1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশ কি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে ক্লান্ত?

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মিয়ানমার থেকে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ছয় বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু শরণার্থীদের স্থায়ী বাসস্থান খুঁজে বের করার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় স্থানীয়রা অধৈর্য হয়ে পড়ছে।

https://p.dw.com/p/4N1lR
রোহিঙ্গাদের নেতা আবু জাফরের মতে, নিয়মিত কাজ, চলাচল ও অর্থবহ শিক্ষার সুযোগ না থাকায় ১০ লাখ শরণার্থীর কোনো ভবিষ্যৎ নেই
রোহিঙ্গাদের নেতা আবু জাফরের মতে, নিয়মিত কাজ, চলাচল ও অর্থবহ শিক্ষার সুযোগ না থাকায় ১০ লাখ শরণার্থীর কোনো ভবিষ্যৎ নেইছবি: KM Asad/ZUMAPRESS/picture alliance

 ২০১৭ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কক্সবাজারের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা৷ কয়েক দশক ধরে জনাকীর্ণ ক্যাম্পে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ঘনবসতি এলাকায় নতু ন করেতাদের জায়গা দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেনি সরকার। 

মূলত মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনেরসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে, ৫০ বছরের মধ্যে এই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে ভয়াবহ এক শরণার্থী সংকটের শিকার হয়েছে। 

"রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে; তারা আজকাল প্রায়শই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে,” বলছিলেন উখিয়া শহরের সরকারি প্রশাসক ইমরান হোসেন।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী শিবির এই উখিয়াতে।

কৃষিজমি পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে

আবদুর রশীদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একজন ধনী ও অনেক জমির মালিক ছিলেন। তিনি শরণার্থীদের ২০১৭ সালের আগস্টে আসার সময় তার জমির পাশে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। এখন তিনি ক্ষুব্ধ ও হতাশ। কারণ, বালুখালী ক্যাম্পের পাশে তার এক সময়ের কৃষি জমি পরিণত হয়েছে পলিথিন, মলমূত্র ও মশায় ভরা উর্বর জলাভূমিতে।

"এই জমি খুব উর্বর ছিল। আমরা বছরে দু'বার ধান চাষ করতাম, যা ভালোভাবে আমার পরিবারের সকলের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল," জানালেন ৭২ বছর বয়সি এই কৃষক। তার ১০ একর জমি 'নষ্ট' করার জন্য তিনি শরণার্থীদের দায়ী করেছেন। 

তবে সেখানে রোহিঙ্গাদের জীবন অনেক কঠিন। 

রোহিঙ্গাদের নেতা আবু জাফরের মতে, নিয়মিত কাজ, চলাচল ও অর্থবহ শিক্ষার সুযোগ না থাকায় ১০ লাখ শরণার্থী কোনো ভবিষ্যৎ দেখছে না। 

মেথামফেটামিন ট্যাবলেট পাচার থেকে শুরু করে হত্যার মতো অপরাধের ঘটনারও উল্লেখ করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "সংগঠিত অপরাধের জন্য সবল, কিন্তু বেকার রোহিঙ্গা যুবকদের কাজে লাগানো আজকাল কতটা সহজ হয়ে গেছে এ থেকেই তা বোঝা যায়।"

কাজে ভাগ বসাচ্ছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের উখিয়া এলাকার টুক-টুক চালক সালাম মিয়া গত কয়েক বছর ধরে সহজে কাজ পাচ্ছেন না৷ প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে৷

"গ্যারেজে পৌঁছাতে যদি একটু দেরি করি, তাহলে আমি সেদিন আর রিকশা ভাড়া পাবো না। তার মানে আমি সেদিন আমার বাচ্চাদের জন্য খাবার কিনতে পারবো না," বলেন ২৫ বছর বয়সি তিন সন্তানের বাবা। 

তার অভিযোগ, একজন রোহিঙ্গা সম্ভবত আরো বেশি ভাড়া দিয়ে টুকটুক নিয়ে যাচ্ছে। "আক্ষরিক অর্থেই শরণার্থীরা আমাদের কাজ চুরি করে আমাদের পেটে লাথি মারছে।"

শরণার্থী শিবিরের পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ হারুনুর রশীদ স্বীকার করেছেন, পুলিশকে পাশ কাটিয়ে রোহিঙ্গারা সহজেই পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে পড়ছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "তারা ১৬০টিরও বেশি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া কেটে ক্যাম্পের বাইরের যাওয়ার পথ তৈরি করেছে।"

চরমপন্থা, নিপীড়ন ও মাদক 

সন্দেহভাজন মাদক চোরাকারবারিদের গুলিতে লেদা ক্যাম্পে বসবাসকারি ১৩ বছর বয়সি রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান গুরুতর আহত হয়। 

তার কয়েকজন বন্ধু ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ হয়। কয়েকদিন পর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সীমান্তে নাফ নদীতে তাদের পচা লাশ ভাসতে দেখা যায়। 

উপকূলীয় শহর টেকনাফের মাদক কারবারিরা রোহিঙ্গা যুবকদের মাদক চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তারা সহিংসতা ও অপহরণের দিকেও ঝুঁকছে।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা আট বাংলাদেশি কৃষককে অপহরণ করে। চার দিন পর ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ফেরত দেয়া হয়। 

স্থানীয় কাউন্সিলর রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, "এসব দরিদ্র কৃষকের পরিবারকে মুক্তিপণের টাকা দিতে মোটা সুদে ঋণ নিতে হয়েছে।"

এদিকে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে যে, ইসলামী চরমপন্থিদের একটি গ্রুপ শরণার্থী শিবিরে ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করছে। গত সপ্তাহে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সন্দেহভাজন চরমপন্থিদের সঙ্গে র‍্যাবের গুলি বিনিময় হয়। 

সমাধান কিভাবে

সম্প্রতি ১৯ বছর বয়সি নুর সাদেককে নৌকায় করে মালয়েশিয়ার যাওয়ার সময় উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, এছাড়া তার "অন্য কোনো বিকল্প ছিল না।"

"যদিও এটি একটি ভুল ছিল, আমি দুর্দশার ক্যাম্প জীবনের কোনো শেষ দেখিনিআর তাই খুব মরিয়া হয়ে পড়েছিলাম,” বলেন তিনি। "আমাদের ভাগ্যে কী আছে? এ অবস্থায় আমাদের কী করা উচিত?”

শরণার্থী ও অভিবাসন সংকট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, এই সংকটময় অস্থিরতার সমাধান কেবল মিয়ানমারই করতে পারে। কিন্তু সামরিক জান্তার প্রত্যাবাসনে 'প্রকৃত আগ্রহ' নেই। 

ততদিন পর্যন্ত শরণার্থী শিবিরগুলোকে একটি স্বনির্ভর অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেমে পরিণত করার পরামর্শ দেন তিনি।

তার মতে, শরণার্থীদের ‘লাভজনক অর্থনৈতিক সুযোগ' দিতে সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। 

ইউএনএইচসিআর বলছে, অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অপরাধী দলগুলোর অপহরণ, গুম, হুমকি বা শারীরিক হামলার বিষয়ে তারা নিয়মিত অভিযোগ পেয়ে থাকে।

সংঘাত রোধে ইউএনএইচসিআর ক্যাম্পগুলোতে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে বলেও জানান ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র রেজিনা ডি লা পোর্টিলা। 

স্যাম জাহান/একেএ