বিশ্বব্যাপী অনিশ্চিত কর্মপরিস্থিতি
১৬ জুন ২০১৪উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ১.৫ বিলিয়ন মানুষ কাজ করেও জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে৷ অনেককেই দিনমজুর হিসাবে ও ছুটা কাজ করে বাঁচতে হচ্ছে৷ এই সব তথ্য জানা গিয়েছে বিশ্ব শ্রম সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে৷
উন্নয়নের চাবিকাঠি – কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ
এতে বলা হয়েছে, কাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ও ন্যায়সঙ্গত শর্তাবলী থাকলে উন্নয়নও ত্বরান্বিত হয়৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইএলও-র এক কর্মীগ্রুপ ১৪৫টি উন্নয়নশীল ও বিকাশমান দেশে গিয়েছিলেন৷ তাঁদের অভিমত, যে সব দেশে ন্যায়সঙ্গত শ্রম আইন রয়েছে এবং সামাজিকসিস্টেমে কর্মীদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত, সেসব দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও নিম্ন মজুরির দেশগুলির তুলনায় একটা ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়৷
উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুণগত মানটাই মুখ্য, বলেন আইএলও-র মোয়াজ্জেম মাহমুদ৷ ‘‘শুধু রপ্তানির মাধ্যমে নয়, বরং কাজের গুণগত মানের কারণেই কয়েকটি দেশ দীর্ঘমেয়াদে উঁচু আয়ের দেশে পৌঁছাতে পেরেছে'', বলেন মাহমুদ৷ এর ফলে ভালো কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়, শিক্ষা ও উৎপাদন ব্যবস্থায় উন্নয়ন হয়৷ বৃদ্ধি পায় নিরাপত্তা, যা আবার একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে৷ ‘‘জাতীয় অর্থনীতি ন্যায্য বেতনের ভিত্তিতে গড়ে উঠলে অভ্যন্তরীণ বাজারেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব'', বলেন মাহমুদ৷
দারিদ্র্যমোচনে প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে সমন্বয়
আইএলও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ স্পষ্ট: শুধু রপ্তানি অর্থনীতি নয় বরং অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা, কর্মীদের ক্রয়ক্ষমতা ও রপ্তানি বাণিজ্যের সমন্বয়ই দারিদ্র্য বিমোচনের দ্বার খুলে দেবে৷
আইএলও বিশেষজ্ঞ মোয়াজ্জেম মাহমুদ বহু উন্নয়নশীল ও বিকাশমান দেশের প্রশংসনীয় অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন৷ সেসব দেশে কর্মবাজারে পরিবেশের উন্নয়ন হচ্ছে৷ অন্যদিকে ইউরোপের বহু শিল্পোন্নত দেশ ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ স্বল্পমেয়াদী, খণ্ডকালীন এবং নিম্নমজুরির কাজের প্রসার বাড়ছে৷
যুব বেকারত্বের হার উদ্বেগজনক
আইএলও-এর রিপোর্টে অনেক দেশে যুব বেকারত্বের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়৷ আগামী পাঁচ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে (২০০ মিলিয়ন) ২০ কোটিরও বেশি মানুষ কর্মবাজারে ভিড় করবে৷
এখনই দরিদ্র দেশগুলিতে বয়স্কদের তুলনায় যুব বেকারত্বের হার তিনগুণ বেশি৷ উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে প্রতি তিন জনে একজন তরুণ বেকার৷ এর প্রভাব সমাজের ওপরও পড়বে বলে সতর্ক করে দেয় আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা৷
শ্রম নীতিমালার প্রয়োগ
‘গ্লোবাল ইউনিয়ন ফেডারেশন ইন্ডাস্ট্রিয়াল'-এর মনিকা কেম্পেরলে বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার নীতিমালা মেনে চললে কয়েকটি সমস্যা একবারে সমাধান করা যায়৷ স্বল্প মজুরির দেশগুলিতে দৈনিক ১২, ১৪ এমনকি ১৬ ঘণ্টা কাজ করাও একান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার৷ কিন্তু আইএলও-র বিধি অনুযায়ী, সপ্তাহে খুব বেশি হলে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করা যাবে৷ মনিকা কেম্পেরলের মতে, ‘‘জীবন ধারণ করার মতো বেতন দিলে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে৷ তরুণরাও কাজ পাবে৷''
ক্যাম্পেরলে মনে করেন, অবশ্য শুধু শ্রমিক ইউনিয়ন একা কাজে ন্যায়সঙ্গত শর্তাবলী তৈরি করতে পারবে না৷ অনেক দেশে তো শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠারই অনুমোদন দেওয়া হয় না৷ ভালো হয় যদি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাতেও এই সব শ্রমনীতিমালা গ্রহণ করা হয়৷
আইএলও বিশেষজ্ঞ মোয়াজ্জেম মাহমুদ বলেন, ‘‘শুধু সুষ্ঠু কাজের পরিবেশের মাধ্যমেই প্রতিযোগিতায় দক্ষতা অর্জন করা যায়৷ শ্রমঅধিকারকে দুর্বল করে নয়৷''