবারও এই পাঁচ জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এখানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি চলতে পারে।
গরম থেকে রেহাই
চলতি মৌসমে তীব্র গরমের সাক্ষী থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। এরপর জুলাই মাসে বৃষ্টির বিপুল ঘাটতি ছিল। এতে গরম থেকে রেহাই মেলেনি। আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বজায় থাকলেও আগস্টের বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।
বৃষ্টি চলতে থাকায় সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি কম।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি বেশি। মঙ্গলবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকার সম্ভাবনা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বানভাসি বহু এলাকা
উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টি চলতে থাকায় ধস নেমেছে পাহাড়ে। কালিম্পঙের বেশ কয়েকটি এলাকায় ধস নামলেও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গেও জলমগ্ন অনেক এলাকা। পূর্ব বর্ধমানের কালনা, কাটোয়া, গুসকরা, মেমারির বিভিন্ন অঞ্চল বানভাসি। বীরভূমের বোলপুর সহ অন্যান্য এলাকা, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া হুগলির আরামবাগ মহকুমা ও নদিয়ার বেশ কিছু এলাকায় জনবসতি জলমগ্ন।
জল ছাড়ার বিতর্ক
বৃষ্টি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছেড়েছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি। এর ফলে অনেক এলাকায় মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজ্য সরকারের সঙ্গে ডিভিসির বিবাদ বেধেছে।
রাজ্যের দাবি, কোনো আলোচনা ছাড়া একতরফাভাবে জল ছাড়ার জন্য তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। যদিও ডিভিসির দাবি, রাজ্যকে জানিয়েই মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় জলের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়েছে। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টি চলতে থাকলে তা কৃষির পক্ষে ইতিবাচক হবে না। এছাড়া হড়পা বান ও ভরা কোটালের জেরে পরিস্থিতি আরো গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, "জলাভূমি ভর্তি হয়ে আছে। মাটির নীচে জলস্তর সমৃদ্ধ। নদী কানায় কানায় ভরে আছে বৃষ্টিতে। এই পরিস্থিতিতে বন্যার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ডিভিসি উদ্বৃত্ত জল রাখতে পারে না, ছাড়তে থাকে। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে হিমালয়ের ঢাল থেকে জল নেমে আসে। সেখানে নীচের এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।"
বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে তার বক্তব্য, "আগস্ট মাসে আরো বৃষ্টি হবে, এটা স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আগাম সর্তকতা জারি করতে হবে। মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে নিরাপদ স্থানে।"