বাংলাদেশ এগোচ্ছে, তবে ধীর গতিতে
১৭ অক্টোবর ২০১৮বাংলাদেশের এই অবস্থান জানা গেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে৷ তাদের ‘গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৮' অনুযায়ী, এবার ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১০৩তম অবস্থানে৷ আগের বছর ১৩৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০২তম৷ সূচকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় একধাপ পিছিয়ে পড়লেও বাংলাদেশের স্কোর গত বছরের তুলনায় ভালো৷ ০ দশমিক ৭ ভাগ উন্নতি ঘটেছে৷ অর্থনীতিবিদরা একে ভালো বললেও, বলছেন ধীর গতির উন্নয়ন৷ ২০১৭ সালে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানে সাত ধাপ আর ২০১৬ সালে এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছিল৷
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম ২০০১ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে৷ এবার তাঁরা নতুন মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করেছে৷ আর সেই ১২টি মানদণ্ড হলো: প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, পণ্য বাজার, শ্রম বাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের আকার, বাজারের গতিশীলতাও নতুন ধারণার আত্মীকরণ৷ এই ১২টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ১০০ ভিত্তিক সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৫২ দশমিক ১৷ এটা গত বছরের স্কোরের চেয়ে ০ দশমিক ৭ বেশি৷ এখানে তথ্যপ্রযুক্তি নতুন মানদণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷
বিশ্বব্যাপী এই রিপোর্ট প্রকাশের অংশ হিসেবে বুধবার ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)৷
বিশ্বে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দিক দিয়ে সূচকের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের স্কোর ৮৫ দশমিক ৬৷ এরপর যথাক্রমে রয়েছে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ডস, হংকং, যুক্তরাজ্য সুইডেন ও ডেনমার্ক৷ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে ভারত৷ ৬২ স্কোর নিয়ে ভারত আছে সূচকের ৫৮ নম্বরে৷ গত বারের চেয়ে পাঁচ ধাপ উন্নতি হয়েছে দেশটির৷ শ্রীলঙ্কা ৫৬ স্কোর নিয়ে সূচকের ৮৫তম, ৫১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান সূচকের ১০৭ নম্বরে এবং নেপাল ৫০ দশমিক ৮ স্কোর নিয়ে ১০৯ নম্বর অবস্থানে রয়েছে৷
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করে সিপিডি৷ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ খন্দকার ড.গোলাম মোয়াজ্জেম জানান,‘‘সার্বিকভাবে এবার বাংলাদেশের পয়েন্ট কমেনি৷ ০ দশমিক ৭ পয়েন্ট বেড়েছে৷ এবার মানদণ্ড হিসেবে নতুন করে তথ্য-প্রযুক্তি খাত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷ এ খাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে থাকায় সার্বিকভাবে অবস্থানগত পরিবর্তন হয়েছে৷''
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, ধীরে ধীরে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ছে৷ হয়তো এক দুই বছরে কিছুটা বেশি কম হয়, কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে৷ তবে এই উন্নয়নের গতিটা শ্লথ৷ এই সূচকটা মাত্র কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে করা হয়৷ কিন্তু যে ব্যাপকভিত্তিক উন্নয়ন করলে আমরা আরো এগিয়ে যেতাম, সেই জায়গায় ঘাটতি আছে৷''
তিনি বলেন,‘‘অবকাঠামো খাতে যে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে তার কিছু কিছু সুফল বেসরকারি খাত পাচেছ৷ এর বাইরে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা এবং বড় আকারের বাজার আমাদের সুবিধা করে দিচ্ছে৷ আইসিটি খাতে বিশেষভাবে নজর দেয়ায় তার ইতিবাচক ফলাফল শিক্ষা খাতে, ব্যবসা বাণিজ্যে, সরকারি কর্মকাণ্ডে, ব্যবসায়িক লেনদেনে ধীরে ধীরে বাড়ছে৷ যদিও এটা এখনো অনেক নিচু পর্যায়ে আছে৷ তারপরও একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷''
তিনি মনে করেন, ‘‘আইসিটি খাতে যে ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা আরো বাড়বে৷''
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ণ অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তীতুমীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ তার শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে৷ পোশাক শিল্পের আধিপত্য বেড়ে যাচ্ছে৷ তার মানে হচ্ছে, এখনে শিল্পের বহুমূখীকরণ হচ্ছে না৷ উৎপাদন যদি বহুমূখী হয়, তাহলে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়ে৷ বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শিল্পখাতে বহুমূখীকরণ থমকে আছে৷ বহুমূখীকরণের জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন৷ প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং অভিযোজন এই দু'টি বিষয়েই বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে৷''
তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রকৃত উন্নয়নের চেয়ে প্রচার বেশি হয়েছে৷ প্রকৃত উন্নয়ন প্রয়োজন৷''