নজরদারিতে ক্ষুব্ধ দিল্লি
৪ জুলাই ২০১৪শাসকদল বিজেপির গতিবিধির উপর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সি এনএসএ সাইবার গোয়েন্দাগিরি করেছিল ২০১০ সালে, যখন সাবেক মনমোহন সিং সরকারের ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু চুক্তির ওপর সংসদে বিতর্কে অংশ নিয়ে বিজেপি তার বিরোধিতা করেছিল৷ সেই সময়ে বিরোধী দল বিজেপির বক্তব্য সংসদে রেখেছিলেন সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দলনেত্রী, বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সুষমা স্বরাজ৷
এই তথ্য ফাঁস হবার পর গত মঙ্গলবার ভারত তার ক্ষোভ ব্যক্ত করতে নতুন দিল্লির অস্থায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র দপ্তরে ডেকে পাঠায় এবং জানিয়ে দেয়, এটা অত্যন্ত আপত্তিকর এবং মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ গত এক বছরে ভারতের ওপর এই ধরনের মার্কিন নজরদারির এটা তৃতীয় অভিযোগ৷ কোনো অভিযোগেরই সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে৷ তাদের মতে, মার্কিন বৈদেশিক নজরদারি এবং গোয়েন্দাগিরি আইনে এটাকে অবৈধ বলা চলে না৷ পররাষ্ট্র দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য ফাঁস করেছেন মার্কিন এনএসএ-এর প্রাক্তন এজেন্ট এডওয়ার্ড স্নোডেন৷ উল্লেখ্য, তাঁরই ফাঁস করা তথ্যের ভিত্তিতে নিউ ইয়র্কে ভারতীয় কনস্যুলেট অফিসের কূটনীতিক দেবযানী খোবড়াগাড়েকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক বিবাদ চরমে উঠেছিল৷
আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটা নিয়ে অন্য দেশের ওপর দোষারোপ করা বৃথা৷ এটা আজকের দুনিয়ায় কারো অজানা নয় যে, প্রায় প্রতিটি দেশ অপর দেশের ওপর নজরদারি করে থাকে এবং করতে হয়৷ হামেশাই ‘হ্যাকিং‘ হচ্ছে৷ গোপন তথ্যাদি বের করে আনা হচ্ছে৷ তাহলে আটকাবার উপায় কী? উপায় হলো ভারতকে নিজেদের সাইবার নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে৷ কী ভাবে? ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘র‘-এর এক প্রাক্তন কর্মকর্তা মনে করেন, সরকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইরেটেড বা বিদেশি জাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে৷ সেটায় থাকে ঝুঁকি৷ সেটার পরিবর্তে নিজেদের নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে৷ আজকাল বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসীরা ‘এনক্রিপশন' সফটওয়্যার ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে গোপন কথাবার্তা চালিয়ে থাকে৷
এরই মাঝে ভারত সফরে রয়েছেন প্রভাবশালী মার্কিন সেনেটর জন ম্যাককেন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সহযোগিতা আরো জোরদার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন৷ মত বিনিময় করেন ইরাক ও আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে৷ ইরাকে আটকা পড়া ভারতীয়দের নিরাপদে স্বদেশে ফিরিয়ে আনতে ভারত আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলেন৷ ম্যাককেন ভারত-মার্কিন অর্থনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা পার্টনারশিপের এক বড় সমর্থক৷ জুলাই মাসেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ভারত সফরের একটা ক্ষেত্র তৈরি করাও ম্যাককেন-এর লক্ষ্য৷ তবে বিজেপির ওপর নজরদারি ইস্যুতে এই সফরের তাল কিছুটা কেটে গেছে৷ সেটা বোঝা গেছে গত বুধবার ম্যাককেন তাঁর সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করায়৷