রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, অপরাধ বেড়েছে
২৯ জানুয়ারি ২০২৩রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ক্যাম্পে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাসহ এতজনের মৃত্যুর ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মনে আশঙ্কা জন্মেছে৷ একদিকে ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীদের প্রভাব বাড়ছে, অন্যদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সহিংসতা কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে৷ ‘‘বাংলাদেশ ছেড়ে অনেক রোহিঙ্গার ঝুঁকিপূর্ণ সাগরযাত্রায় যাওয়ার এটি অন্যতম কারণ,'' বলে রয়টার্সকে জানান তিনি৷
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ২০২০ সালে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ৩৪৮ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন৷ গতবছর ৩,৫৪৫ জন রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়েছেন বা দেয়ার চেষ্টা করেছেন৷ ২০২১ সালে সংখ্যাটি ছিল প্রায় ৭০০৷
২৩ বছর বয়সি মোহাম্মদ ইসমাইল রয়টার্সকে জানান, গতবছর এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে বন্দুকধারীদের হাতে তার চার আত্মীয় মারা যান৷ গত সেপ্টেম্বরে একদল মুখোশধারী তাকেও অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর তার বাম হাত ও পায়ের কিছু অংশ কেটে ফেলে তাকে খালে ফেলে দেয়া হয়৷ ইসমাইল জানান আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি, আরসার সদস্যরা তাকে ও তার আত্মীয়দের আরসায় যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল৷ কিন্তু এতে সাড়া না দেয়ায় হয়ত তাদের উপর হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তিনি৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রায় এক ডজন রোহিঙ্গা রয়টার্সকে জানান, আরসার সদস্যরা বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে মানব ও মাদক পাচারসহ নানান অপরাধের সঙ্গে যুক্ত৷
এ ব্যাপারে আরসার সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো উত্তর পায়নি রয়টার্স৷ তবে গত ডিসেম্বরে এক টুইটে আরসা দাবি করেছিল, তাদের কার্যক্রম শুধু মিয়ানমারে সীমাবদ্ধ৷
২০২২ সালে পুলিশ ২,৫৩১ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে৷ তাদের বিরুদ্ধে ১,২২০টি মামলা দায়ের করা হয়৷ এরমধ্যে ৯০ শতাংশ মামলার কারণ ছিল হত্যা, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার, মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, মানবপাচার ও পুলিশের উপর হামলা৷
২০২১ সালে ১,৬২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ মামলা হয়েছিল ৬৬৬টি৷
বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এজন্য পুলিশের একটি বিশেষ ব্যাটালিয়ন কাজ করছে বলেও জানান তিনি৷
তবে এ মাসেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৪০ জনের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এতে অভিযোগ করা হয়, ২০২০ সাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক আটক ও শরণার্থীদের হয়রানির সঙ্গে জড়িত৷
এ ব্যাপারে জানতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে ইমেল করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি৷
একটি এনজিওতে চাকরি করা বার্মা ভাষার শিক্ষক ২৫ বছর বয়সি খায়ের উল্লাহ বলেন, অপরাধ ছাড়াও শিক্ষা ও কাজ না থাকায় অনেক রোহিঙ্গা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ৷ কারণ তারা বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখাশোনা করতে পারছে না৷ ভবিষ্যতে সন্তান হলে তাদের কীভাবে লালনপালন করা যাবে, তা নিয়েও চিন্তিত তারা৷ সর্বোপরি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় হতাশ রোহিঙ্গারা৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স)