সুষমার বাংলাদেশ সফর
২৮ জুন ২০১৪আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, সুষমা এই সফরে একটি বার্তা নিশ্চিত করে গেছেন৷ আর তাহলো বাংলাদেশের একক কোনো দলের সঙ্গে নয়, বরং বাংলাদেশের দুই বড় দলের সঙ্গেই সমান সম্পর্ক রাখতে চান তিনি৷
ডয়চে ভেলেকে ড. আহমেদ বলেন, ‘‘এদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বার্তা দিয়েছে ভারত৷ যা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ৷ এর মাধ্যমে সুষমা স্বরাজের এই সফরে পরিষ্কার হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে তারা যথেষ্ট সচেতন৷''
তবে তিনি মনে করেন, সুষমার এবারের সফর একদমই শুভেচ্ছা সফর৷ তিনি ভারতের যে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই সরকার কেবলমাত্র একমাস হলো ক্ষমতায় আসীন হয়েছে৷ আর একমাস বয়সি একটি সরকারের পক্ষে চাইলেও এখনই বড় কিছু করা সম্ভব নয়৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম শাহেদুজ্জামান অবশ্য মনে করেন, সুষমার এই সফরে বাংলাদেশের কোন প্রাপ্তি নেই৷ যা প্রাপ্তি তার সবই ভারতের৷ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে৷
ডয়চে ভেলেকে শাহেদুজ্জামান বলেন, ‘‘তিস্তার পানি চুক্তি, সীমান্ত সমস্যার ব্যাপারে কোন আশ্বাসই দেননি সুষমা৷ তিনিও আগের সরকারের মতো অযুহাত দেখাচ্ছেন৷''
‘খালেদার দেখা করা ঠিক হয়নি'
এম শাহেদুজ্জামান মনে করেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া হোটেলে গিয়ে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করা ঠিক হয়নি৷ খালেদা জিয়াকে নয়-ছয় করে কিছু সময় দিয়েই সুষমা সংসদ ভবনে চলে গেলেন তথাকথিত বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে করতে৷ এতে বোঝা যায় বিএনপি নেত্রীকে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন৷
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ অবশ্য মনে করেন, সুষমার সফরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিষ্কার হয়েছে৷ তাহলো বাংলাদেশের কোন নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না ভারতের নতুন সরকার৷ যেমনটি কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল৷ সেখান থেকে সরে গিয়ে বিজেপি সরকার বলতে চাচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক হবে৷
তিনি বলেন, ‘‘সেমিনারে দেয়া সুষমার বক্তব্য তাত্পর্যপূর্ণ৷ সেই বক্তব্যে সুষমা বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সহনশীলতার সংস্কৃতি, অংশগ্রহণ ও ভিন্নমতের বিকাশ প্রয়োজন৷ অনুরোধ পেলে এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা ও অনুসৃত আদর্শ সানন্দে বিনিময় করব৷''
‘সংলাপ হয়তো শুরু হতে পারে'
আশাবাদী ড. আহমদে বলেন, ‘‘এখন দেখা দরকার যে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে কোন পরিবর্তন আসে কি-না৷ আমি আশাবাদী, এক ধরনের সংলাপ হয়তো শুরু হতে পারে৷ আওয়ামী লীগের এখন উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শুরু করে দেয়া৷''
এম শাহেদুজ্জামান অবশ্য মনে করেন, ভারতের কোন আশ্বাসের দিতে তাকিয়ে থাকা বিএনপির ঠিক হবে না৷ বিএনপির উচিত্ জনগনের প্রতি আস্থা রেখে আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া৷ কারণ এর আগেও ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখেনি৷ বরং তারা আমাদের কাছ থেকে ট্রানজিটসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে৷ তারা পশ্চিমা কূটনীতিকদের কাছে আমাদের সম্পর্ককে খুবই নেতিবাচক কথা বলে৷
তিনি বলেন, ‘‘সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক করবে না৷ তারা তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখবে৷''