বাংলাদেশে প্রশাসনের সব স্তরে নারীর অবস্থান বাড়ছে
৮ মার্চ ২০২৩শুধু মাঠ প্রশাসনের এই তিন পদেই নয়, এখন প্রশাসনের নানা স্তরে নারীর অবস্থান বাড়ছে, সুসংহত হচ্ছে৷ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষের সচতেনতাও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে৷ কর্মপরিবেশও ভালো হয়েছে, তবে এখনো বেশ ঘাটতি আছে৷ এ জন্য কর্মপরিবেশ আরও উন্নত করা দরকার বলে মনে করেন নারী কর্মকর্তারা৷ তাঁরা বলছেন, বিশেষ করে চাকরিজীবী মা-বাবার কথা বিবেচনা করেকর্মক্ষেত্রে উন্নত মানের ডে-কেয়ার থাকা উচিত৷ এ ছাড়া নারীর জন্য আরও উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পুরুষদের প্রথাগত মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনতা তৈরিসহ আরও কিছু কাজ করলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আরও সুসংহত হবে৷ প্রশাসনে নারীর অবস্থান বাড়লে তা নানা ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে৷
এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে৷
দেশে কোন পদে কত নারী
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি চাকরিজীবী আছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন৷ এর মধ্যে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ নারী৷ প্রথম শ্রেণিতে (এখন গ্রেড ভিত্তিতে চাকরি নির্ধারণ হলেও মুখে মুখে শ্রেণি বলা হয়) মোট চাকরিজীবী আছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন৷ এর মধ্যে নারী ৩৯ হাজার ৭৮৭ জন৷
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে মোট ৭৯ সচিব আছেন৷ এর মধ্যে নারী সচিব ১০ জন৷ অর্থ, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো নারীরা সামলাচ্ছেন৷ এখন অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন৷ তিনি দেশের প্রথম নারী অর্থসচিব৷ এ ছাড়া অন্য সচিবদের মধ্যে আছেন—অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সচিব ফারহিনা আহমেদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) নাসিমা বেগম, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সচিব হামিদা বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসচিব নাহিদ রশীদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন৷ এ ছাড়া রয়েছেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ৷
অবশ্য সচিব পদে নারীর সংখ্যাটি বেশ কয়েক বছর ধরেই দশের ঘরেই আটকে আছে৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩২৭ অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ৫৫ জন নারী, ৮৫৮ যুগ্ম সচিবের মধ্যে ১৬৪ নারী, ১ হাজার ৭০৪ উপসচিবের মধ্যে ৩৭০ নারী, ১ হাজার ৮৬৭ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনারের মধ্যে নারী ৬৮৯ জন৷ এ ছাড়া ১ হাজার ৪৪২ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ৪৩৩ জন৷
মাঠ প্রশাসনে নারীরা
বর্তমানে৬৪ জেলা প্রশাসকের মধ্যে ১০ জন নারী৷ এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার তিনটিতেই নারীরা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন৷ তাঁরা হলেন নেত্রকোনায় অঞ্জনা খান মজলিশ, শেরপুরে সালেহা আক্তার ও জামালপুরে শ্রাবস্তী রায়৷ এঁদের মধ্যে অঞ্জনা খান নেত্রকোনার আগে চাঁদপুরেও ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন৷
অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে অঞ্জনা খান ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমেই একজন নারীকে প্রমাণ করতে হয়, তিনি এ পদের যোগ্য কি না৷ তবে ধীরে ধীরে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে৷ মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে৷ ভবিষ্যতে হয়তো আরও পরিবর্তন হবে৷ তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারী হিসেবে তিনি বড় কোনো অসুবিধায় পড়েননি বলে উল্লেখ করেন৷
অন্য নারী ডিসিরা হলেন মাদারীপুরে রহিমা খাতুন, মুন্সিগঞ্জে কাজী নাহিদ রসুল, হবিগঞ্জে ইশরাত জাহান, রংপুরে চিত্রলেখা নাজনীন, ঝিনাইদহে মনিরা বেগম, ঝালকাঠিতে ফারাহ্ গুল নিঝুম ও বান্দরবানে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি৷
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে তিনিই প্রথম নারী ডিসি হিসেবে কাজ করছেন৷ সমতলের জেলাগুলো থেকে পার্বত্য এলাকার সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ ভিন্ন৷ তবে এখননারীরা চ্যালেঞ্জ নিতেপছন্দ করেন৷ দুই বছরের দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত তিনি বড় কোনো সমস্যায় পড়েননি৷
ইয়াছমিন বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নারী ডিসিদের কাছে মানুষ সহজেই আসতে পারেন৷ বিশেষ করে অনেক সমস্যা নারীকেন্দ্রিক হওয়ায় তাঁরা খুব সহজেই তাঁকে বলতে পারেন৷ ডিসিদের মধ্যে নারীর সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি শাখার তথ্যমতে, এখন সারা দেশে ৪৮০ ইউএনওর মধ্যে ১৬৪ জন নারী৷ দায়িত্বরত ইউএনওদের মধ্যে এই হার ৩৪ শতাংশ৷ উপজেলা প্রশাসনে ইউএনও পদই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, তাঁরাই উপজেলায় সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন৷ তাঁরা উপজেলার অন্য সরকারি দপ্তরগুলোর কাজে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন৷ এ ছাড়া সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত দপ্তর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আছেন ১৩৩ নারী৷
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকার নারীবান্ধব৷ নারীর কর্মপরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় আজ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে নারীরা নেতৃত্বে আছেন৷ এটি এক দিনে হয়নি৷ ধীরে ধীরে হয়েছে৷ তাঁরাও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন৷ আগামী পাঁচ বছরে প্রশাসনে নারীর অবস্থান আরও উচ্চমাত্রায় যাবে বলে তিনি আশা করেন৷
এনএস/কেএম (প্রথম আলো)