বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বেতন কত?
৯ আগস্ট ২০১৭টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য কোনো আলাদা মজুরি বোর্ড নেই৷ এমনকি সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের মধ্যেও তা অন্তর্ভুক্ত নয়৷ টেলিভিশন ও অনলাইনে বেতন নির্ধারণ হয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় এবং তা অনেক ক্ষেত্রেই সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের চেয়ে কম৷
কোন গ্রেডে কত বেতন?
২০১৩ সালে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড ঘোষণা করে সরকার৷ সেখানে সংবাদপত্রের বার্তা বিভাগে কর্মরত সম্পাদক থেকে শুরু করে শিক্ষানবিশ সাংবাদিকদের জন্য মোট ছয়টি গ্রেড করা হয়৷ সম্পাদক স্পেশাল গ্রেডে বেতন পান৷ গ্রেড-১ নির্বাহী সম্পাদক থেকে বিশেষ প্রতিনিধি পর্যন্ত৷ গ্রেড-২ যুগ্ম বার্তা সম্পাদক থেকে সিনিয়র রিপোর্টার৷ গ্রেড-৩ সহ-সম্পাদক থেকে স্টাফ রিপোর্টার৷ গ্রেড-৪ শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক থেকে শিক্ষানবিশ রিপোর্টার৷ গ্রেড-৫ শিক্ষানবিশ সম্পাদনা সহকারী৷
সাংবাদিকতায় প্রবেশের প্রথম ধাপ হল শিক্ষানবিশ রিপোর্টার৷ আর শিক্ষানবিশ রিপোর্টারের গ্রেড হল ৪৷ এই গ্রেডের মূল প্রারম্ভিক বেতন ১২,৬০০ টাকা৷ এর সঙ্গে ঢাকায় কর্মরত হলে বাড়িভাড়া মূল বেতনের শতকরা ৭০ ভাগ৷ চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা, সাধারণ যাতায়াত ভাতা ২,৫০০ টাকা, বিশেষ যাতায়াত ভাতা (শুধুমাত্র রিপোর্টারদের জন্য) ৩,০০০ টাকা৷ এভাবে মোট বেতন দাঁড়ায় ২৮,৪২০ টাকা৷
মজুরি বোর্ড অনুযায়ী সম্পাদকের মূল বেতন ৩৫,৮৭৫ টাকা, নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক ও বিশেষ প্রতিনিধির মূল বেতন ৩১,৮৫০ টাকা, সিনিয়র রিপোর্টারের মূল বেতন ২৪,১০৬ টাকা এবং স্টাফ রিপোর্টারের মূল বেতন ১৫,৯২৫ টাকা৷ তাতে দেখা যায় সম্পাদকেরও মোট বেতন ৮০ হাজার টাকার বেশি নয়৷ এর সঙ্গে আরো কিছু ভাতার কথা বলা হলেও তা বাস্তবে কার্যকর নয়৷
সংবাদপত্রের অন্যান্য বিভাগ যেমন প্রেস, সার্কুলেশন, বিজ্ঞাপন তাদের জন্যও মজুরি বোর্ডে আলাদা বেতন কাঠামো আছে৷ মজুরি বোর্ড অনুয়ায়ী সংবাদপত্রে কর্মরতদের প্রভিডেন্ড ফান্ড এবং গ্রাচুয়িটি পাওয়ার কথা৷
ওয়েজ বোর্ড মানে কারা
মজুরি বোর্ডের এই ঘোষিত বেতন সংবাদপত্র এবং সংবাদ সংস্থায় দেয়া বাধ্যতামূলক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ এটা না দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আছে কিনা তাও নিশ্চিত নয়৷ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব মো. ওমর ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলে, ‘‘ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন দেয়া বাধ্যতামূলক৷ তবে অনেক প্রতিষ্ঠানই এই ওয়েজ বোর্ড মানেনা৷ হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ওয়েজ বোর্ড মেনে বেতন দেয়৷ যারা দেয়না তারা জোর করে সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে লিখিত মুচলেকা নেয়, যে তাদের ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন দেয়া হয়৷ এই মুচলেকায় সই না করলে তাদের চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়৷’’
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো সংবাদপত্র বা সংবাদ সংস্থা যদি সরকার ঘোষিত ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন না দেয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই৷ কিন্তু তারা সরকারের দেয়া বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেনা৷’’
টেলিভিশনের পরিস্থিতি
বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভেশন এবং অনলাইনের জন্য সরকার ঘোষিত ওয়েজ বোর্ড নেই৷ তারা তাদের নিজস্ব বেতন কাঠামো বা খেয়াল খুশি মতো বেতন নির্ধারণ করেন৷ মাছরাঙা টেলিভিশনে কর্মরত সিনিয়র রিপোর্টার নূর সিদ্দিকী ডয়চে ভেলকে জানান, ‘‘আমি অনেক দিন ধরেই সিনিয়র রিপোর্টার৷ কিন্তু ওয়েজ বোর্ডে সিনিয়র রিপোর্টারের যে প্রারম্ভিক বেতন তা আমি এখনো পাই না৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘টেলিভিশন বা অনলাইনে প্রকাশ্য কোনো বেতন কাঠামো নেই৷ তারা মূলত দর কষাকষির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়৷ কোনো স্টেশনে ওয়েজ বোর্ডের চেয়ে বেতন কম, কোথাও হয়তো একটু বেশি৷ আবার কোথাও বেতন মাসের পর মাস দেয় না৷’’
তুলনামূলক চিত্র
সংবাদপত্র মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের বেতন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন প্রায় সমান, তাই সাংবাদিকদের বেতন বাড়ানোর দরকার নেই৷’’ তাঁর দেয়া এই বক্তব্য অনুসন্ধান করে দেখা যায়, বাংলাদেশে একজন শিক্ষানবিশ সাংবাদিকের প্রারম্ভিক মূল বেতন ১২,৬০০ টাকা৷ স্টাফ রিপোর্টারের মূল বেতন ১৫,৯২৫ টাকা৷ আর বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে সহকারী সচিব হিসেবে যোগ দিলে মূল বেতন ২২,০০০ টাকা৷ সরকারি চাকরিতে বেতনের মোট ২০টি গ্রেড আছে৷
বাংলাদেশে একজন সম্পাদকের মূল প্রারম্ভিক বেতন ৩৫,৭৭৫ টাকা৷ আর সরকারের একজন সচিবের বেতন ৭৮ হাজার টাকা৷ সিনিয়র সচিবের বেতন ৮২ হাজার টাকা৷
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন আগের হিসেবে৷ ২০১৩ সালে যখন সাংবাদিকদের জন্য অষ্টম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করা হয় তখন সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নতুন পে-স্কেল হয়নি৷ তখন একজন সাংবাদিকের প্রারম্ভিক বেতন সরকারি চাকরিতে প্রবেশকারী বিসিএস কর্মকর্তাদের তুলনায় বেশি ছিল৷ নতুন পে-স্কেলে সরকারি বেতন শতভাগ বেড়েছে৷ তাই এখন হয়ত সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বেশি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সাংবাদিকদের বেতন বাড়ানোর নবম ওয়েজ বোর্ডের কোনো সম্পর্ক নাই৷ তিনি অ্যাকাডেমিক কথা বলেছেন, ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন৷ আমরা নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের কাজ করছি৷ মালিক পক্ষ ছাড়া সব পক্ষ তাদের প্রতিনিধিদের নাম দিয়েছেন৷ মালিক পক্ষ নাম দিলেই আমরা নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করব৷ আমাদের ৮০ ভাগ কাজ শেষ৷’’
তথ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘এবার টেলিভিশন এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যমও ওয়েজ বোর্ডের আওতায় আনা হবে৷’’
এ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷