ইউটিউব বিতর্ক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২বাংলাদেশ থেকে ইউটিউবে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে, এমন গুজব শোনা যাচ্ছিল কয়েকদিন ধরেই৷ মঙ্গলবার এই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেল৷ বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এই বিষয়ে এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘মর্যাদাহানিকর ভিডিওটিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং সামাজিক অস্থিরতা প্রতিরোধে' ওয়েবসাইটটি ‘ব্লক' করে দেওয়া হয়েছে৷
গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘সোমবার মধ্যরাত থেকেই ওয়েবসাইটটি বন্ধ রয়েছে'৷ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইউটিউব এভাবে বন্ধ থাকবে বলে বার্তাসংস্থা এপিকে জানিয়েছেন বিটিআরসি মুখপাত্র মীর মোহাম্মেদ মোরশেদ৷
তীব্র প্রতিক্রিয়া
এই বিষয়ে অবশ্য মঙ্গলবার অবধি গুগলের কোন প্রতিক্রিয়া পায়নি বার্তাসংস্থাগুলো৷ তবে বাংলা ব্লগ এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন৷ রাজশাহী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলা থেকে আমাদের শ্রোতা পাঠকরা ফেসবুকের মাধ্যমে মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তারা ইউটিউবে প্রবেশ করতে পারছেন না৷ অবশ্য মুঠোফোন ব্যবহার করে ইউটিউবে প্রবেশ সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমাদের পাঠক মোমেনুল মুকুট এবং আমিন আহমেদ৷
জনপ্রিয় কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সাইট সামহয়্যার ইন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা ইউটিউবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের মহানবী মোহাম্মদকে নিয়ে অবমাননাকর যা কিছু করা হয়েছে, সেটা একটা অন্যায়৷ এই অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাই৷ কিন্তু সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে, সেই অন্যায় রুখে দিতে গিয়ে কোন প্রচার মাধ্যম বা ইন্টারনেটের উপর হস্তক্ষেপ করাটা ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না৷ এবং ব্লগাররাও কোনভাবে নেয়নি৷''
ইউটিউব নিজেও ইসলামবিরোধী চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে দেশভিত্তিক কিছু সীমাবদ্ধতা চালু করেছে৷ মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লিবিয়া এবং মালয়েশিয়ার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই ভিডিওটি ইউটিউবে দেখতে পাচ্ছে না৷
‘শুধু ভিডিওটি নিষিদ্ধ করা যেত'
তথ্য প্রযুক্তি পরামর্শক অমি আজাদ মনে করেন, বাংলাদেশে পুরো ইউটিউব বন্ধ রাখাটা ‘একটা বাজে বিষয়' হয়ে গেছে৷ তাঁর মতে, শুধুমাত্র ভিডিওটি ‘ব্লক' করা যেত৷ পুরো ইউটিউব বন্ধ করায় অনেক ইতিবাচক উদ্যোগও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এ রকম সিদ্ধান্তগুলো আসলে নেওয়া উচিত হয়নি৷ কারণ বাংলাদেশভিত্তিক অনেক শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট, ভিডিও তৈরি হচ্ছে৷ যেমন, রাগিব হাসান যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করছেন, শিক্ষক ডটকম নামে৷ এই ওয়েবসাইটের সব ভিডিও ইউটিউবে হোস্ট করা ছিল৷ এখন ইউটিউব ব্লক করে দিয়ে কী হলো বলেন? শুধু একটি সুনির্দিষ্ট ভিডিও ব্লক করতে পারতো আমাদের সরকার৷''
প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ইসলামবিরোধী ভিডিওটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১৯ ব্যক্তি নিহত হয়েছে৷ নিহতদের মধ্যে লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং তিন মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন৷ স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার বাংলাদেশেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে একদল প্রতিবাদকারী৷
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এই বিষয়ে ব্লগারদের সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা বলেন, ‘‘ব্লগে বা ব্লগের বাইরে ইন্টারনেটে আমি যতটুকু দেখতে পাই, একটি দল আছে যারা এটিকে একেবারের গ্রাহ্য করতে চায় না৷ তাদের মতে, এই ভিডিওটি না দেখলেই হয়৷ এই ভিডিওটিকে যত গুরুত্ব দেওয়া হবে, যত আলোচনা হবে, ততই যারা এটার পক্ষে কাজ করেছে, তারা একরকম প্রচার পাবে৷ সেটা হওয়া উচিত নয়৷ আবার আরেকটি দল বলছে, এটা খুবই অন্যায় এবং এটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত৷ কিন্তু এটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে গিয়ে সারা বিশ্বময় অশান্তি এবং যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা খুব মর্মান্তিক৷''
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ইউটিউব ব্লক করার পরও কেউ কেউ সাইটটিতে প্রবেশে সক্ষম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জানা৷ তবে সেটি স্বাভাবিক উপায়ে নয়৷ এছাড়া ফেসবুকেও কয়েকজন দাবি করেছেন, বিভিন্ন বিকল্প পদ্ধতিতে ইউটিউবে প্রবেশ সম্ভব হচ্ছে৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম (এপি, এএফপি)
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন